Islam-beliefs

সন্তানদের সঙ্গে আচরণের বিধিমালা

ভূমিকা

একটি সমাজের ক্ষুদ্রতম রূপ হিসেবে একটি পরিবারকে বিবেচনা করা যায় (একটি অণুর মত)। অনেক গুলো পরিবার একত্র হয়ে একটি সমাজ গঠিত হয়; এইভাবে একটি সমাজের অধিকাংশ পরিবার, সমাজটির নৈতিকতাকে প্রভাবিত করে। আপনি খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারেন কিভাবে একটি পদার্থের বৈশিষ্ট, এর অণুগুলির উপরে নির্ভর করে, যা দিয়ে এটি গঠিত।

আমরা সবাই জানি যে একটি দেশ/রাষ্ট্র – সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ছাড়া সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না, একটি পরিবারের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। সাধারণত, পিতা-মাতা একটি পরিবার পরিচালনা/কার্য-নির্বাহ করে। পারিবারিক প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে একতা, ভালোবাসা এবং ঘনিষ্ঠতা শুধুমাত্র একটি সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত পরিবেশেই সম্ভব। তাহলেই সন্তানেরা সঠিক জ্ঞান/শিক্ষা পাবে ও নেয়-বোধ ক্ষমতা নিয়ে গড়ে উঠবে।

কোরআন ও সুন্নত থেকে বিশ্লেষণ করলে

সমতা ও ন্যায়পরায়ণতা

আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদেরকে সমতা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন এবং অশুভ কাজ নিষেধ করেছেন:

আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।

{সূরা আন-নাহল: আয়াত ৯০}

আমরা সবাই সম্ভবত এই বিখ্যাত হাদীসটি জানি, যে ৭ শ্রণীর মানুষ কেয়ামতের দিন আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) ছায়ার নিচে আশ্রয় পাবে। এদের মধ্যে প্রথম শ্রেণী হলো ন্যায়পরায়ণ নেতা (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, পিতা-মাতাই পরিবারের নেতা/নীতি-নির্ধারক হয়)।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাত রকমের লোক, যাদেরকে আল্লাহ্‌  ক্বিয়ামাতের দিন তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোন ছায়া হবে না:

১. ন্যায়পরায়ণ নেতা  

২. ঐ যুবক, যে আল্লাহ্‌ তা’আলার ‘ইবাদাতে মশগুল থেকে বড় হয়েছে

৩. এমন যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌কে নির্জনে স্মরণ করে আর তার চোখ দু’টি অশ্রুসিক্ত হয়;

৪. এমন ব্যক্তি যার অন্তর মাসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে(জামা’আতে সলাত আদায়ে যত্নবান);

৫. এমন দু’ব্যক্তি যারা আল্লাহ্‌র উদ্দেশে একে অপরকে ভালবাসে;

৬. এমন ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত রূপসী নারী নিজের দিকে ডাকলে সে বলে, আমি আল্লাহ্‌কে ভয় করি;

৭.যে ব্যক্তি এতটা গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কী করে তা তার বাম হাত টের পায়না

{সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৮০৬ এবং সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২২৭০}

আরেকটি আয়াতে, মানুষকে (কোনোরকম পক্ষপাত ছাড়া) ন্যায়-বিচার করতে আমন্ত্রণ জানায়।

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনও ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না। সুবিচার কর এটাই খোদাভীতির অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে খুব জ্ঞাত।

{সূরা আল-মায়েদাহ: আয়াত ৮}

সন্তানদের  প্রতি বাবা-মায়ের করণীয়

মা-বাবাদের তাদের প্রত্যেকটি সন্তানদের প্রতি সমান, নিরপেক্ষ ও ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতে হবে। সন্তানদের মধ্যে কোনো একজনকে বা তাদের মধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকজনকে কোন রকম অগ্রাধিকার দেয়া / পক্ষপাতিত্ত করা যাবে না – তাদের লিঙ্গ, সৌন্দর্য, ক্ষমতা, সম্পদ/আয় ইত্যাদি নির্বিশেষে। এ সম্পর্কিত কয়েকটি সহী হাদিস নীচে আলোচনা করা হল:

নু‘মান ইবনু বশীর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

তোমাদের সন্তানদের সাথে সমান আচরণ করো; তোমাদের সন্তানদের সাথে ইনসাফ করো।

{সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৫৪৪}

আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন:

তিনি বলেন, একবার এক অসহায় স্ত্রী তার দুটি মেয়ে সন্তানসহ আমার কাছে আসলো। আমি তাদেরকে তিনটি খেজুর খেতে দিলাম। সে দুই  মেয়েকে একটি করে খেজুর দিল এবং একটি নিজে খাওয়ার জন্যে তার মুখে তুলল। সে মুহুর্তে মেয়ে দুটি এ খেজুরটিও খেতে চাইল। সে তখন সেই খেজুরটি তাদের উভয়ের মাঝে দুই ভাগে ভাগ করে দিল। তার এ আচরণ আমাকে(আয়িশাহ (রাঃ)) আশ্চর্য করল। পরে আমি একথাটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা এ কারণে তার জন্যে জান্নাত আবশ্যক করে দিয়েছেন অথবা তিনি তাকে এ কারণে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিয়েছেন।

{সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৫৮৮}

নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন:

যে, আমার পিতা আমাকে একটি গোলাম দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আম্‌রা বিনতে রাওয়াহা (রাঃ) বলেছিলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সাক্ষী না রাখলে আমি এতে সম্মত নই। তখন তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রসূল! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলা হয়েছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম দান করেছো? আমি বললাম, না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। তিনি আরো বললেন, তবে তুমি তা ফিরিয়ে নাও। ইমাম শা‘বী (রহঃ) সূত্রে: তিনি বলেছেন, আমি অন্যায় কাজে সাক্ষী হতে পারি না।

{সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৬৫০ এবং সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৫৮৬-৭}

স্কলারদের মতামত

সন্তানদের মধ্যে পার্থক্যকরণ এর বিষয়ে স্কলারদের মধ্যে দুরকম মতামত আছে (আল্লাহই ভাল জানে)। এই দুটি মতামত হলো:

  1. তাদের মধ্যে কোনো রকম পার্থক্য করা সম্পূর্ণ হারাম, তা কোনো কারণে হোক বা অকারণে; হাম্বলীদের (কাশাফ আল ক্কীনা’, ৪/৩১০; আল-ইনসাফ, ৭/১৩৮) এবং জাহিরিয়াদের মধ্যে এই দৃষ্টিভঙ্গি সুপরিচিত।
  2. কোনো রকম বৈধ শরীয়া ভিত্তিক কারণ ছাড়া এরকম পার্থক্য করা হারাম। এই দৃষ্টিভঙ্গি আহমদ (আল-ইনসাফ, ৭/১৩৯) থেকে বর্ণিত এবং ইবনে কুদামাহ (আল মুগনী, ৫/৬৬৪) ও ইবনে তাইমিয়াহ্ (মাজমূ ‘আল-ফাতাওয়া, ৩১/২৯৫) দ্বারা সমর্থিত।

এদেরমধ্যে সবচেয়ে সহজসাধ্য মতামত হলো, পার্থক্যকরণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ যা শুধুমাত্র ন্যায়সঙ্গত কারণেই এড়ানো সম্ভব।

ইবনে হাজর, ফাতহ্ আল-বারী(৫/২১৪) তে উল্লেখ করেন: সন্তানদের মধ্যে পার্থক্যকরণ পারিবারিক বন্ধন ভেঙে দিতে পারে এবং পিতামাতার প্রতি নাফরমানী গড়ে তুলতে পারে। যেহেতু এই দুটি জিনিস হারাম, যেই কাজ এমন সম্ভবনা গড়ে তোলে তাও হারাম হওয়া উচিত।

আল মুগনী, ৫/৬৬৪: লক্ষণীয় যে, সন্তানদের মধ্যে কোনো একজনকে বা তাদের মধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকজনকে অগ্রাধিকার দিলে তাদের নিজেদের মধ্যে ও তাদের পিতামাতার সাথে শত্রূতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয় তাই এটা অনুমোদিত নয়।

ওয়ারিসের জন্য ওসিয়াত হয় না

এমনকি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগির জন্য কোনো রকম ওসিয়াত বানানো/লেখা নিষিদ্ধ। এটি একটি সাধারণ কান্ডজ্ঞান।

আবূ উমামাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন: তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ

নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক হকদারের অংশ নির্দিষ্ট করেছেন। সুতরাং কোন ওয়ারিসের জন্য ওসিয়াত করা যাবে না।

{সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৮৭০}

প্রকৃত ঘটনা সাপেক্ষে আলোচনা

সন্তানদের মধ্যে সমান আচরণ না করার প্রতিফল নিম্নরূপ হতে পারে:

  1. সন্তানেরা তাদের অভিভাবকদের এমন অন্যায় আচরণ শিখতে পারে এবং ভবিষ্যতে অন্যদের সাথে একই ভাবে আচরণ করতে পারে। সময়ের সাথে সাথে, এই মনোভাব তাদের স্বভাব/চরিত্রে রূপান্তরিত হতে পারে।
  2. যে সকল সন্তানেরা এই ধরনের অন্যায়ের শিকার হয়েছে, তারা ভবিষ্যতে তাদের পিতামাতার প্রতি অবাধ্য বা বিদ্রোহী হয়ে উঠার প্রবল সম্ভবনা থাকে।
  3. ভাই-বোনদের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা বা শত্রূতা জন্মানোর মারাত্মক ঝুঁকি থাকে যা এমন পর্যায় পৌঁছুতে পারে যে তারা একে অপরের ক্ষতি করার কথাও চিন্তা করতে পারে।
  4. এরকম অবিচার দ্বারা উপকৃত সন্তানগুলোর মনে আত্মবিধ্বংসী গর্ব ও অহংকার তৈরী হতে পারে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মনে, নিরাশা ও নিপীড়নের অনুভূতিতে, মানসিক সমস্যা গড়ে উঠতে পারে। অহংকারীদের আবাসস্থল জাহান্নামে নয় কি? {সূরা আল-যুমার: আয়াত ৬০}

নবীদের কাহিনী থেকে

  • আপনি কি জানেন, যে মানবতার সর্বপ্রথম অপরাধ হলো হত্যা(নিকৃষ্টতম অপরাধ)। কাবিল(ইংরেজিতে কেইন – আদম আঃ এর ছেলে) সর্বপ্রথম তার ভাই হাবিল(ইংরেজীতে এবেল) -কে হত্যা করেছিল ভাইদের মধ্যে হিংসাগত কারণে।
  • ইউসুফ আঃ এর ঘটনায়, তার ভাইদের মধ্যে একটি ধারণা ছিল যে তাদের পিতা ইউসুফ আঃ ও তার ভাই বেঞ্জামিনকে বেশি ভালোবাসতেন (সূরা ইউসুফ আয়াত: ৮) এবং তাদের হিংসা এমন পর্যায় পৌঁছায় যে তারা ইউসুফ আঃ কে  হত্যা করার পরিকল্পনা করে (আয়াত ৯) কিন্তু পরে তারা  ইউসুফ আঃ কে একটি কূয়াতে নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেয় (আয়াত ১০)।

আসুন, কিছু সাধারণ মানুষের তাদের নিজের বেক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা নিয়ে আলোচনা করি:

এক ব্যক্তি লিখেছেন

“আমার শৈশবের স্মৃতি খুব তিক্ত এবং আমি তা ভুলতে পারি না। আমার বাবা আমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বৈষম্য করতেন। তিনি আমার ভাইয়ের সব ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করতেন এবং একবারও আমার প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করেন নি। তিনি আমার ভাইকে সম্মান দিতেন আর আমার সাথে অপমানকর/অমর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার করতেন। বাবা তাকে ভালোবাসতেন এবং সবসময় তার সাথে আন্তরিক শব্দে কথা  বলতেন।

এই আচরণে আমি চিন্তা করা শুরু করলাম যে আমার বাবা ও ভাই ভালো না। আমার সাথে অন্যায় আচরণের জন্য আমি আমার বাবার  উপর প্রতিশোধ নেয়ার কথা চিন্তা করতাম। আমার এই দুশ্চিন্তার সময় আমি একা থাকা পছন্দ করতাম। আমি দেয়ালে থুথু ফেলতাম ও তা নষ্ট করতাম। আমি জানালার কাঁচ ভেঙে আমার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতাম। আমার কি আর করার ছিল? কিন্তু আমার বাবা এ ব্যাপারে উদ্বেগহীন ছিলেন। সে জানতোনা, আমার কার্যকলাপ ও চিন্তাধারা শুধুমাত্র তার বিরুদ্ধেই ছিল।”

এক ভদ্রমহিলা তার ডায়েরিতে লিখেছেন

… আমাদের নিকটতম এক আত্মীয়ের দুইজন মেয়ে ছিল। এদেরমধ্যে একজন খুব উজ্জ্বল ও  ভালো ছাত্রী এবং আরেকজন ছিল মধ্যবিধ/মাঝারি প্রকৃতির। তারা দুইজনই স্কুলে যেত। বড় মেয়ে (যে এতটা মেধাবী ছিল না) পরীক্ষায় কম নাম্বার পেতো। ছোট মেয়ে সবসময় তার লেখাপড়ায় খুব ভাল রেজাল্ট করতো। তাদের মা সবসময় তার ছোট মেয়ের প্রতিভা নিয়ে বড়াই করতো এবং বড় মেয়েকে ছোট করতো। তিনি ছোট মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতো এবং বড় মেয়ের সমালোচনা করে যেতেন এমন ভাবে যেন সে এই মেয়েটির পড়াশুনার পিছে সব টাকা নষ্ট করছে। তিনি এমনও বলতেন যে, বড় মেয়ের পিছে ভালো পোশাক ও খাওয়া দুটাই অপচয় হচ্ছে।

এই মেয়েটির এখন বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তার একাধিক সন্তান হয়েছে। সে একজন সাধারণ গৃহিণী। সে দুর্বল দৃষ্টিতে তাকায় এবং তাকে দেখে মনে হয় যে সে হীনমন্যতার শিকার। তাকে সবসময় ক্লান্ত দেখায় এবং সে চিন্তায় ডুবে থাকে। কোনো পার্টিতে গেলে সে এক কোণায় চুপচাপ পরে থাকে এবং কারো সাথে কথা বলে না।

যখন আমি তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতাম, সে কেবল একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতো, ‘কি আর বলবো?’ আমার মনে আছে, তার বিবাহের পূর্বে, আমি তাকে একটি সাইকোলজিস্ট এর কাছে নিয়ে যাই। ডাক্তার, তার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরে, বলেছিলেন যে তার কোনো সমস্যা নেই। আসলে তার পিতামাতা তার সাথে সঠিকভাবে আচরণ না করায় বর্তমান দুর্দশার কারণ হয়েছে।

একবার ডাক্তারটি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কি রান্না করতে পারো?’ সে কান্না শুরু করে বলেছিলো, ‘আমি রান্না করতে পারি, কিন্তু যখনি আমি কিছু বানাতাম আমার পিতামাতা বলতো আমার বোন ভালো খাওয়া রান্না করে।

উপসংহার

আমাদের কাছে আছে চমৎকার একটি ধর্ম(ইসলাম), আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) থেকে নাজিলকৃত পবিত্র কুরআন এবং আমাদের নবী করীম মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নত, এসব মানবতার যাবতীয় সমস্যার সমাধান হিসেবে যথেষ্ট। আমাদের শুধু নিজেদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং তাঁর সাহায্য চাইতে হবে, শয়তান থেকে আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য। নিশ্চয়ই, এই জীবন ও পরকালের শান্তি শুধুমাত্র আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) পথপ্রদর্শন ও হেদায়েত দ্বারাই পাওয়া সম্ভব।

আমরা সবাই জানি যে, প্রত্যেকটি সন্তানের সাথে হুবুহু সমান আচরণ করা অসম্ভব কিন্তু আমরা অন্তত সমতা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে পারি। যখনই আমরা এই নীতি থেকে বিপথগামী অনুভব করব বা ন্যায্যতা ভঙ্গের আভাস পাবো, তখনি আমাদের নিজেদেরকে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত এবং সঠিক নির্দেশনার জন্য আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে দোয়া চাওয়া উচিত।