Islam-beliefs

সূরা আল-মাউন থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলি

যদি কেউ সূরা মাউন এর অর্থ সহ অর্থ সহ পড়েন:

    • সে কিয়ামতের দিন অস্বীকার করতে পারবে না
    • এতিমের হক মারতে পারবে না
    • মিসকিন কে না খাইয়ে বা না সাহায্য করে থাকতে পারবে না
    • নামাজে গাফিলতি করতে পারবে না
    • লোক দেখানোর ইবাদত করতে পারবে না
  • এবং অন্য মানুষকে ছোটখাটো সাহায্য করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে না।

সূরাটির আক্ষরিক অর্থ হলো নিম্নরূপ:

পরম দয়ালু ও অসীম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু,

    1. আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচারদিবসকে মিথ্যা বলে?
    1. সে সেই ব্যক্তি, যে এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়
    1. এবং মিসকীনকে অন্ন দিতে উৎসাহিত করে না।
    1. অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর,
    1. যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর;
    1. যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে
  1. এবং অন্যকে ছোট-খাটো সহায়তা প্রত্যাখ্যান করে।

আসুন, এই সূরাটি শুধু আমাদের মুখ আবৃতি না করে বরং সূরাটির প্রকৃত অর্থ বোঝার চেষ্টা করি। অর্থটি বোঝার পর, আমাদের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে এগুলোর প্রতিফলন আনার চেষ্টা করি।

সূরাটি গভীরভাবে বোঝার জন্য উদাহরণ

আমাদেরকে অবশ্যই বিচারের দিনের উপর বিশ্বাস করতে হবে

আমরা কখনোই এতিমের অধিকার লঙ্ঘন করতে পারব না

আমাদেরকে গরীবদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতেই হবে

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একজন কিপটে মানুষ তার নামাজে এই সূরাটি পড়লো। কিন্তু, এটি পড়ার পরেও তার মনে কোনো পরিবর্তন আসলো না। একটি এতিমের উত্তরাধিকারী সম্পত্তি অন্যায়ভাবে জবরদখল করে নিতে তার ভয় কোনো হলো না। সমাজের দরিদ্র মানুষের জন্য তিনি তার হাত বাড়ালেন না।

সেই নামাজি বেক্তি ধ্বংস হোক

যারা তাদের নামাজে গাফেল বা অমনোযোগী

যারা লোক দেখানো এবাদত করে

এবং যারা অন্য মানুষকে ছোট-খাটো সাহায্য করতে চায় না

এই সূরাটির ৪ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সেই নামাজী বেক্তির উপর গজব নাজিল হোক। সেই সকল নামাজির উপর, যাদের মাঝে নিম্ন বর্তীত বৈশিষ্টগুলো পাওয়া যায়।

যারা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন বা অমনোযোগী। এটা স্পষ্ট যে এইসব ব্যক্তির মধ্যে তারা অন্তর্ভুক্ত যারা অলসতার বশে কিছু নামাজ অবহেলা করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এর বাইরেও কিছু ছোট-খাটো বিষয় এটির আওতাধীন যেমন, এমন বেক্তি যে প্রায়ই তার নামাজে দাঁড়িয়ে তার ব্যবসায়িক লাভ-লোকসানের হিসাব নিকাশ সেড়ে নেন। এরকম চিন্তা নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় মাঝে-মধ্যে আমাদের মাথায় আসতেই পারে,  কিন্তু যদি আমরা এটি আমাদের নিয়মিত অভ্যাস বানিয়ে ফেলি তাহলে এটি এক ধরণের অপরাধ হয়ে ওঠে।

যেই ব্যক্তি সবসময় খেয়াল রাখেন, যেন সবাই তাকে একজন নিয়মিত নামাজী হিসেবে লক্ষ্য করে এবং সমাজের একজন ধার্মিক ব্যক্তি হিসেবে তাকে গণ্য করে। তিনি লোক দেখানোর জন্য এসব উপাসনাগুলো করে থাকেন। আল্লাহ (সুবহানু-ওয়াতা’লা) এই সব নামাজ কখনই কবুল করেন না।

যারা অন্যকে ছোট-খাটো সাহায্য করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। আসুন এই ক্ষেত্রে ২টি উদাহরণ কল্পনা করি।

প্রথম উদাহরণ: একজন যুবক সুন্দরভাবে তার নামাজে সূরা মাউন পাঠ করে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসলো। তার কোনো রকম তাড়াহুড়া ছিল না এবং তিনি শান্ত ভাবে তার বাড়ির পথে ফিরে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় একজন অন্ধ লোক তাকে রাস্তা পার করিয়ে দেওয়ার জন্য সাহায্য চাইলো। যুবকটি কোনো কারণ ছাড়াই সেই অন্ধ ব্যক্তিটির মুখের ওপর তাকে মানা করে দিলেন।

দ্বিতীয় উদাহরণ: একজন মহিলা তার বাসায় নামাজে এই সূরাটি পড়লেন। নামাজ শেষ হতেই হটাৎ কলিং বেলটি বেজে উঠলো। তিনি দরজায় গিয়ে দেখলেন, যে পাশের বাড়ির ভাবি এসেছে। উনি আসলে রান্না করা শুরু করে দেওয়ার পর হটাৎ দেখলো যে তার বাসায় লবন শেষ হয়ে গিয়েছে, আর সেই মুহূর্তে তার কাছে লবন কিনে আনার সময়টি নেই। যেই মহিলাটি এখনই নামাজ পড়ে উঠলেন, তিনি এই সামান্য লবন দিতে মানা করে দিলেন, যদিও এতটুকু লবন দিলে তার সেরকম কোনো ক্ষতি হয়ে যাচ্ছিলো না।

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’লা) এরকম মানুষদের পছন্দ করেন না যারা মুসলিম হিসেবে বাজে একটি উদাহরণ আর তারাই এই সুন্দর ধর্ম – ইসলাম থেকে বাকি মানুষদেরকে আরও দূরে ঠেলে দেয়। ইসলাম শুধু একটি ধর্ম নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ জীবন যাপনের পথনির্দেশনা, যা আমাদের উপাসনার সাথে সাথে আমাদের চরিত্রেও প্রভাব আনে। ইসলাম আমাদেরকে শিখায় যে, কিভাবে আমরা অন্য মানুষ ও পশু-পাখির সাথে আরো ভাল ব্যবহার ও ভদ্র আচরণ করতে পারি।