বিস্তারিত আলোচনা দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন
মৃত্যু আসলে কি?
সূরা আল ইমরান এর ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা’লা বলেছেন, প্রত্যেকটি প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। মৃত্যু একটি এমনই মহাসত্য, যা একজন নাস্তিকও অস্বীকার করতে পারে না। উক্ত আয়াতে আরো উল্লেখিত হয়েছে যে, প্রত্যেকটি মানুষ তাদের কর্মফল উপভোগ করার জন্য মৃত্যুবরণ করবে এবং তাদের মাঝে কেউ জাহান্নামে যাবে এবং কেউ জান্নাতে প্রবেশ করার সৌভাগ্য লাভ করবে।
প্রতিটি জীবন মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে পূর্ণমাত্রায় বিনিময় দেয়া হবে। যে ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করা হল এবং জান্নাতে দাখিল করা হল, অবশ্যই সে ব্যক্তি সফলকাম হল, কেননা পার্থিব জীবন ছলনার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা সূরা মূলকের দ্বিতীয় আয়াতে বলেছেন যে, আমাদের এই জীবন আসলে একটি পরীক্ষা ব্যতীত আর কিছুই না।
যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- ‘আমলের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি (একদিকে যেমন) মহা শক্তিধর, (আবার অন্যদিকে) অতি ক্ষমাশীল।
প্রকৃতপক্ষে, এই জীবন এক পরীক্ষা ক্ষেত্র ছাড়া আর কিছুই না এবং মানুষ যখন মারা যায় তখন তার পরীক্ষাও শেষ হয়ে যায়। সুতরাং, যেখানে মৃত্যুর মাধ্যমে একটি মানুষের পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়, সেখানে মৃত ব্যক্তির আত্মা এই পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ানোর যৌক্তিক আর কোন কারণ থাকে না। শেষ বিচারের দিনে সকলকেই পুনরুত্থিত করা হবে এবং সবার ফলাফল ঘোষণা করা হবে; এবং সেই বিচারের দিবসের মালিক হবেন স্বয়ং আল্লাহ- সুবহানু ওয়াতায়ালা। সেদিন আমাদের পরীক্ষার সময়কালীন (অর্থাৎ জীবনযাপনের) কৃতকর্মের উপর ভিত্তি করেই আমাদের পরিণতি নির্ধারণ করা হবে। সর্বপ্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে – আমরা সহ – পৃথিবীতে বসবাসকারী শেষ মানুষ পর্যন্ত – সবার ক্ষেত্রেই এই একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
একজন মানুষ মারা গেলে আসলে কি হয়?
ইসলামে কুসংস্কার নিষিদ্ধ শুধুমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস হলো গায়েবী বিষয়গুলোর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা
কেউ মারা যাওয়ার পরে তার আত্মার কি হয়? এই প্রশ্নের উত্তরটি মূলত আধ্যাত্মিক জগতের সাথে সম্পর্কিত। আধ্যাত্মিক বা গায়েবী বিষয়গুলো বলতে সেই সমস্ত বিষয়গুলোকে বুঝায়, যা মানুষের পাঁচ ইন্দ্রিয় (দেখা, শোনা, স্পর্শ, গন্ধ বা স্বাদ নেওয়া) দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না অথবা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণও করা যায় না। এই সমস্ত ব্যাপারগুলোতে, একমাত্র গ্রহণযোগ্য উৎস হলো সহীহ হাদিস এবং কুরআনের বাণী। আমাদের নিজেদের ভুল ধারণা ও কুসংস্কার এড়াতে এই দুইটি উৎসের বাহিরে অন্য যেকোনো উৎসের উপর নির্ভরশীল হওয়া আমাদের কখনই উচিত না এবং ইসলামিক দৃষ্টিতেও তা নিষিদ্ধ।
আমাদের মৃত্যু হলে আত্মার কি হয়?
এখন আমরা বুঝলাম যে, কেউ মারা গেলে তার আত্মা চিরতরে দেহ ত্যাগ করে। তখন আত্মা বারযাখ নামে পরিচিত একটি অবস্থায় প্রবেশ করে।
একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আত্মা আল্লাহ্র (সুবহানাহু তায়ালা) কাছে ফিরে যায় এবং জীবিত এই দুনিয়ার থেকে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন এক মাত্রায় সংরক্ষিত থাকে এবং অপেক্ষা করতে থাকে চূড়ান্ত বিচার দিবসের জন্য, এই অবস্থানটি বারযাখ নামে পরিচিত।
ঘুম এবং মৃত্যুর সময় আত্মা কি অবস্থায় থাকে?
ঘুমের সময়: আত্মা সাময়িকভাবে শরীরের সাথে কিছু সংযোগ বজায় রেখে প্রস্থান করে।
মৃত্যুর পর: আত্মা স্থায়ীভাবে দেহ ত্যাগ করে এবং বিচারের দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকে।
একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর, আত্মা এই জীবিত পৃথিবী ত্যাগ করে এবং আমাদের কাছে সম্পূর্ণরূপে অপরিচিত, ভিন্ন একটি মাত্রায় বা জগতে সংরক্ষিত থেকে চূড়ান্ত বিচার দিবসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, যা বারযাখ নামে পরিচিত।
সুতরাং, আমাদের জীবনের আসলে ৩টি পর্যায় রয়েছে:
- জীবন – বেঁচে থাকা যা আমাদের জন্ম থেকে শুরু হয় এবং আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত স্থায়ী হয়;
- আল-বারজাখ – যা মৃত্যু থেকে শুরু হয় এবং বিচারের দিনের শুরুতে শেষ হয়;
- পরকাল – আমাদের পুনরুত্থান থেকে শুরু হয় এবং বিচার দিবসের পরেও চলতে থাকে (জান্নাত, জাহান্নাম, ইত্যাদি এতে অন্তর্ভুক্ত)।
বারযাখ কি
বারযাখ হলো ইহকাল ও পরকালের মধ্যবর্তী একটি পর্যায় বা স্টেশন। এটি এই জীবন্ত পৃথিবীর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি জগৎ বা ক্ষেত্র যা ব্যাখ্যা করা অনেক কঠিন। এটি একটি বিশেষ ধরনের জীবন যা পার্থিব জীবনের মতো নয়। আমাদের পক্ষে এই বাস্তবতাটি উপলব্ধি করা অসম্ভব।
বারযাখ হল মৃত্যু ও কিয়ামতের মধ্যবর্তী একটি সময়, যেখানে মানুষ বছরের পর বছর শেষ বিচার দিবস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে। এটি এই জীবন এবং বিচারের দিনের এর মধ্যে একটি পর্যায়, যা পার্থিব জীবন এবং বিচার দিবস – এই দুইটি থেকেই সম্পূর্ণ আলাদা।
বারযাখ শুরু ও সমাপ্তি
তাই, একজন ব্যক্তির জন্য:-
বারযাখ শুরু হয়: যখন আত্মা শরীর স্থায়ীভাবে ত্যাগ করা শুরু করে; এবং
বারজাখ শেষ হয়: বিচার দিবসে, যখন সেই দিনটি শুরু করার জন্য শিঙায় ফুঁক দেওয়া হবে।
কুরআনে বারযাখ: জাগতিক উদাহরণ
আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) কুরআনে এই পৃথিবীর কিছু জিনিসের দৃষ্টান্ত দিয়ে বারযাখ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যা আমাদেরকে এই জগৎটি বুঝতে কিছুটা সাহায্য করতে পারে। বারজাখ শব্দটি কুরআনে নোনা পানি এবং মিষ্টি পানি-এর (সামুদ্রিক পানি ও নদীর পানি) মধ্যে অন্তরায়-কে বুঝিয়েছে, একইভাবে দুটি সমুদ্র/মহাসাগরের মধ্যে অন্তরায়-কে বুঝাতে এই একই শব্দ ব্যাবহৃত হয়েছে।
আর তিনিই [একসঙ্গে] দুটি সমুদ্রকে ছেড়ে দিয়েছেন, একটি তাজা ও মিষ্টি এবং একটি নোনতা ও তিক্ত, এবং তিনি তাদের মধ্যে একটি বাধা (বারযাখ) স্থাপন করেছেন এবং বিভাজন নিষিদ্ধ করেছেন। {সূরা আল-ফুরকান: আয়াত ৫৩}
সূরা আর-রহমান-এ, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেছেন বায়না হুমা বারযাখুল্লা ইয়াবগিয়ান, মানে দুটি মহাসাগরের মধ্যে অন্তরায়। এটি দুইটি সমুদ্রের মধ্যে একটি অন্তরায়, যেখানে তারা মিশে না। এই একই শব্দ কুরআনে ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেছেন যে, যারা মারা গেছে, তাদের পরে একটি অন্তরায় বা বারযাখ রয়েছে যা মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত চলতে থাকবে।
তিনি দুই সমুদ্রকে ছেড়ে দিলেন, [পাশাপাশি] মিলিত হলেন। তাদের মধ্যে একটি প্রতিবন্ধক (বারযাখ) [তাই] তাদের কেউই সীমালঙ্ঘন করে না। {সূরা আর-রহমান: আয়াত ১৯-২০}
কুরআনে বারজাখ: এই মেটা-ফিজিক্যাল ফর্ম-এর ডাইরেক্ট রেফারেন্স
এই বিশেষ পর্যায়টি এক ধরনের অন্তরায়, যা জীবনের সাথে কোনোভাবেই মিলে না, আমরা জানি না যে তাদের সাথে কি ঘটছে এবং তারা জানে না যে আমাদের সাথে কি ঘটছে। এটি জীবন এবং বিচার দিনের মধ্যবর্তী একটি অস্থায়ী স্টেশন।
সূরা আল-মু’মিনুন আমাদেরকে এই বারযাখ সম্পর্কে শিক্ষা দেয়, নিম্ন বর্তিত আয়াতগুলি একজন কাফের এর একটি ঘটনা চিত্রায়িত করেছে, যখন সে বারযাখ এর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। সেই সময়ে সে আল্লাহের কাছে মিনতি করছে যেন তাকে আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে একটু সময় দেওয়া হয় যেন সে কিছু ভালো কাজ করতে পারে, তখন তাকে প্রত্যাখিত করে বলা হবে যে তার বারযাখের সময় শুরু হতে যাচ্ছে।
যখন তাদের একজনের মৃত্যু আসে, তখন সে বলে, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে ফেরত পাঠান, যাতে আমি যা রেখে গিয়েছিলাম তাতে সৎকর্ম করতে পারি। না! এটা একটা কথাই সে বলছে; এবং তাদের পিছনে রয়েছে বারযাখ(বাধা) যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে। {সূরা আল-মুমিনুন: আয়াত ৯৯-১০০}
বারযাখে আত্মার যাত্রা
আত্মার যাত্রার বিখ্যাত হাদিস
আল-বারা’ ইবনে আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত বিখ্যাত হাদীসটি মৃত্যুর পর আত্মার প্রথম যাত্রাপথ নিয়ে আলোচনার মৌলিক হাদীস। পরবর্তী অংশে আমরা এই হাদীসটির সাথে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আরো দুইটি হাদীস নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো: প্রথম হাদীসটি ইবনে মাজাহ এবং দ্বিতীয়টি আল-নাসায়ী -তে উল্লেখিত হয়েছে। এই তিনটি হাদীসের সংমিশ্রণে আমরা জানতে পেরেছি যে কেউ মারা গেলে আসলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ঘটে:
বিশ্বাসী আত্মার জন্য
যদি সেই ব্যক্তিটি একজন মুমিন হয়ে থাকে, তাহলে:
- রূহ কবোজ করার আগে, ফেরেশতারা তাকে আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির সুসংবাদ দেয়। একই কথা সূরা ফুসসিলাত আয়াত ৩০ এও সচিত্রিত করা হয়েছে
নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল’।
- জগ থেকে পানি ঢালার মতো মসৃণভাবে রূহ বের হয়ে আসে
- তারপর ফেরেশতারা স্বর্গ থেকে আগত একটি সুগন্ধি কাপড়ে আত্মাটিকে মুড়ে নেয়
- তারপর ফেরেশতারা রুহটিকে নিয়ে রহমতের সাথে উপর দিকে উঠে যায়,
- যাত্রা পথে অন্যান্য ফেরেশতারা জিজ্ঞাসা করে – “এই বরকতময় আত্মাটি কে?” আত্মাটিকে সম্মানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়
- যখন ফেরেশতারা আত্মাটিকে নিয়ে পরবর্তী সর্বনিম্ন আসমানে পৌঁছায় – আরও এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হয় – অনুমতি দেওয়া হয়
- একই ঘটনা ঘটে যখন তারা পরবর্তী আসমান গুলো পার হয় – এভাবে রুহটি সপ্তম আসমান অতিক্রম করে
- অন্য আরেকটি হাদিসে উল্লেখ আছে, যে আত্মাটির অন্যান্য আত্মাদের সাথে দেখা হয় এবং তাদের মাঝে কিছু কথোপকথন হয়
- আত্মাটি উচ্চতম আসমানে পৌঁছে যায়
- তারপর আল্লাহ বলেন: “আমার বান্দার (আত্মার) নাম ই’ল্লিঈনে (নেককার লোকদের তালিকায়) লিপিবদ্ধ করো এবং আত্মাটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাও
- তারপর আত্মাটিকে শান্তির সাথে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়, যেখানে তার জাসাদ (তার দেহের অবশিষ্টাংশ) আছে
- আত্মাটি তার নিকটাত্মীয়দের পদধ্বনি শুনতে পায় – যখন তারা দাফনের পর কবর থেকে দূরে চলে যেতে থাকে
- তারপর সেই ব্যক্তিটিকে উঠিয়ে বসানো হয় (বারযাখের দুনিয়ায় – শারীরিকভাবে এই পৃথিবীতে নয়) – কবরের প্রশ্নগুলো করার জন্য
- মুনকার ও নাকির নামে দুইজন ফেরেশতা তাকে ৪টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে – সে সফলভাবে সেইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে
- কবরের ভিতরে চাপ দেওয়া হয় (এই বিষয়টি ভালো আত্মাদের জন্যেও প্রযোজ্য)
- কবরটিকে প্রশস্ত এবং আলোকিত করা হয়
- তার ভাল কাজগুলি একজন প্রশান্ত ব্যক্তির রূপে তার সাথে দেখা করে
- তাকে জাহান্নাম দেখানো হয় (যেখান থেকে তিনি রক্ষা পেয়েছে) – তারপর তাকে জান্নাত দেখানো হয় (যা তার চূড়ান্ত গন্তব্য হতে চলেছে)।
অবিশ্বাসী আত্মার জন্য:
কিন্তু যদি সেই ব্যক্তিটি অবিশ্বাসী আত্মা হয়, তাহলে:
- রুহ কবজ করার আগে, ফেরেশতারা জাহান্নাম ও আল্লাহর গজবের দুঃসংবাদ দেয়
- আত্মাটি বের হতে চায় না এবং জোর করে বের করা হয় – যেভাবে লোহার চিরুনির ভেতর থেকে ভেজা তুলা টেনে বের করলে অনুভব করা যায়
- তারপর ফেরেশতারা জাহান্নাম থেকে আগত একটি দুর্গন্ধযুক্ত কাপড়ে আত্মাটিকে মুড়ে নেয়
- তারপর ফেরেশতারা অভিশপ্ত এবং অপমানিত অবস্থায় আত্মাটিকে নিয়ে উপরে যায় – যেটি ভীত অবস্থায় থাকে
- যাত্রা পথে অন্যান্য ফেরেশতারা জিজ্ঞাসা করে – “এই নোংরা আত্মাটি কে?” আত্মাটিকে অসম্মানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়
- যখন আত্মাটিকে নিয়ে নিম্নতম আসমানে নিচে পৌঁছায় – আরও এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া হয় – অনুমতি প্রত্যাখ্যান করা হয়
- আত্মার নাম সিজ্জীঈ’নে (খারাপ লোকদের তালিকায়) লিপিবদ্ধ করা হয়
- তারপর আত্মাটিকে নীচে পৃথিবীতে ছুঁড়ে ফেলা হয়, যেখানে তার জাসাদ (তার দেহের অবশিষ্টাংশ) আছে
- তারপর সেই ব্যক্তিটিকে উঠিয়ে বসানো হয় (বারযাখের দুনিয়ায় – শারীরিকভাবে এই পৃথিবীতে নয়) – কবরের প্রশ্নগুলো করার জন্য
- মুনকার ও নাকির নামে দুইজন ফেরেশতা তাকে ৩টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে – সে দুর্ভাগ্যক্রমে সেইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়
- কবরের ভিতরে চাপ দেওয়া হয়
- কবরটিকে সংকুচিত এবং অন্ধকার করা হয়
- তার খারাপ কাজগুলি একজন ভয়ংকর ব্যক্তির রূপে তার সাথে দেখা করে
- তাকে জান্নাত দেখানো হয় (যেখানে তিনি যেতে পারতেন) – তারপর তাকে জাহান্নাম দেখানো হয় এবং তা জোর করে চোখে ধরে রাখা হয় (যা হবে তার চূড়ান্ত গন্তব্য)।
প্রথম হাদিস: আল-বারা’ ইবনে আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত ইমাম আহমাদের বিখ্যাত হাদিস
আহমাদ (সহিহ হাদিসে কুদসি: হাদিস ৬৬) ও আবু দাউদ (৪৭৫৩) তে উল্লেখিত আল-বারা’ ইবনে আযিব (রাঃ) বলেছেন:
দ্বিতীয় হাদীস: ইবনে মাজাহ (৪২৬২) তে উল্লেখিত – আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মৃত্যুর সময় মানুষের নিকট ফেরেশতা আগমন করেন। অতএব মুমূর্ষু ব্যক্তি উত্তম লোক হলে তারা বলেন, হে পবিত্র আত্মা! পবিত্র দেহ থেকে প্রশংসিত অবস্থায় বের হয়ে এসো এবং আল্লাহর রহমত ও সুঘ্রাণের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। রূহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহবান জানাতে থাকে। অতঃপর রূহ বের হয়ে আসলে তারা তা নিয়ে আসমানে আরোহণ করেন। এ রূহের জন্যে আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হয়, সে কে? ফেরেশতাগণ বলেন, অমুক ব্যক্তি। তখন বলা হয়, পবিত্র আত্মাকে স্বাগতম, যা ছিল পবিত্র দেহে। প্রশংসিত অবস্থায় তুমি প্রবেশ করো। আল্লাহর রহমাত ও সুঘ্রানের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। তাকে অবিরতভাবে এ সংবাদ প্রদান করা হয় যাবত না তা মহামহিম আল্লাহ যে আসমানে অবস্থান করেন সেখানে পৌঁছে যায়। মুমূর্ষু ব্যক্তি পাপাচারী হলে ফেরেশতা বলেন, হে নিকৃষ্ট দেহের নিকৃষ্ট আত্মা! নিন্দিত অবস্থায় বের হয়ে আয় এবং উত্তপ্ত গরম পানি ও রক্ত-পুঁজের দুঃসংবাদ গ্রহণ কর এবং অনুরূপ বহু বিষাক্ত বস্তুর। রূহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহবান জানাতে থাকেন। অতঃপর তারা রূহসহ উর্দ্ধাকাশে আরোহণ করেন। কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হয় না। জিজ্ঞেস করা হয়, এ ব্যক্তি কে? বলা হয়, অমুক। তখন বলা হয়, নিকৃষ্ট দেহের নিকৃষ্ট আত্মার জন্য নাই কোন সাদর সম্ভাষণ। তুই নিন্দিত অবস্থায় ফিরে যা। কারণ তোর জন্য আকাশের দ্বারসমূহ খোলা হবে না। অতঃপর একে আসমান থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং তা কবরে ফিরে আসে। [তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।]
অন্যান্য ভালো লোকদের সাথে সাক্ষাত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মু’মিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুর সম্মুখীন হয় তখন তার কাছে একদল রহমতের ফেরেশতা সাদা রেশমী কাপড় নিয়ে এসে (তার) আত্মাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, “তুমি আল্লাহর তা’আলার রহমত এবং সন্তুষ্টির পানে বের হয়ে আস আল্লাহ তা’আলা তোমার উপর রুষ্ট নন; তুমি তাঁর উপর সন্তুষ্ট, তিনিও তোমার উপর সন্তুষ্ট। তখন আত্মা মেশকের সুঘ্রাণ অপেক্ষাও অধিক সুঘ্রান ছড়াতে ছড়াতে বের হয়ে আসে। যখন ফেরেশতাগণ সম্মানের খাতিরে আত্মাকে পর্যায়ক্রমে একজনের হাত থেকে অন্যজনের হাতে দিয়ে আসমানের দরজায় নিয়ে আসেন তখন তথাকার ফেরেশতাগণ বলতে থাকেন, “এ সুগন্ধি কত না উত্তম! যা তোমরা পৃথিবী থেকে নিয়ে আসলে। আর তাঁরা তাকে মু’মিনদের রুহসমূহের কাছে নিয়ে যান। তোমাদের কেউ প্রবাস থেকে আসলে তোমরা যেরূপ আনন্দিত হও, মু’মিনদের রূহও ঐ নবাগত রূহকে পেয়ে ততোধিক আনন্দিত হয়। মু’মিনদের রূহ নবাগত রূহকে জিজ্ঞাসা করে যে, অমুক ব্যক্তি দুনিয়াতে কি কাজ করেছে? অমুক ব্যক্তি দুনিয়াতে কি কাজ করেছে? তখন ফেরেশতারা বলেন, তার সম্পর্কে তোমরা কি জিজ্ঞাসা করবে? সে দুনিয়ার চিন্তা-ভাবনায় ছিল। যখন নবাগত রূহ বলেঃ সে কি তোমাদের কাছে আসেনি? তখন আসমানের ফেরেশতারা বলেনঃ তাকে তার বাসস্থান হাবিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আর কাফির যখন তার মৃত্যুর সম্মুখীন হয় তখন তার কাছে আযাবের ফেরেশতারা চটের ছালা নিয়ে আগমন করে এবং আত্মাকে উদ্দেশ্য করে বলে থাকে, “তুমি আল্লাহ তা’আলার আযাবের পানে বের হয়ে আস, তুমিও আল্লাহ তা’আলার উপর অসন্তুষ্ট, আল্লাহ তা’আলাও তোমার উপর অসন্তুষ্ট।” তখন সে মুর্দারের দুর্গন্ধ থেকেও অধিকতর দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে বের হয়ে আসে। যখন ফেরেশতারা তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানের দরজায় পৌছে তখন তথাকার ফেরেশতারা বলতে থাকেঃ এ কি দুর্গন্ধ! এরপর ফেরেশতারা তাকে কাফিরদের আত্মাসমূহের কাছে নিয়ে যায়। {সুনান আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৮৩৩}
আত্মা হয় কবরে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে নাহলে নিরুৎসাহিত ও দুশ্চিন্তিত হয়
সহীহ আল বুখারিতে এবং সুনানে নাসায়ীতে বর্ণিত হয়েছে, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন মৃত ব্যক্তিকে খাটিয়ায় রাখা হয় আর লোকজন তাকে কাঁধে বহন করে, যদি সে নেককার হয়, তবে সে বলতে থাকে, “আমাকে শীঘ্র পাঠাও, আমাকে শীঘ্র পাঠাও” আর যদি বদকার হয় তবে বলতে থাকে, “হায়! তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?” তার আওয়াজ মানুষ ব্যতীত অন্য সবাই শুনতে পায়। যদি মানুষ তা শুনতে পেত তবে অবশ্যই বেহুঁশ হয়ে পড়ত। {সুনান আন-নাসায়ী ১৯০৯}
কবরের প্রশ্ন
সহীহ আল-বুখারীতে হাদিস নং ১৩৭৪ এ আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) এবং সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং ৪৭৫৩ এ আল-বারা ইবনে আজিব (রাঃ) বর্ণনা করেছেন: মৃত ব্যক্তিকে যখন তার কবরে রেখে তার সাথীরা / নিকট আত্মীয়রা দূরে চলে যেতে থাকে, মৃত ব্যক্তিটি তখন তাদের জুতা বা সেন্ডেলের খস খস আওয়াজ শুনতে পায়।
তারপর ২ জন ফেরেশতা তার কাছে আসেন, তাকে বসিয়ে দেন (আধিভৌতিক বারযাখের জগতে)।
জামে’ আত-তিরমিজি-এর ১০৭১ হাদিসে আবূ হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত লোককে বা তোমাদের কাউকে যখন কবরের মধ্যে রাখা হয় তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখ বিশিষ্ট দু’জন ফেরেশতা আসেন তার নিকট। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্য জনকে নাকীর বলা হয়। তারা মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবে:
একজন মুমিনের ক্ষেত্রে:
প্রথম প্রশ্নঃ তোমার রব কে?
উত্তরঃ তখন সে বলে, আমার রব আল্লাহ।
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ তোমার দ্বীন কি?
উত্তরঃ সে বলে, আমার দ্বীন হলো ইসলাম।
তৃতীয় প্রশ্নঃ এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে?
উত্তরঃ সে বলে, তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
চতুর্থ প্রশ্নঃ তুমি কি করে জানতে পারলে?
উত্তরঃ সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি।
অতঃপর আকাশ হতে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, আমার বান্দা যথাযথ বলেছে। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থান স্থলটির দিকে নযর কর, আল্লাহ্ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করেছেন। তখন সে দুটি স্থলের দিকেই দৃষ্টি রেখে দেখবে। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে ব্যক্তির জন্য তাঁর কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তার জন্য ঐখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সে লোককে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক। তখন সে বলবে, আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাদের নিকট ফিরে যেতে চাই। তারা উভয়ে বলবেন, বাসর ঘরের বরের মত তুমি এখানে এমন গভীর ঘুম দাও, যাকে তার পরিবারের সবচাইতে প্রিয়জন ব্যতীত আর কোন ব্যক্তি জাগিয়ে তুলতে পারে না। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামাতের দিন তাকে তার বিছানা হতে জাগিয়ে তুলবেন।
একজন কাফের এর ক্ষেত্রে:
প্রথম প্রশ্নঃ তোমার রব কে?
উত্তরঃ হায়! আমি কিছুই জানি না।
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ তোমার দ্বীন কি?
উত্তরঃ হায়! আমি কিছুই জানি না।
তৃতীয় প্রশ্নঃ এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে?
উত্তরঃ হায়! আমি কিছুই জানি না।
তখন আকাশের দিক হতে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন, সে মিথ্যা বলেছে। তখন তাকে বলা হবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। তারপর যমীনকে বলা হবে, একে চাপ দাও। সে ব্যক্তিকে এমন শক্ত করে যমীন চাপ দেবে যে, তার পাঁজরের হাড়গুলো পরস্পরের মাঝে ঢুকে পরবে। আর তাকে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে, যার ফলে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, দু’ জাতি (মানুষ ও জ্বিন) ছাড়া তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে। (কিয়ামাতের দিন) আল্লাহ তাকে তার এ বিছানা হতে উঠানো পর্যন্ত সে লোক আযাব পেতে থাকবে।
হাতুড়ি দিয়ে আঘাত (কাফের এর জন্য)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাকে পিছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায় (এতটুকু দূরে যে,) তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়, এমন সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন। অতঃপর তাঁরা প্রশ্ন করেন, এই যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তাঁর সম্পর্কে তুমি কী বলতে? তখন সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রসূল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ্ তা’আলা তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারিত করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তখন সে দু’টি স্থান একই সময় দেখতে পাবে। আর যারা ক্বাফির বা মুনাফিক, তারা বলবে, আমি জানি না। অন্য লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, না তুমি নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। অতঃপর তার দু’ কানের মাঝখানে লোহার মুগুর দিয়ে এমন জোরে মারা হবে, যাতে সে চিৎকার করে উঠবে, তার আশপাশের সবাই তা শুনতে পাবে মানুষ ও জ্বীন ছাড়া। {সহিহ আল-বুখারী, হাদীস নং ১৩৩৮}
কবরের চাপ
কবরের মধ্যে প্রত্যেকটি মানুষকেই এক ধরনের চাপ আস্বাদন করতে হবে – মুমিনদের ক্ষেত্রেও এই নিয়মটি প্রযোজ্য। আমরা এই কথা জানতে পেরেছি সা’দ ইব্নু মু’আয (রাঃ) এর হাদিস থেকে। যার মৃত্যুতে কিনা আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠেছিল, তার ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে।
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে তিনি বলতে শুনেছেন যে সা’দ ইব্নু মু’আয (রাঃ) – এর মৃত্যুতে আল্লাহ্ তা’আলার আরশ কেঁপে উঠেছিল। … {সহীহ আল-বুখারি, হাদিস নং ৩৮০৩}
ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সেই ব্যক্তি যাঁর জন্য আরশ কেঁপে উঠেছিল এবং যাঁর জন্য আকাশের দ্বারসমূহ খুলে গিয়েছিল এবং যাঁর জানাযায় সত্তর হাজার ফিরিশতা উপস্থিত হয়েছিল তাঁর কবরও মিলিয়ে গিয়েছিল। অত:পর তা প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিল। {সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২০৫৫}
কবরের শাস্তি বা আযাব গুনাহগারদের জন্য প্রযোজ্য হবে – যার সাথে কবরের প্রশ্ন, কবরের চাপ ইত্যাদির তুলনা হয়না। কবরের প্রশ্ন ও চাপ এগুলো আসলে শাস্তি নয়, এগুলো প্রত্যেকের জন্যই প্রযোজ্য, ঈমানদার ব্যক্তিরাও এগুলো কিছুটা অনুভব করবে। কবরের শাস্তি এইগুলোর তুলনায় অনেক বেশী ভয়ঙ্কর, খারাপ ও যন্ত্রণাদায়ক।
মানুষের ভালো ও খারাপ আমল একজন সঙ্গী হয়ে দেখা দিবে
আল-বারা’ ইবনে আযিব (রাঃ)-এর হাদিস অনুসারে, কবরের জিজ্ঞাসাবাদের পর, নিম্নবর্ণিত ঘটনা ঘটে:
একজন মুমিনের ক্ষেত্রে:
তার নিকট সুদর্শন চেহারা, সুন্দর পোশাক ও সুঘ্রাণসহ এক ব্যক্তি আসবে, অতঃপর বলবেঃ সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে তার, এটা তোমার সেদিন যার ওয়াদা করা হত। সে তাকে বলবেঃ তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে শুধু কল্যাণই নিয়ে আসে? সে বলবেঃ আমি তোমার নেক আমল।
কাফেরদের ক্ষেত্রে:
তার নিকট বীভৎস চেহারা, খারাপ পোশাক ও দুর্গন্ধসহ এক ব্যক্তি আসবে, সে তাকে বলবেঃ তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর, যা তোমাকে দুঃখ দিবে, এ হচ্ছে তোমার সে দিন যার ওয়াদা করা হত। সে বলবেঃ তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে কেবল অনিষ্টই নিয়ে আসে? সে বলবেঃ আমি তোমার খবিস আমল। সে বলবেঃ হে রব কিয়ামত কায়েম কর না”।
জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়
আল-বারা’বি’আযিব-এর হাদিস অনুসারে, উপরে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর ঠিক পরেই যা ঘটে:
একজন মুমিনের ক্ষেত্রে:
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ … তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ্ তা’আলা তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারিত করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তখন সে দু’টি স্থান একই সময় দেখতে পাবে। {সহিহ আল-বুখারী, হাদীস নং ১৩৩৮}
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ … মু’মিন বান্দা তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রসূল। তখন তাকে বলা হয়, জাহান্নামে তুমি তোমার আসন দেখে নাও। আল্লাহ তা‘আলা তোমার এ আসনকে জান্নাতের আসনের দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তখন সে তার উভয় আসন অবলোকন করে নেয়।
বর্ণনাকারী কাতাদাহ্ (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতঃপর তার কবরকে (দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে) সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সবুজ শ্যামল গাছের দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেয়া হয় কিয়ামাত পর্যন্ত। {সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭১০৫}
একজন অবিশ্বাসীর ক্ষেত্রে:
কাফিরের জন্য, তার জন্য জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং তার কবর সংকুচিত করা হবে, যতক্ষণ না তার বুকের পাঁজর মিশে যাবে। তার জন্য জান্নাতের একটি দরজা খুলে তাকে জান্নাতে তার স্থান দেখানো হবে এবং তাকে বলা হবে, যদি তুমি হেদায়েত প্রাপ্ত হতে তবে এটি তোমার স্থান হত। তার জন্য জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দেওয়া হবে যেন সে তার উত্তাপ ও আযাব অনুভব করতে পারে। এটাই তার স্থান হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত আল্লাহ তাকে পুনরুত্থিত করবেন।
সূরা গাফির এর ৪৬ নং আয়াতে পাওয়া যায়, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিছু মৃত ব্যক্তিদেরকে বারযাখের দুনিয়ায় জাহান্নাম দেখানো হবে।
(ক্ববরে) তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় জাহান্নামের সামনে উপস্থিত করা হয় আর যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন (বলা হবে) ফেরাউনের জাতি গোষ্ঠীকে কঠিন ‘আযাবে প্রবিষ্ট কর। {সূরা গাফির: আয়াত ৪৬}
ভাল আত্মারা বিচার দিবস পর্যন্ত ঘুমাবে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে মুনকার আর নাকিরের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়ার পর নিম্নবর্ণিত ঘটনা ঘটে:
…তারপর সে ব্যক্তির কবর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সত্তর গজ করে প্রশস্ত করা হবে এবং তার জন্য এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সে লোককে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক। তখন সে বলবে, আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাদের নিকট ফিরে যেতে চাই। তারা উভয়ে বলবেন, বাসর ঘরের বরের মত তুমি এখানে এমন গভীর ঘুম দাও, যাকে তার পরিবারের সবচাইতে প্রিয়জন ব্যতীত আর কোন ব্যক্তি জাগিয়ে তুলতে পারে না। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামাতের দিন তাকে তার বিছানা হতে জাগিয়ে তুলবেন।… {জামে’ আত-তিরমিজি-এর ১০৭১ হাদিস}
সুতরাং, হাদিসটি উল্লেখ করেছে যে একটি ভাল আত্মার জন্য কবর প্রসারিত হয় (উদাহরণস্বরূপ কবরকে ৭০ x ৭০ হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয়) এবং সুগন্ধি ও ঐশ্বরিক আলোয় আলোকিত করা হয়।
তারপর তাকে শান্তিতে ঘুমাতে বলা হয়। তখন সে জিজ্ঞেস করে, আমি কি আমার পরিবারে কাছে ফিরে যেতে পারি? অন্তত তাদেরকে জানানোর জন্য যে আমি ভালো আছি ও নিরাপদে আছি।
আত্মাটিকে বিয়ের পর নতুন জামাই যেভাবে ঘুমায়, ঠিক সেভাবে ঘুমানোর কথা বলা হয়। বিয়ের রাতটি কেমন হওয়া উচিত তা বোধ হয় আপনারা বুঝতেই পারছেন। তারপর নতুন জামাই যেরকম শান্তিতে ও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যায় একথা মনে করে যে তার প্রিয়তমা তাকে আবার সকালে জাগিয়ে তুলবে। এখানে উল্লেখযোগ্য লক্ষণীয় বিষয় হল যে, এই উদাহরণটি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে সেই ঘুমটি কতটা শান্ত ও চিন্তামুক্ত হয়, যদিও এই ব্যাপারটি পুরুষ ও মহিলা উভয় লিঙ্গের জন্যই প্রযোজ্য।
এইভাবে আত্মাটি অনেক শান্তিতে বিচার দিন পর্যন্ত ঘুমাতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত তাকে বিচার দিবসে পুনরুত্থিত করা হবে।
সূরা ইয়াসিন-এর ৫২ নম্বর আয়াতে একটি মুমিনের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যখন তাকে বিচার দিবসে পুনরুত্থিত হবে এবং সে বলবে:يَـٰوَيْلَنَا مَنۢ بَعَثَنَا مِن مَّرْقَدِنَا ۜ ۗ
তারা বলবেঃ হায়! দুর্ভোগ আমাদের! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল হতে উঠালো? দয়াময় (আল্লাহ) তো এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন। {সূরা ইয়াসিন আয়াত ৫২}
কবর হল অন্ধকার এবং সংকীর্ণ একটি জায়গা
সাধারণ ভাবেই খারাপ মানুষদের জন্য কবর হল অন্ধকার এবং সংকীর্ণ একটি জায়গা। কিন্তু নীচের ঘটনাটি দেখলে আমরা বুঝতে পারবো যে কবরকে আলোকিত করা হতে পারে।
মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবন দশায় একজন বৃদ্ধ মহিলার ঘটনা আছে যিনি সম্ভবত একজন কালো মহিলা ছিলেন যিনি উম্ম মাহজান নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি মসজিদ পরিষ্কার করতেন। একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার অনুপস্থিতি অনুভব করলেন এবং তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবায়ে কেরাম জবাব দিলেন যে তিনি আসলে ইন্তেকাল করেছেন। সুতরাং, তিনি (সাঃ) বললেন, “আমাকে এই ব্যাপারে আগে জানানো হয়নি কেন?”। আবু হুরায়রা রাঃ হয়তো সেই মহিলার মৃত্যুকে একটি তুচ্ছ ব্যাপার মনে করেছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, আমাকে দেখাও তার কবর কোথায়! যেখানে তিনি (সাঃ) দুআ করেছেন। অতঃপর তিনি (সাঃ) আমাদের সাহাবাদেরকে জানালেন যে, “সত্যিই, এই কবরগুলি এর বাসিন্দাদের জন্য অন্ধকার আচ্ছন্ন ছিল এবং আল্লাহ তাদের জন্য এটিকে আলোকিত করেছেন কারণ আমি তাদের জন্য দুআ করেছি।”
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
কালো এক পুরুষ বা এক মহিলা মসজিদে ঝাড়ু দিত। সে মারা গেল। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেননি। একদা তার কথা উল্লেখ করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ লোকটির কি হল? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো মারা গেছে। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? সে ছিল এমন এমন বলে তাঁরা তার ঘটনা উল্লেখ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁরা তার মর্যাদাকে খাটো করে দেখলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি তার কবরের কাছে আসলেন এবং তার জানাযার সালাত আদায় করলেন। {সহিহ আল-বুখারী, হাদিস নং ১৩৩৭}
কবরের আযাব
দুইজন ইহুদি বুড়ো মহিলা একবার আয়শা (রাঃ) এর কাছে এসে কবরের আজাব সম্পর্কে কথা বলেছিলো। এই বিষয়ে একবার আয়শা (রাঃ) নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, উত্তরে তিনি (সাঃ) নিশ্চিত করে বলেছিলেন যে কবরের আযাব আসলে সত্য। আয়েশা (রাঃ) সেদিনের পর থেকে লক্ষ্য করেছিলেন যে, মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর প্রতিটি সালাতের পর সর্বদা কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমার কাছে মাদীনাহ্র দু’জন ইয়াহূদী বৃদ্ধা মহিলা আসলেন। তাঁরা আমাকে বললেন যে, ক্ববরবাসীদের তাদের ক্ববরে ‘আযাব দেয়া হয়ে থাকে। তখন আমি তাদের এ কথা মিথ্যা বলে জানালাম। আমার বিবেক তাদের কথাটিকে সত্য বলে সায় দিল না। তাঁরা দু’জন বেরিয়ে গেলেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার নিকটে এলেন। আমি তাঁকে বললাম : হে আল্লাহ্র রসূল! আমার নিকট দু’জন বৃদ্ধা এসেছিলেন। অতঃপর আমি তাঁকে তাদের কথা জানালাম। তখন তিনি বললেনঃ তারা দু’জন ঠিকই বলেছে। নিশ্চয়য়ই ক্ববরবাসীদেরকে এমন আযাব দেয়া হয়, যা সকল চতুষ্পদ জীবজন্তু শুনে থাকে। এরপর থেকে আমি তাঁকে সব সময় প্রতি সালাতে ক্ববরের ‘আযাব হতে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করতে দেখেছি। {সহিহ আল-বুখারি হাদিস ৬৩৬৬}; {সুনানে নাসাঈ; হাদিস ১৩০৮}
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে সূরা মুলক মৃত্যুর পরে শাস্তি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করবে:
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সূরাটি হল তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুল্ক। {জামে আত-তিরমিযী: হাদিস নং ২৮৯১}
খালিদ ইবনু মা‘দান (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তোমরা মুক্তিদানকারী সূরা ‘আলিফ লাম মিম তানযীল’ (সূরা আস্ সাজদাহ্) পড়ো। কেননা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ কথা আমার নিকট পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি এ সূরা পড়ত, এছাড়া আর কোন সূরা পড়ত না। সে ছিল বড় পাপী মানুষ। এ সূরা তার ওপর ডানা মেলে বলতে থাকত, হে রব! তাকে মাফ করে দাও। কারণ সে আমাকে বেশি বেশি তিলাওয়াত করত। তাই আল্লাহ তা‘আলা তার ব্যাপারে এ সূরার সুপারিশ গ্রহণ করেন ও বলে দেন যে, তার প্রত্যেক গুনাহের বদলে একটি করে নেকী লিখে নাও। তার মর্যাদা বৃদ্ধি করো।
তিনি (রাবী) আরো বলেন, এ সূরা কবরে এর পাঠকের জন্য আল্লাহর নিকট নিবেদন করবে, হে আল্লাহ! আমি যদি তোমার কিতাবের অংশ হয়ে থাকি, তুমি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। আর যদি আমি তোমার কিতাবের অংশ না হয়ে থাকি, আমাকে তোমার কিতাব হতে মুছে ফেলো। (অন্য বর্ণনায় আছে) তিনি বলেন, এ সূরা পাখীর রূপ ধারণ করে এর পাঠকারীর ওপর পাখা মেলে ধরবে ও তার জন্য সুপারিশ করবে। এর ফলে কবর ‘আযাব হতে হিফাযাত করা হবে। বর্ণনাকারী সূরা তাবা-রকাল্লাযী’ (মুল্ক) সম্পর্কেও এ একই বর্ণনা করেছেন। খালিদ এ সূরা দু’টি না পড়ে ঘুমাতেন না। {মিশকাতুল মাসাবিহ: হাদিস নং ২১৭৬}
কি কি কারণে কবরের আযাব হতে পারে?
আমরা কয়েকটি সুস্পষ্ট হাদিস থেকে জানতে পারি যে নিম্নে উল্লেখিত কারণের জন্য কবরের আযাব হতে পারে:
- কুফর বা অবিশ্বাস
- নিফাক বা দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে অন্তরের কুফুরকে গোপন করে ইসলাম পালন করা
- প্রস্রাব থেকে নিজেকে পবিত্র না করা
- নামীমা বা একের কথা ওপরের কাছে লাগিয়ে বেড়ানো
- গীবাহ বা গীবত করা
- খিবর বা অহংকার করা
- যুদ্ধের ময়দানে চুরি করা
- ঋণগ্রস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ
- রিবা বা সুদ খাওয়া
- মিথ্যা কথা বলা
- জিনা করা
- সময়মত নামায না পড়া
সুতরাং, এসব দেখে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি যে, যেকোন প্রকার কবিরা বা বড়-গুনাহ কবরের আজাবের কারণ হতে পারে।
মৃত ব্যক্তি বিশেষ কিছু শব্দ ব্যতীত কিছুই শুনতে পায় না
এটাও একটি অদৃশ্যের বিষয় তাই এই ব্যাপারটির প্রত্যেকটি বিষয়বস্তু আমাদেরকে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে বের করতে হবে। আগে থেকে বলে নেওয়া উচিত যে, ইসলামিক স্কলারদের মতে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। তবে কুরআন ও হাদীসের নজির অনুসারে সবচাইতে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হলো, আল্লাহ তাদের কিছু জিনিস শোনার অনুমতি দিয়েছেন এবং বাকি ব্যাপারগুলো শোনার অনুমতি তাদেরকে দেওয়া হয় না।
বেশীরভাগ স্কলারদের মতে, মৃত ব্যক্তিরা জীবিত ব্যক্তিদের কথা শুনতে পারে না কারণ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আমাদের কুরআনে এ সম্পর্কে অবহিত করেছেন:
এবং জীবিত ও মৃত সমান নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শোনান, কিন্তু আপনি কবরের লোকদের শোনাতে পারবেন না। {সূরা ফাতির: আয়াত: ২২}
“নিশ্চয় তুমি মৃতদেরকে শোনাতে পারবে না এবং বধিরদেরকেও ডাক শোনাতে পারবে না যখন তারা পিছু হটবে। ” {সূরা আল-নামল: আয়াত ৮০} {সূরা আর-রূম: আয়াত ৫২}।
এই আয়াতের ব্যাপারে আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন,
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, নিশ্চয়ই তারা এখন ভালভাবে জানতে (ও বুঝতে) পেরেছে যে, (কবর আযাব প্রসঙ্গে) আমি তাদের যা বলতাম তা বাস্তব। আল্লাহ্ তা’আলা ঘোষণা করেছেনঃ “আপনি (হে নবী !) নিশ্চিতই মৃতদের (কোন কথা) শোনাতে পারেন না” (সূরা আন-নামালঃ ৮০)।
{সহীহ আল-বুখারি ১৩৭১}
মৃত ব্যক্তিরা তাদের কাছের লোকদের পদধ্বনি শুনতে পারে
উপরে উল্লেখিত পরিস্থিতির কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। শুধুমাত্র কুরআন ও হাদীস দিয়ে আমাদেরকে ব্যতিক্রম বিষয়গুলো খুঁজে বের করতে হবে। নিম্নলিখিত হাদিস অনুসারে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) মৃত ব্যক্তিদের তার সঙ্গী-সাথীদের পদধ্বনি শোনার অনুমতি দিয়েছেন, যখন তারা তাদের দাফন করার পর ফিরে যেতে থাকে:
আনাস বিন মালিক বর্ণনা করেছেন:
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে, সে তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়।…
{সহীহ আল-বুখারী, হাদীস নং ১৩৭৪}
সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪৭৫৩ তেও অনুরূপ উল্লেখ করা হয়েছে
এই ব্যাপারটি বোঝার জন্য, আমরা একটি রেডিওর উদাহরণ বিবেচনা করতে পারি। আমরা যখন কোনো একটি রেডিও স্টেশনের চ্যানেল এর সম্প্রচারের ফ্রিকোয়েন্সি টিউন করি, তখন শুধুমাত্র সেই চ্যানেলটিতে কী চলছে তাই শুনতে পাই। অন্য সব চ্যানেলে কি হচ্ছে না হচ্ছে, আমরা তখন কিন্তু সেগুলি শুনতে পাই না। হাদিসটি একটি অনুরূপ পরিস্থিতির অবস্থা বুঝায়, যেখানে আমরা ধরে নিতে পারি যে, মৃত ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির কিছু শব্দ শোনার অনুমতি দিয়েছেন।
যখন একজন ব্যক্তি মারা যায় তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায় – ৩টি জিনিস ব্যতীত
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে তার কাজ ছিন্ন (বাতিল) হয়ে যায়, কিন্তু তিনটি কাজের (সাওয়াব লাভ) বাতিল হয় নাঃ সাদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন সন্তান যে তার জন্য দুআ করে। {সহীহ জামি’ আত-তিরমিযী; হাদিস নং ১৩৭৬}
সুতরাং, যখন একজন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি জিনিস ছাড়া (যা বোনাস হিসেবে চলতে থাকে):
- সাদাকাহ জারিয়াহ (যেই দান থেকে চলমান উন্নতি/সেবা হতে থাকে, যেমন একটি মসজিদ নির্মাণ)।
- উপকারী জ্ঞান (যা রেখে যাওয়ার পরও অন্যরা তা থেকে উপকৃত হতে থাকে), এবং
- একটি ধার্মিক সন্তান যে তার জন্য দুআ/প্রার্থনা করে যাবে।”
সাদাকাহ জারিয়াহ
সাদাকাহ জারিয়াহ হলো এমন প্রকার দান যার ফলে ভবিষ্যতে ক্রমাগত উপকার পাওয়া যেতে পারে। সাদাকা এর অর্থ হলো দান করা আর জারিয়াহ এর অর্থ যা অব্যাহত থাকে। এই সকল দান-সাদাকা গুলো যিনি করবেন, সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পরেও মানুষ, পশুপাখি ইত্যাদি সেই দান থেকে উপকারিতা পেতেই থাকবে।
সাদাকাহ জারিয়াহর উদাহরণ:
- দরিদ্র মানুষের জন্য একটি বিদ্যালয় নির্মাণ করা; অথবা
- মসজিদ নির্মাণ নির্মাণ করা বা নির্মাণে অবদান রাখা।
- গরিব কোনো মানুষকে একটি জায়নামাজ অথবা পোশাক দান করা, যা সে হয়তো দাতার মৃত্যুর পরও ব্যবহার করে, তা থেকে উপকৃত হতে থাকবে।
যতদিন মানুষ এগুলো ব্যবহার করে উপকৃত হতে থাকবে, ততদিন দাতা তার মৃত্যুর পরেও সেই দান থেকে সোয়াব পেতে থাকবে।
উপকারী জ্ঞান
অনেক উপকারী জ্ঞান আছে, যা সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পরেও ছড়িয়ে পড়ে মানব জগতের উপকারে আসতে থাকে। এই হাদীসটি অনুযায়ী, মৃত্যুর পর বোনাস হিসাবে তার ভাল কাজের তালিকায় যোগ হতেই থাকবে। উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো হাদীসটি, শুধুমাত্র ইসলামিক অথবা দ্বীনি জ্ঞানের মধ্যে এই বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ করেনি।
উদাহরণ হিসেবে:
- একটি সমাবেশে প্রেরণামূলক বক্তৃতা;
- সহীহ তথ্যের ভিত্তিতে লেখা একটি ইসলামিক আর্টিকেল; অথবা
- কুরআনের কোনো আয়াত বা হাদীস এর অর্থ অথবা ইসলামিক কোনো আর্টিকেলযাচাই করে শেয়ার করাও উপকারী জ্ঞানের আওতাধীন হতে পারে।
এমন জ্ঞান যা একজন ব্যক্তি মানুষের মাঝে শেয়ার করে গিয়েছেন, তা যত মানুষ জানতে ও শিখতে থাকবে, সেই ব্যক্তি তার মৃত্যুর পরও ততোই এই কারণে সওয়াব পেতে থাকবে।
একজন ধার্মিক সন্তানের প্রার্থনা/দুআ – মৃত ব্যক্তির জন্য
একজন ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে মূল্যবান উপহার হলো তার একটি ধার্মিক সন্তান, যে কিনা সেই মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করতে থাকবে। অবশ্যই, অন্য ব্যক্তির দুআও মৃত্যুর পর সাহায্য করতে পারে, তবে সন্তানের দুআ মৃত ব্যক্তির জন্য সবচাইতে বেশী কার্যকর হয়, কারণ এটি প্রায় তার নিজের আমলের সমতুল্য ধরে নেওয়া হয়।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এক কিনতার হলো বারো হাজার উকিয়ার সমান এবং উকিয়া হলো আসমান-যমিনের মাঝখানে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। রাসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেনঃ জান্নাতে মানুষের মর্যাদা অবশ্যই বৃদ্ধি করা হবে। সে বলবে, এটা (মর্যাদা বৃদ্ধি) কীভাবে হলো? বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার বদৌলতে।
{সুনান ইবনে মাজাহ ৩৬৬০}
অন্য মানুষের দুআ – মৃত ব্যক্তির জন্য
একজন ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে তার সমস্ত নেক আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। সেই ব্যক্তিটি মারা যাওয়ার পরও শুধু ৩টি জিনিস সরাসরি তার আমলনামায় বোনাস হিসেবে যোগ হতে থাকে। অন্যান্য ব্যক্তির দুআ অবশ্যই সেই আত্মার উপকারে আসতে পারে তবে সেগুলি এই ৩টি জিনিসের সমতুল্য কখনোই হতে পারবে না।
বাকি অনিশ্চিত বিষয়সমূহ
এসব বিষয়ে, অনিশ্চিত আনুসঙ্গিক বিষয়সমূহের উপর আমাদের মনে অনেক প্রকার প্রশ্ন উদয় হতে পারে, যেগুলো সম্পর্কে কুরআন বা সহীহ হাদীসে কোনো উত্তর পাওয়া যায় না।
উদাহরণস্বরূপ, কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারে:
- আমরা জানি যে মৃত ব্যক্তিদেরকে কবর দিয়ে – যখন তার কাছের মানুষেরা ফিরে যেতে থাকে – তখন সেই মৃত ব্যক্তি তাদের পদধ্বনি শুনতে পায়। মৃত ব্যক্তি কি তাদেরকে দেখতেও পায়?
- মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের পূর্বে কবরে তাকে বসানো হবে। কবরে যদি বসানোর জন্য কোনো জায়গা না থাকে তাহলে কিভাবে তাকে বসানো সম্ভব?
- মৃত্যুর পরে আত্মার সাথে শরীর কীভাবে শাস্তি অনুভব করবে?
আমাদের কাছে এই বিষয়গুলোর কোনো ব্যাখ্যা নেই। অদৃশ্যের কোনো জ্ঞানের ব্যাপারে, যেখানে কুরআন ও সহীহ হাদিসে কোন তথ্য পাওয়া যায় না, সেখানে আমাদের অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে আল্লাহু আ’লাম – অর্থাৎ, এই ব্যাপারে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)ই ভাল জানেন এবং আমাদেরকে সেখানেই আলোচনা থামিয়ে দিতে হবে। আমরা অদৃশ্যের যেকোনো তথ্যের ব্যাপারে এই দুটি উৎসের বাহিরে – কোনো কিছুই নিশ্চিত সত্য হিসেবে বিশ্বাস করতে পারি না – তা নাহলে আমরা কুসংস্কারের শিকার হয়ে যেতে পারি। আর ইসলামে কুসংস্কারের কোনোই অবকাশ নেই।
মৃতের জন্য কি করা যায়
- সর্ব প্রথম এবং সবচাইতে বেশী যা আমরা করতে পারি – আমরা তার জন্য প্রচুর পরিমাণে দুআ করতে পারি। প্রতিবার যখন আমরা মৃত ব্যক্তিটির জন্য আমাদের মনে দুঃখ/কষ্ট অনুভব করবো, তখনই দুই হাত তুলে আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালার) কাছে দোয়া করতে পারি, যেন আল্লাহ আমাদের সেই কাছের মানুষটির গুনাহ মাফ করে দেন, তাকে জাহান্নামের আগুন ও কবরের আযাব থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে প্রার্থনা করতে পারি যেন তিনি – জান্নাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার কবরকে প্রশস্ত ও আলোকিত করে দেন।
- দ্বিতীয়ত, যদি সেই ব্যক্তিটির কোনো ঋণ থেকে থাকে, তাহলে আমরা তার ঋণের পুরো বা আংশিক পরিমাণ শোধ করার চেষ্টা করতে পারি এবং আল্লাহর কাছে আত্মাটিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ করতে পারি, তাহলে সেই মৃত ব্যক্তির উপকার হতে পারে। নিম্নবর্ণিত আয়াতটিতে একটি মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার উত্তরিধারিকারের মাঝে সম্পত্তি বণ্ঠনের পূর্বে তার ঋণ শোধ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তান-সন্ততির (অংশ) সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন, … (ঐসব বণ্টন হবে) তার কৃত ওয়াসীয়াত অথবা ঋণ পরিশোধের পর। … (এ বণ্টন) আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাশীল। {সূরা আন-নিসা: আয়াত ১১}
- তৃতীয়ত, আমরা মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদকা দিতে পারি। আমরা এতিম খানায় বা দরিদ্র লোকদের মাঝে কিছু টাকা-পয়সা বিতরণ করতে পারি এবং আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালার) কাছে দুআ করতে পারি যেনো এর দ্বারা সেই মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয় বা সওয়াব পায়। {সহীহ আল-বুখারি ১৩৮৮} {সহীহ আল-বুখারী ২৭৫৬} {সুনান আন-নাসায়ী ৩৬৬৪}
- মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ ও ওমরাহ করারও ইসলামে অনুমোদিত। কিন্তু আমরা এটি শুধুমাত্র তখনই করতে পারবো, যখন আমাদের নিজের বাধ্যতামূলক ফরজ হজটি আদায় হয়ে গিয়েছে। তবে, আমাদেরকে জেনে রাখতে হবে স্কলারগণ-এর মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। {সহীহ আল-বুখারি, হাদিস ৭৩১৫}
- আমরা সেই মৃত ব্যক্তির জন্য রোজা রাখতে পারি। {সহীহ আবু দাউদ, হাদিস ২৫৬১}
- আমরা সেই মৃত ব্যক্তির জন্য কুরবানী করতে পারি। আমরা বিসমিল্লাহ বলে আল্লাহর নামে একটি পশু কোরবানি দিয়ে, তার গোশত গরীবদের মধ্যে বিতরণ করে, আল্লাহর কাছে দুআ করতে পারি যেন সেই কুরবানীর প্রতিদান বা সওয়াব সেই মৃত ব্যক্তিটি পেয়ে যাক।
- আমাদের অবশ্যই ঘন ঘন কবর জিয়ারত করার চেষ্টা করতে হবে, সালামের সাথে অনেক পরিমাণে দুআ করতে হবে এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। কবর যিয়ারত করা পুরুষদের জন্য মুস্তাহাব {জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১০৫৪} {সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদিস ১৫৬৯} — জুতা পরে আমাদের কবরের মাঝখানে হাঁটা উচিত নয়। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৫৬৭} {সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ৩২৩০}
- আমরা সেই মৃত ব্যক্তির বন্ধু এবং আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে পারি যা আমাদের নবী (সাঃ) নিজেই করতেন। আমাদের ধর্মে এই ব্যাপারটিকে উৎসাহিত করা হয়েছে, কারণ আমরা সবাই জানি যে আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তার স্ত্রী খাদিজা (রাঃ)- এর মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যেতেন।
- যদিও এই ব্যাপারে স্কলারদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে যে মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা যায় কিনা, তবে অধিকাংশ আলেম এই ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন। তবে আমরা অবশ্যই কোন নির্দিষ্ট সূরা বা নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যায় কোনো আয়াত বার বার পড়া ইত্যাদি থেকে নিজেদেকে বিরত রাখবো (যদিনা কোনো সহীহ সূত্রে এমনটি করার রেফারেন্স পাওয়া যায়)।
- কারো মৃত্যুতে আমাদের সর্বোত্তম চেষ্টা করা উচিত একটি বড়ো জানাযার ব্যাবস্থা করা, কারণ যেই জানাযায় ১০০ জন মুসলিম অংশগ্রহণ করে সেই জানাযায় মৃত ব্যক্তির ক্ষমা পাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।