Islam-beliefs

দুআ/মোনাজাত – একটি উপাসনা

Table of Contents

ভূমিকা

আমার কাছে এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় বলে মনে হয়, কারণ এর সাথে অনেক গুলো ব্যাপার জড়িত। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্যা গুলো নিম্নরূপ:

  1. যখন কারো দুআ কবুল বা সঠিক অর্থে বাস্তবায়িত হয় না তখন নিম্নে উল্লেখিত ব্যাপার ঘটতে পারে:
    1. কিছু মানুষের মনে একটা ধারণা জন্মাতে পারে যে – “আমাকে মনে হয় কেউ শুনতেই পারছে না?” এভাবে খোদার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ আসে। আমাদের প্রতি তাঁর উদ্বেগ এর বেপারটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
    2. কেউ কেউ মনে করে, যেহেতু  আমাদের দোয়া কবুল হয়নি – আমার উপর অবিচার করা হয়েছে – তাই আমি আমার দ্বীন/ধর্মের উপর সুবিচার করবো না / মেনে চলবো না” এজন্য তারা:
      1. প্রার্থনা/নামাজ বন্ধ করে দেয় এবং আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়;
      2. ইসলাম থেকে অনেক দূরে চলে যায় এবং তাদের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতা গুলো অবমাননা শুরু করে  
    3. কারো আবার মনে হতে পারে, “আমি অনেক অপবিত্র/পাপী তাই আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে দুআ চাওয়ার যোগ্য নই” তাই তারা:
      1. আশা হারিয়ে ফেলে এবং দুআ  করাই বন্ধ করে দেয়;
      2. অন্য কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোন ব্যক্তির কবরে গিয়ে তাদের ইচ্ছা পূর্ণ করার চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেন – এভাবে শিরক করার ফাঁদে পড়ে যায়।
    4. কারো আবার এমন ধারণা গড়ে উঠতে পারে (যা আমার নিজেরই ছিল) যে, “আমি আমার সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে ছেড়ে দিলাম, যেহেতু তিঁনি ভালো জানেন আমার জন্য কি ভালো/মন্দ”, এভাবে দুআ করাই বন্ধ করে দেয়।
  2. অধিকাংশ মানুষই জানেনা কিভাবে দুআ করতে হয় – দুআ করার নিয়মকানুন এবং আদবকায়দা
  3. বেশিরভাগ মানুষ এটাও জানেনা দুআ করার সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে পারে।

আমি পর্যায়ক্রমে উপরোক্ত বিষয়গুলোর উপর আলোচনা করবো।

দুআ শব্দটির প্রকৃত অর্থ

আমরা সকলেই জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ এবং অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকি। আসুন সর্বপ্রথম দুআ শব্দটির বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করি। দুআ করার উদ্দেশ্য আসলে কি? আমরা বেশিরভাগই দুআ-এর সাথে তলব-কে গুলিয়ে ফেলি। আরবীতে তালব শব্দের অর্থ হচ্ছে কিছু চাওয়া। দুআ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ডাকা বা আহ্বান করা। আমরা যখন আল্লাহর কাছে দুআ করি- মাঝে মাঝে সেই দুআ মধ্যেই আমরা কিছু চাই বা আল্লাহর কাছে অনুরোধ করি। দুআ এর মধ্যে আমরা আল্লহর কাছে কি চাচ্ছি সেটার থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো যে – আমরা বিনীত ভাবে আল্লাহ সুবানু ওয়া তালার সাথে যোগাযোগ করছি – এটিই দুআ করার চূড়ান্ত লক্ষ্য। আমাদের দুআ হল এমন একটি মাধ্যম যার সাহায্যে আমরা আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করি, এটি এমন কোনো মাধ্যম নয় যার দ্বারা এই পৃথিবীকে স্বর্গে রূপান্তরিত করা হয়। আমরা সবাই জানি যে দাওয়াত মানে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো – দুআ এবং দাওয়াত একই আরবি রুট থেকে এসেছে যা আমাদেরকে দুআ শব্দটির প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে কিছুটা সাহায্য করতে পারে।

নবীদের ঘটনাগুলিতে আমরা দেখেছি যে তাদের দুআ কিভাবে কবুল করা হয়েছিল – তাদের দুআ করার ঠিক পরপরই বিশাল কিছু পরিবর্তন ঘটেছিল। যেন সেই কাহিনীগুলিতে সেই দুআগুলো ব্যতীত সেই বিশাল পরিবর্তনগুলো কখনোই ঘটতো না – আর সেই দুআগুলো এক একটি ব্রিজের মতো ঘটনাগুলির মাঝখানে অবস্থিত হয়েছে।

যখন দুআ কবুল হয় না

চারটি সম্ভাব্য ফলাফল

এক: খোদার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ আসে বা আমাদের প্রতি তাঁর উদ্বেগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়

মনে কিছু প্রশ্ন জাগতে পারে যেমন:
  • “আদৌ কি কোন খোদা কি আছেন?”
  • যদি আছেন – “আমি কি সঠিক খোদা-কে ডাকছি”?
  • ” আমাকে কি কেউ শুনতে পারছে না?”
  • “আমার খোদার কি আমাকে নিয়ে কোনো উদ্বেগ নাই?”
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর হল:
  • হ্যা, খোদা আছেন (এতে কোনোই সন্দেহ নেই)। কোনো স্রষ্টা, পালনকর্তা বা প্রতিপালক ছাড়া এরকম একটি নিখুঁত বিশ্বের অস্তিত্ব সম্ভব নয়।
  • আপনি সঠিক খোদা কে ডাকছেন যদি তিঁনি ইখ্লাস এর ৪টি শর্ত পূরণ করছে:
    • তিঁনি এক; তিঁনি চিরন্তন; তাঁর কোন পিতা/মাতা/সন্তান নাই; এবং তাঁর মত আর কেউ নাই।
  • আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সবসময় আমাদের কাছে আছেন এবং আমাদেরকে শুনতে পারছেন।
  • আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদেরকে সবচাইতে বেশী ভালোবাসেন, তাঁর মতো আমাদেরকে আর কেউ ভালোবাসতে পারে না, তাই তাঁর আমাদেরকে নিয়ে উদ্বিগ্ন।
আসুন এই প্রথম দুইটি উত্তরের বিশ্লেষণ করা যাক:

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সবসময় আমাদের কাছেই আছেন এবং তৎক্ষণাৎ আমাদের দুআ-এ সাড়া দেয়। কিন্তু আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে যেমন, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) অনুগত থাকা এবং তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপনা করা:

আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।

{সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৬}

নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী।

{সূরা সাবা, আয়াত ৫০}

এমনকি মুহাম্মদ (সাঃ) নিম্ন-লিখিত হাদীসে নিশ্চিত করেছেন যে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সবসময় আমাদেরকে শুনতে পাচ্ছে:

আল-আশ’আরী (রাঃ) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন কোন উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতাম। আর আমাদের আওয়াজ অতি উঁচু হয়ে যেত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।

{সহীহ আল-বুখারী, হাদীস: ২৯৯২}

আবূ মুসা আরো রিপোর্ট করেন যে, নবী (সাঃ) বলেছেন: “ও মুসা, আমি কি তোমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিব যা বেহেস্তের একটি গুপ্তধন: লা হাওলা ওয়া-লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ (আল্লাহর পক্ষ ছাড়া অন্য কোন শক্তি নাই)

উপরন্তুত, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদেরকে নিয়ে সবার চাইতে বেশি উদ্বিগ্ন এবং আমরা যখনি তাঁকে ডাকি তিঁনি আমাদের সাথেই আছেন। আবু হুরায়রা উল্লেখ করেছেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেছেন “আমি আমার বান্দার নিকট তার ধারণা অনুযায়ী থাকি। যখন সে আমার স্মরণ করে তখন আমি তার সাথী হয়ে যাই। যখন সে একাকী স্মরণ করে তখন আমি একাকী তাকে স্মরণ করি। যখন সে কোন সভায় স্মরণ করে তখন আমি তার চেয়েও উত্তম সভায় স্মরণ করি। যদি সে আমার প্রতি এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে দু’হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার প্রতি পায়ে হেঁটে আসে আমি তার প্রতি দৌড়ে আসি।

{সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৭২৫}

দুই: আমার দুআ কবুল হয় না, তাই আমি আমার ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাবো না

যখন বার বার চাওয়ার পরও আমরা আমাদের আকাঙ্খিত কিছু না পাই, তখন আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করি, যে আমাদের উপর অবিচার করা হয়েছে। এরকম কয়েক বার চাওয়ার পর, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ ধৈর্য হারিয়ে ফেলি এবং ইসলামের পথ থেকে দূরে চলে যাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, আমরা নামায পড়া বন্ধ করে দেই (যা মানবতার জন্য শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ) করা বন্ধ এবং ধীরে ধীরে আমরা আমাদের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করা শুরু করি।

এ প্রসঙ্গে আমি কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করি:

  • আমাদেরকে দুআ করার যথাযত আদবকায়দা শিখতে হবে, যা অবলম্বন করলে আমাদের দুআ কবুল হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাবে – নিম্নে আলোচিত।
  • আমাদের জীবনের প্রতিটি বিপদ – হয় একটি পরীক্ষা বা শাস্তি। এ কথাটি মনে রেখে আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে ও আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে দুআ চাইতে হবে।
  • কখনও কখনও আমরা যা দুআ করি তা আমাদের জন্য উপকারী হয় না বা আরো ক্ষতির কারণ হয়।
  • সর্বশেষে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) সবসময় মনোযোগ দিয়ে আমাদেরকে শুনছে এবং আমাদের কোনো দুআই আসলে নষ্ট/বিফল হয় না – আমাদেরকে দুআ করার সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে পারে তা নিম্নে আলোচিত।

দয়া করে মনে রাখবেন যে, এটি শয়তানের একটি চালাকি আমাদেরকে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) থেকে দূরে করে দেয়ার জন্য। শয়তান আমাদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় যে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের ব্যাপারে উদাসীন তাই আমাদের দুআ কবুল করছেন না, তাই আমাদেরও তাঁর নির্ধারিত সরল পথ অনুসরণ করার দরকার নাই। এভাবে আমাদের ইমানের একটা বিশাল পরীক্ষা নেয়া হয় – যে আমরা কি শয়তানের এই খারাপ প্ররোচনা  অনুসরণ  করবো নাকি ধৈর্যশীল হয়ে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) পথ আঁকড়ে ধরে রাখবো। অন্তত এই সরল পথটিতে নিশ্চিত সাফল্য রয়েছে যা অন্য কোনো পথে নেই।

পৃথিবীতে আমরা যতই ধন-সম্পত্তি পেয়ে যাই না কেন, মানুষের মন কখনো শান্তি পায় না এবং আমাদের চাহিদা ও আকাঙ্খা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটি একটি সাধারণ মানব প্রকৃতি যাতে দোষের কিছুই নাই, আমাদেরকে আসলে এমনভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে যে আমরা প্রকৃত শান্তি শুধুমাত্র আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) স্মরণেই পাই। এবং আসল সার্থকতা হলো আমাদের সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করে জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্য-জান্নাত এ পৌঁছে যাওয়া।

…জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির(স্মরণ) দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়

{সূরা আর-রাদ, আয়াত ২৮}

তিন: আমি অনেক পাপী তাই আমি দুআ করার জন্য অযোগ্য

কারো আবার এমন মনে হতে পারে, যে আমরা এতই পাপী এবং আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রতি এতই অবাধ্য যে, আমরা আর কখনোই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) মুখোমুখি হয়ে কিছু চাইতে পারবো না। তারা মনে করে যে খোদা (তা’আলার) সাথে তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছে যা আর কখনো পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হবে না। এমন ধারণা, সেই ব্যক্তিকে নিম্ন উল্লেখিত পরিস্থিতির শিকার করতে পারে :

  • আশাহীন হয়ে, দুয়া করা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে পারে।
  • তাদের সমস্যা সংশোধনে বা আকাঙ্খা পূরণে, বিকল্প সমাধান অবলম্বন করার চেষ্টা করতে পারে যেমন – কোনো ধার্মিক লোকের কবরের গিয়ে বা কোনো জাদুকর এর কাছে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারে – এভাবে শিরক করার ফাঁদে পড়তে পারে।
প্রথম পরিস্থিতি: আশাহীন হয়ে দুআ করা বন্ধ করা

নিম্ন উল্লেখিত আয়াতটিতে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সরাসরি তাঁর অবাধ্য বান্দাদেরকে (ধার্মিক/নিষ্পাপ মানুষ নয়) উল্লেখ করে বলেছেন যেন তারা কোনোভাবেই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) রহমতের আশা ত্যাগ না করে; তারা যতই পাপ-ই করুক না কেন তাদের উপর আযাব আসার আগেই তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) পথে ফিরে আসতে পারে:

বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ (পাপ করে গিয়েছ) তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও তোমাদের কাছে আযাব আসার পূর্বে। এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না;

{সূরা আয-যুমার আয়াত ৫৩-৫৪}

বস্তুত, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) রহমত ও ক্ষমা এর আশা ছেড়ে দেওয়া তাঁর উপর অবিশ্বাস করার সমতূল্য ধরা হয়। তিনি রাহমান-উর-রহিম, এবং আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।

…নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায়, ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।

{সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৭}

আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের ব্যাপারে সবকিছুই জানেন, সুতরাং আমাদের কোনো ক্ষুদ্রতম পাপও পরম দয়ালু আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে গোপন নয়। তাই আমাদের তাঁর মুখোমুখি হয়ে তাঁর কাছে দুয়া প্রার্থনা করতে লজ্জা বোধ করার কিছুই নাই।

ইসলাম দাবি করে না, যে আমাদেরকে তৎক্ষণাৎ একজন ধর্মপ্রাণ/ধার্মিক ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হতে হবে, এটি আমাদেরকে একটি সরল পথে আমন্ত্রণ জানায়, যা আমাদেরকে ধীরে ধীরে এবং যতটা সম্ভব অনুসরণ করে যেতে হবে। সুতরাং, দুআ করার আগে, ইসলাম ধর্মে আমাদের মর্যাদা বিচার করা উচিত নয়।

দ্বিতীয় পরিস্থিতি: বিকল্প বেবস্থা অবলম্বন

ইসলামে অবশ্য অন্য মানুষের কাছে নিজেদের জন্য দুআ চাওয়ার অনুমোদন আছে। তবে, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সবসময় আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) সাথে সরাসরি সংযোগ আছে এবং যে কোন ব্যাপারে আমরা তাঁর কাছে সবসময় দুআ চাইতে পারি। কিন্তু, সরাসরি আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে দুআ না চেয়ে বিকল্প পথ অবলম্বনে ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট অপরাধ (শিরক) সংগঠনের একটি বিশাল ঝুঁকি রয়েছে।

কালো জাদুকরের কাছে যাওয়া বিপজ্জনক

এই আয়াতটিতে কালো জাদুর বেখ্যা দেয়া হয়:

… শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।

{সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত ১০২}

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

ধ্বংসকারী সাতটি কাজ থেকে তোমরা বেঁচে থেকো। প্রশ্ন করা হলো-হে আল্লাহর রসূল সে গুলো কি? তিনি বললেনঃ (১) আল্লাহর সাথে শারীক করা; (২) যাদু করা; (৩) আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা; (৪) ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে আত্নসাৎ করা; (৫) সুদ খাওয়া; (৬) যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পলায়ন করা এবং (৭) সাধ্বী, সরলমনা ও ইমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা।

{সহিহ মুসলিম হাদিস ১৬৩}

নিজের ইচ্ছা পূরণে কোনো ধার্মিক ব্যক্তির কবরে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ:

কবরে যাওয়াতে কোনো সমস্যা নাই যদি উদ্দেশ্য হয়:

  1. মৃত বেক্তিদের জন্য দুআ/যিয়ারত করা;
  2. জানাযাহ এর নামাজ পড়া; বা
  3. নিজেদেরকে পরকালের কথা স্মরণ করানো।

আসলে, আমাদের কবর পরিদর্শন করা উচিত, আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত হাদীসটিতে মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন:

“তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা, তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়।”

{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৫৬৯}

তবে নিম্নউল্লেখিত কারণে কবরে যাওয়া জায়েয নয় (বিদাহ):

  1. নিজেদের জন্য দুআ করার উদ্দেশ্যে; বা
  2. নামায পড়ার উদ্দেশ্যে (জানাযাহ এর নামাজ ব্যতীত), আবু হুরায়রা বর্ণিত:

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক। কারণ, তারা তাদের নবী গণের কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে।… {সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৩৯০ ও সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১০৭১}

সূরা ফাতিহা এর আয়াত ৫ থেকে শিক্ষা: ‘ইয়্যা কানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাসতা’ঈন ‘ যার অর্থ হলো – “আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি”। সুতরাং আমরা কেবল আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবো আর কারো কাছে নয় (সরাসরি বা পরোক্ষভাবে)।

এই আয়াতগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের ও আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) মাঝামাঝি কোনো মানুষকে/মৃতকে সুপারিশকারী বানানো উচিত না:

…যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন।…

{সূরা আয-যুমার আয়াত ৩}

তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কেয়ামতের দিন তারা তোমাদের শেরক অস্বীকার করবে।…

{সূরা ফাতির আয়াত ১৪}

চার: আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) নিকট সব ছেড়ে দিয়ে দুআ করা বন্ধ করা

এই ধারণাটি, ব্যক্তিগতভাবে আমারই ছিল, সঠিক জ্ঞান আসার আগে। আমি একটি ধারণা গড়ে তুলেছিলাম যে: “যেহেতু আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলাই) ভালো জানে আমার জন্য কি ভালো আর কি খারাপ, দুআ করার কোনো প্রয়োজনই নাই”

আমি মনে করতাম দুআ করলে ২টি ঝুঁকি আছে:

  1. দুআ কবুল না হলে আমি আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) থেকে আরো দূরে হয়ে যাবো;
  2. এটা আমার জন্য বা অন্য কোন ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কিন্তু, নিচের কারণগুলির কারণে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল:

  • দুআ করা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে একটি পছন্দনীয় ইবাদাত – দুআ করা বন্ধ করে দিলে আমরা এটা মিস করবো;
  • এটা আমাদের সৃষ্টিকর্তার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে;
  • আমরা নিজেদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করা শুরু করতে পারি।

আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁর বান্দাদের উৎসাহ দেয় তাঁকে ডাকার জন্য, এবং তিঁনি সাড়া  দেওয়ার গ্যারান্টী বা নিশ্চয়তা দেয়।

তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।

{সূরা গাফির আয়াত: ৬০}

অতএব, পয়েন্টগুলো হলো:

  • দুআ করা একটি ইবাদাত
  • আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁকে ডাকার জন্য আমাদের উৎসাহিত করেছে
  • তিঁনি সাড়া দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন
  • দুআ না করে আমরা যেন অহংকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না হই।

যেমন নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

দু‘আই হল ‘ইবাদাত। তারপর তিনি পাঠ করেন (অনুবাদ): “এবং তোমাদের রব বলেছেন, আমাকে তোমরা আহ্বান কর, আমি তোমাদের আহ্বানে সাড়া দিব। নিশ্চয় যে সকল লোক আমার ‘ইবাদাত করতে অহংকার করে (বিরত থাকে), শীঘ্রই তারা ভর্ৎ‍‌সনার সঙ্গে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”

{জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৭২}

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ )বলেছেন:

আল্লাহ তা‘আলার কাছে যে লোক চায় না, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর নাখোশ হন।

{জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৭৩}

এখন মনে একটি প্রশ্ন জাগে, যদি আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সাড়া দেওয়ার নিশ্চয়তাই দিয়েছেন, তাহলে যেইসব দুআ কার্যকর হয়নি সেগুলোর কি হবে। আমি পরবর্তীতে এই বিষয়ে আলোচনা করবো।

দুআ করার যথাযত নিয়মকানুন এবং আদবকায়দা

আমাদের নামাযের পরবর্তী মোনাজাত

একটি সুন্দর হাদীস দিয়ে শুরু করা যাক, ফাযালাহ্‌ ইবনু ‘উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাসজিদে বসা অবস্থায় ছিলেন। সে সময় এক লোক মাসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করল, তারপর বলল, “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি দয়া কর”। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন হে নামাযী! তুমি তাড়াহুড়া করে ফেলেছো। যখন তুমি নামায শেষ করে বসবে সে সময় শুরুতে আল্লাহ তা’আলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে এবং আমার উপর দরূদ ও সালাম প্রেরণ করবে, তারপর আল্লাহ তা’আলার নিকটে দু’আ করবে। এরপর আরেকজন লোক এসে নামায আদায় করে প্রথমে আল্লাহর তা’আলার প্রশংসা করল, তারপর নবী (সাঃ)-এর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করল। নবী (সাঃ) তাকে  বললেন, হে নামাযী! এবার দু’আ কর ক্ববূল করা হবে।

{জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৪৭৬}

এই ব্যাপারটি আমাদের জন্য একটি খুবই সাধারণ ব্যাপার। আমরা আমাদের নামায পড়া শেষ করতে না করতেই আমাদের দু-হাত তুলে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আমাদের কাঙ্খিত দুআ চাই। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই দুআ করার প্রকৃত আদবকায়দা মিস করে ফেলি। এখন এসব আদবকায়দা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

দুআ করার চারটি আদবকায়দা

দুআ করার ৪টি আদব আছে, আমাদের মধ্যে অনেকেই এই বিষয়ে জানি না, তাই আমাদের এগুলো জেনে আমাদের দুআ-গুলো আরও নিখুঁত ও গ্রহণযোগ্য করে চাওয়া উচিত।

প্রথমত: আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রশংসা দিয়ে শুরু করা

সর্বপ্রথম আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রশংসা দিয়ে আমাদের দুআ শুরু করা উচিত। আমাদের দুআ-এর সাথে সম্পর্কিত তাঁর প্রাসঙ্গিক নাম ব্যবহার করা যেতে পারে, উদাহরণস্বরূপ ক্ষমা চাওয়ার এবং ইসতিগফার করার আগে আল-গাফূর (ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী) ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা সূরা ফাতিহা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি যেখানে আমরা প্রথমত নিম্নোক্তভাবে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রশংসা দিয়ে শুরু করি এবং পরবর্তী অংশে নির্দেশনা ও সহায়তা কামনা করি:

  • যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার
  • যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
  • যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
  • যিনি বিচার দিনের মালিক।

প্রশংসা করার পর আমরা আমাদের প্রকৃত দুআ চাই

  • আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
  • আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,
  • সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ,
  • তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: মুহাম্মদ(সাঃ) কে সালাম পাঠানো

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রশংসা করার ঠিক পরেই আমাদেরকে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর দরূদ, সালাম ও শ্রদ্ধা প্রেরণ করে তারপর আমাদের প্রকৃত দুআ চাইতে হবে।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

তিনি বলেন, দু’আ আকাশ যমিনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, তোমার রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি যতক্ষণ তুমি দুরূদ পাঠ না কর ততক্ষণ তার কিছুই উপরে উঠে না।

{জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৪৮৬}

তৃতীয়ত: মনোযোগী হৃদয়ে দুআ করা

আমাদের মনোযোগী হৃদয়ে দুআ করা উচিত জেনে ও বুঝে যে আসলে আমরা কি চাচ্ছি। আমাদের অধিকাংশ এই সমস্যার সম্মুখীন হই যখন আমরা অর্থ না জেনে মুখস্ত আরবি ভাষায় দুআ করি।

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আরবি ভাষায় দু’আ করা বাধ্যতামূলক করেননি। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বিশ্বজগতের পালনকর্তা, তিঁনি সব ভাষাই বোঝেন। তাই আমরা নিজের ভাষায় দু’আ করতে পারি যেন আমরা আমাদের প্রার্থনায় জেনে ও বুঝে মনোযোগ দিতে পারি।

সর্বশেষে: আমাদের দুআ-তে পরকালকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত

আমাদের মধ্যে অনেকেরই একটি প্রবণতা আছে যে আমরা শুধুমাত্র আমাদের পার্থিব জীবন নিয়েই দুআ করি এবং পরকালের কথা ভূলে যাই। মুসলমান হিসেবে, আমাদের দুআ-এর মধ্যে ইহকাল ও পরকালক দুইটাই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

…অনেকে তো বলে যে পরওয়াদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতে দান কর। অথচ তার জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই। আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে-হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। এদেরই জন্য অংশ রয়েছে নিজেদের উপার্জিত সম্পদের। আর আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।

{সূরা আল-বাকারা আয়াত ২০০-২}

যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্যে সেই ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে তার কিছু দিয়ে দেই এবং পরকালে তার কোন অংশ থাকবে না।

{সূরা আশ-শূরা আয়াত ২0}

এই আয়াতসমূহে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন যেন আমরা আমাদের দুআ-তে এই জগতের জন্য কল্যাণ কামনা করার সাথে সাথে আখেরাতের কথা বাদ না দেই, এ ব্যাপারটি বাদ পরে গেলে আমাদের পরকালে বিপদে পরার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। তাই, আমরা আমাদের প্রতিটি দুআ-তে তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি এবং আযাব ও জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাইতে পারি।

কিছু বিবেচ্য বিষয়

তাওহীদে বিশ্বাস রাখা

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে আমরা শুধুমাত্র আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) নিকট দুআ করি এবং তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। তিঁনি ছাড়া আর কেউই উপাসনা করা বা সাহায্য চাওয়ার যোগ্য নয়। সাহায্য আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছ থেকেই কোনো এক উৎসের মাধ্যমে আসে।

আমাদেরকেও চেষ্টা করতে হবে (অর্জন = মানুষের চেষ্টা + খোদার সাহায্য)

আমাদেরকে আমাদের কাঙ্খিত চাহিদা পূরণে দুআ চাওয়ার সাথে সাথে নিজেদেরকেও তা অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে।

আমরা জনপ্রিয় হাদিস যেখানে একটি বেদুইন বিভ্রান্ত ছিল যে সে তার উট-টিকে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রতি নির্ভর করে ছেড়ে রাখবে কিনা। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে বললেন, “প্রথমে তোমার উট বাঁধ তারপর আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) উপর ভরসা রাখো” (আত-তিরমিযী)

এমনকি, নবীদের কাহিনী এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কাহিনী থেকেও বোঝা যায় যে, উনারা প্রথমে নিজেদের দায়িত্বের কাজটুকু সম্পূর্ণ করেছিলেন তারপর আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) পক্ষ থেকে সাহায্য এসেছিল। উদাহরণস্বরূপ:

  • ইসমাইল আঃ সাঃ প্রায় তার সন্তান (ইব্রাহিম আঃ সাঃ) কে কুরবানী করেই ফেলেছিলো – আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সন্তানটিকে একটি পশু দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেছিল।
  • মুহাম্মদ (সাঃ) তার ছোট সেনাবাহিনীর সত্ত্বেও বদর যুদ্ধে গিয়েছিলেন – আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সাহায্য করার জন্য ফেরেস্তা পাঠিয়েছিলেন  যা প্রকৃতপক্ষে  যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে এসেছে।

“আপনি যদি চান” কথাটি দুআ-তে উল্লেখ না করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কেউ এভাবে দু’আ করো না, হে আল্লাহ্! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি চাইলে আমার প্রতি রহম কর। তুমি চাইলে আমাকে রিয্‌ক দাও। বরং দু’আ প্রার্থী খুবই দৃঢ়তার সঙ্গে দু’আ করবে কেননা, তিনি যা চান তাই করেন। তাকে বাধ্য করার কেউ নেই। {সহীহ আল-বুখারী হাদিস ৭৪৭৭}

অধৈর্য না হওয়া

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো দু‘আ তখনই গৃহীত হয় যখন সে তাড়াহুড়া না করে। (তাড়াতাড়ি করে দু‘আ করার পর) সে তো বলতে থাকে, আমি দু‘আ করলাম; অথচ তিনি আমার দু‘আ গৃহীত হল না। {সহীহ মুসলিম বই ২৫ হাদিস ৬৮২৭}

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের যে কোন লোকের দুআ’ই কবুল হয়ে থাকে, যাবত না সে তাড়াহুড়া করে। বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকে তাড়াহুড়া কিভাবে করে? তিনি বলেনঃ দুআ’কারী বলে, আমি আল্লাহ্‌র নিকট দুআ’ করলাম কিন্তু আল্লাহ্‌ আমার দুআ’ কবুল করেননি। {সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস ৩৮৫৩}

সুতরাং কবুল হয় যখন: কোনো পাপ জড়িত না থাকে + ধৈর্য ধারণ করে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কোন দু’আ করলে তার দু’আ ক্ববূল হয়। হয়তোবা সে দুনিয়াতেই তার ফল পেয়ে যায় অথবা তা তার আখিরাতের পাথেয় হিসেবে জমা রাখা হয় অথবা তার দু’আর সম-পরিমাণ তার গুনাহ মাফ করা হয়, যতক্ষণ না সে পাপ কাজের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দুআ করে অথবা দুআ ক্ববূলের জন্য তাড়াতাড়ি করে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াতাড়ি করে কিভাবে? তিনি বলেনঃ সে বলে, আমি আমার আল্লাহর নিকটে দু’আ করেছিলাম, কিন্তু আমার দু’আ তিনি ক্ববূল করেননি। “{জামে’ আত-তিরমিজি হাদীস ৩৬০৪/৩}

দুআ করার পরিণতি

সর্বশেষ আলোচিত হাদীসটি আমাদের দুআ-এর সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেয়, যা নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:

যে দুআ-গুলো পৃথিবীতেই বাস্তবায়িত হয়

আপনার দুআ-টি পৃথিবীতেই কার্যকর হতে পারে, কিন্তু এখানে খেয়াল রাখা দরকার যে, আপনার প্রত্যাশা তৎক্ষণাৎ অবিলম্বেও পূর্ণ হয়ে যেতে পারে বা এটি সময় নিতে পারে যা বহুবছর পর্যন্ত পার করে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইয়াকুব আঃ সাঃ বহু বছর (প্রায় ৪০ বছর) অপেক্ষা করার পরে তার দুআ কার্যকর হয়েছিল এবং তিনি তার ছেলে ইউসুফ আঃ সাঃ কে ফিরে পেয়েছিলেন।

যে দুআ-গুলো এই পৃথিবীতে বাস্তবায়িত হতে দেখা যায় না

একটি দুআ কার্যকর না হওয়ার পিছে কারণ হতে পারে:

  • এটি আমাদের পাপ-এর কারণ হতে পারে
  • এটি আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
  • এটি আমাদের পরীক্ষার একটি অংশ হতে পারে যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।

কিন্তু এটা আমাদের আখেরাতের জন্য সোয়াব হিসেবে (গ্যারান্টিসহ) সংরক্ষিত থাকবে

আমরা সর্বদাই বিজয়ী পরিস্থিতিতে থাকি

তাই আমাদের কখনোই দুআ করা বন্ধ করা উচিত না – যেই দুআ পৃথিবীতে বাস্তবায়িত হতে দেখা যায় না, সেগুলোই সোয়াব হিসেবে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং, আমরা সবসময়ই একটি জয়যুক্ত অবস্থানে থাকি। এই ধরনের সোয়াব এসব দুআ না করে অর্জন করা কখনোই সম্ভব না।

দুআ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) অনেক পছন্দনীয় একটি এবাদত, কারণ এগুলোর দ্বারা আমরা নিজেদের অক্ষমতা ও তাঁর কাছে নম্রতা শিকার করি এবং সবকিছুর উপর তাঁর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করি।

আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সকল জ্ঞানের অধিকারী

ভূমিকা

আমার কাছে এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় বলে মনে হয়, কারণ এর সাথে অনেক গুলো ব্যাপার জড়িত। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্যা গুলো নিম্নরূপ:

  1. যখন কারো দুআ কবুল বা সঠিক অর্থে বাস্তবায়িত হয় না তখন নিম্নে উল্লেখিত ব্যাপার ঘটতে পারে:
    1. কিছু মানুষের মনে একটা ধারণা জন্মাতে পারে যে – “আমাকে মনে হয় কেউ শুনতেই পারছে না?” এভাবে খোদার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ আসে। আমাদের প্রতি তাঁর উদ্বেগ এর বেপারটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
    2. কেউ কেউ মনে করে, যেহেতু  আমাদের দোয়া কবুল হয়নি – আমার উপর অবিচার করা হয়েছে – তাই আমি আমার দ্বীন/ধর্মের উপর সুবিচার করবো না / মেনে চলবো না” এজন্য তারা:
      1. প্রার্থনা/নামাজ বন্ধ করে দেয় এবং আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়;
      2. ইসলাম থেকে অনেক দূরে চলে যায় এবং তাদের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতা গুলো অবমাননা শুরু করে  
    3. কারো আবার মনে হতে পারে, “আমি অনেক অপবিত্র/পাপী তাই আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে দুআ চাওয়ার যোগ্য নই” তাই তারা:
      1. আশা হারিয়ে ফেলে এবং দুআ  করাই বন্ধ করে দেয়;
      2. অন্য কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোন ব্যক্তির কবরে গিয়ে তাদের ইচ্ছা পূর্ণ করার চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেন – এভাবে শিরক করার ফাঁদে পড়ে যায়।
    4. কারো আবার এমন ধারণা গড়ে উঠতে পারে (যা আমার নিজেরই ছিল) যে, “আমি আমার সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে ছেড়ে দিলাম, যেহেতু তিঁনি ভালো জানেন আমার জন্য কি ভালো/মন্দ”, এভাবে দুআ করাই বন্ধ করে দেয়।
  2. অধিকাংশ মানুষই জানেনা কিভাবে দুআ করতে হয় – দুআ করার নিয়মকানুন এবং আদবকায়দা
  3. বেশিরভাগ মানুষ এটাও জানেনা দুআ করার সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে পারে।

আমি পর্যায়ক্রমে উপরোক্ত বিষয়গুলোর উপর আলোচনা করবো।

দুআ শব্দটির প্রকৃত অর্থ

আমরা সকলেই জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ এবং অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকি। আসুন সর্বপ্রথম দুআ শব্দটির বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করি। দুআ করার উদ্দেশ্য আসলে কি? আমরা বেশিরভাগই দুআ-এর সাথে তলব-কে গুলিয়ে ফেলি। আরবীতে তালব শব্দের অর্থ হচ্ছে কিছু চাওয়া। দুআ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ডাকা বা আহ্বান করা। আমরা যখন আল্লাহর কাছে দুআ করি- মাঝে মাঝে সেই দুআ মধ্যেই আমরা কিছু চাই বা আল্লাহর কাছে অনুরোধ করি। দুআ এর মধ্যে আমরা আল্লহর কাছে কি চাচ্ছি সেটার থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো যে – আমরা বিনীত ভাবে আল্লাহ সুবানু ওয়া তালার সাথে যোগাযোগ করছি – এটিই দুআ করার চূড়ান্ত লক্ষ্য। আমাদের দুআ হল এমন একটি মাধ্যম যার সাহায্যে আমরা আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করি, এটি এমন কোনো মাধ্যম নয় যার দ্বারা এই পৃথিবীকে স্বর্গে রূপান্তরিত করা হয়। আমরা সবাই জানি যে দাওয়াত মানে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো – দুআ এবং দাওয়াত একই আরবি রুট থেকে এসেছে যা আমাদেরকে দুআ শব্দটির প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে কিছুটা সাহায্য করতে পারে।

নবীদের ঘটনাগুলিতে আমরা দেখেছি যে তাদের দুআ কিভাবে কবুল করা হয়েছিল – তাদের দুআ করার ঠিক পরপরই বিশাল কিছু পরিবর্তন ঘটেছিল। যেন সেই কাহিনীগুলিতে সেই দুআগুলো ব্যতীত সেই বিশাল পরিবর্তনগুলো কখনোই ঘটতো না – আর সেই দুআগুলো এক একটি ব্রিজের মতো ঘটনাগুলির মাঝখানে অবস্থিত হয়েছে।

যখন দুআ কবুল হয় না

চারটি সম্ভাব্য ফলাফল

এক: খোদার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ আসে বা আমাদের প্রতি তাঁর উদ্বেগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়

মনে কিছু প্রশ্ন জাগতে পারে যেমন:
  • “আদৌ কি কোন খোদা কি আছেন?”
  • যদি আছেন – “আমি কি সঠিক খোদা-কে ডাকছি”?
  • ” আমাকে কি কেউ শুনতে পারছে না?”
  • “আমার খোদার কি আমাকে নিয়ে কোনো উদ্বেগ নাই?”
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর হল:
  • হ্যা, খোদা আছেন (এতে কোনোই সন্দেহ নেই)। কোনো স্রষ্টা, পালনকর্তা বা প্রতিপালক ছাড়া এরকম একটি নিখুঁত বিশ্বের অস্তিত্ব সম্ভব নয়।
  • আপনি সঠিক খোদা কে ডাকছেন যদি তিঁনি ইখ্লাস এর ৪টি শর্ত পূরণ করছে:
    • তিঁনি এক; তিঁনি চিরন্তন; তাঁর কোন পিতা/মাতা/সন্তান নাই; এবং তাঁর মত আর কেউ নাই।
  • আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সবসময় আমাদের কাছে আছেন এবং আমাদেরকে শুনতে পারছেন।
  • আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদেরকে সবচাইতে বেশী ভালোবাসেন, তাঁর মতো আমাদেরকে আর কেউ ভালোবাসতে পারে না, তাই তাঁর আমাদেরকে নিয়ে উদ্বিগ্ন।
আসুন এই প্রথম দুইটি উত্তরের বিশ্লেষণ করা যাক:

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সবসময় আমাদের কাছেই আছেন এবং তৎক্ষণাৎ আমাদের দুআ-এ সাড়া দেয়। কিন্তু আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে যেমন, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) অনুগত থাকা এবং তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপনা করা:

আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।

{সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৬}

নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী।

{সূরা সাবা, আয়াত ৫০}

এমনকি মুহাম্মদ (সাঃ) নিম্ন-লিখিত হাদীসে নিশ্চিত করেছেন যে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সবসময় আমাদেরকে শুনতে পাচ্ছে:

আল-আশ’আরী (রাঃ) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন কোন উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতাম। আর আমাদের আওয়াজ অতি উঁচু হয়ে যেত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।

{সহীহ আল-বুখারী, হাদীস: ২৯৯২}

আবূ মুসা আরো রিপোর্ট করেন যে, নবী (সাঃ) বলেছেন: “ও মুসা, আমি কি তোমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিব যা বেহেস্তের একটি গুপ্তধন: লা হাওলা ওয়া-লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্ (আল্লাহর পক্ষ ছাড়া অন্য কোন শক্তি নাই)

উপরন্তুত, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদেরকে নিয়ে সবার চাইতে বেশি উদ্বিগ্ন এবং আমরা যখনি তাঁকে ডাকি তিঁনি আমাদের সাথেই আছেন। আবু হুরায়রা উল্লেখ করেছেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেছেন “আমি আমার বান্দার নিকট তার ধারণা অনুযায়ী থাকি। যখন সে আমার স্মরণ করে তখন আমি তার সাথী হয়ে যাই। যখন সে একাকী স্মরণ করে তখন আমি একাকী তাকে স্মরণ করি। যখন সে কোন সভায় স্মরণ করে তখন আমি তার চেয়েও উত্তম সভায় স্মরণ করি। যদি সে আমার প্রতি এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে দু’হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার প্রতি পায়ে হেঁটে আসে আমি তার প্রতি দৌড়ে আসি।

{সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৭২৫}

দুই: আমার দুআ কবুল হয় না, তাই আমি আমার ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাবো না

যখন বার বার চাওয়ার পরও আমরা আমাদের আকাঙ্খিত কিছু না পাই, তখন আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করি, যে আমাদের উপর অবিচার করা হয়েছে। এরকম কয়েক বার চাওয়ার পর, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ ধৈর্য হারিয়ে ফেলি এবং ইসলামের পথ থেকে দূরে চলে যাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, আমরা নামায পড়া বন্ধ করে দেই (যা মানবতার জন্য শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ) করা বন্ধ এবং ধীরে ধীরে আমরা আমাদের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতা উপেক্ষা করা শুরু করি।

এ প্রসঙ্গে আমি কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করি:

  • আমাদেরকে দুআ করার যথাযত আদবকায়দা শিখতে হবে, যা অবলম্বন করলে আমাদের দুআ কবুল হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাবে – নিম্নে আলোচিত।
  • আমাদের জীবনের প্রতিটি বিপদ – হয় একটি পরীক্ষা বা শাস্তি। এ কথাটি মনে রেখে আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে ও আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে দুআ চাইতে হবে।
  • কখনও কখনও আমরা যা দুআ করি তা আমাদের জন্য উপকারী হয় না বা আরো ক্ষতির কারণ হয়।
  • সর্বশেষে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) সবসময় মনোযোগ দিয়ে আমাদেরকে শুনছে এবং আমাদের কোনো দুআই আসলে নষ্ট/বিফল হয় না – আমাদেরকে দুআ করার সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে পারে তা নিম্নে আলোচিত।

দয়া করে মনে রাখবেন যে, এটি শয়তানের একটি চালাকি আমাদেরকে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) থেকে দূরে করে দেয়ার জন্য। শয়তান আমাদের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় যে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের ব্যাপারে উদাসীন তাই আমাদের দুআ কবুল করছেন না, তাই আমাদেরও তাঁর নির্ধারিত সরল পথ অনুসরণ করার দরকার নাই। এভাবে আমাদের ইমানের একটা বিশাল পরীক্ষা নেয়া হয় – যে আমরা কি শয়তানের এই খারাপ প্ররোচনা  অনুসরণ  করবো নাকি ধৈর্যশীল হয়ে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) পথ আঁকড়ে ধরে রাখবো। অন্তত এই সরল পথটিতে নিশ্চিত সাফল্য রয়েছে যা অন্য কোনো পথে নেই।

পৃথিবীতে আমরা যতই ধন-সম্পত্তি পেয়ে যাই না কেন, মানুষের মন কখনো শান্তি পায় না এবং আমাদের চাহিদা ও আকাঙ্খা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটি একটি সাধারণ মানব প্রকৃতি যাতে দোষের কিছুই নাই, আমাদেরকে আসলে এমনভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে যে আমরা প্রকৃত শান্তি শুধুমাত্র আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) স্মরণেই পাই। এবং আসল সার্থকতা হলো আমাদের সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করে জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্য-জান্নাত এ পৌঁছে যাওয়া।

…জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির(স্মরণ) দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়

{সূরা আর-রাদ, আয়াত ২৮}

তিন: আমি অনেক পাপী তাই আমি দুআ করার জন্য অযোগ্য

কারো আবার এমন মনে হতে পারে, যে আমরা এতই পাপী এবং আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রতি এতই অবাধ্য যে, আমরা আর কখনোই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) মুখোমুখি হয়ে কিছু চাইতে পারবো না। তারা মনে করে যে খোদা (তা’আলার) সাথে তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছে যা আর কখনো পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হবে না। এমন ধারণা, সেই ব্যক্তিকে নিম্ন উল্লেখিত পরিস্থিতির শিকার করতে পারে :

  • আশাহীন হয়ে, দুয়া করা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে পারে।
  • তাদের সমস্যা সংশোধনে বা আকাঙ্খা পূরণে, বিকল্প সমাধান অবলম্বন করার চেষ্টা করতে পারে যেমন – কোনো ধার্মিক লোকের কবরের গিয়ে বা কোনো জাদুকর এর কাছে গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারে – এভাবে শিরক করার ফাঁদে পড়তে পারে।
প্রথম পরিস্থিতি: আশাহীন হয়ে দুআ করা বন্ধ করা

নিম্ন উল্লেখিত আয়াতটিতে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সরাসরি তাঁর অবাধ্য বান্দাদেরকে (ধার্মিক/নিষ্পাপ মানুষ নয়) উল্লেখ করে বলেছেন যেন তারা কোনোভাবেই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) রহমতের আশা ত্যাগ না করে; তারা যতই পাপ-ই করুক না কেন তাদের উপর আযাব আসার আগেই তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) পথে ফিরে আসতে পারে:

বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ (পাপ করে গিয়েছ) তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও তোমাদের কাছে আযাব আসার পূর্বে। এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না;

{সূরা আয-যুমার আয়াত ৫৩-৫৪}

বস্তুত, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) রহমত ও ক্ষমা এর আশা ছেড়ে দেওয়া তাঁর উপর অবিশ্বাস করার সমতূল্য ধরা হয়। তিনি রাহমান-উর-রহিম, এবং আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।

…নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায়, ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না।

{সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৭}

আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের ব্যাপারে সবকিছুই জানেন, সুতরাং আমাদের কোনো ক্ষুদ্রতম পাপও পরম দয়ালু আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে গোপন নয়। তাই আমাদের তাঁর মুখোমুখি হয়ে তাঁর কাছে দুয়া প্রার্থনা করতে লজ্জা বোধ করার কিছুই নাই।

ইসলাম দাবি করে না, যে আমাদেরকে তৎক্ষণাৎ একজন ধর্মপ্রাণ/ধার্মিক ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হতে হবে, এটি আমাদেরকে একটি সরল পথে আমন্ত্রণ জানায়, যা আমাদেরকে ধীরে ধীরে এবং যতটা সম্ভব অনুসরণ করে যেতে হবে। সুতরাং, দুআ করার আগে, ইসলাম ধর্মে আমাদের মর্যাদা বিচার করা উচিত নয়।

দ্বিতীয় পরিস্থিতি: বিকল্প বেবস্থা অবলম্বন

ইসলামে অবশ্য অন্য মানুষের কাছে নিজেদের জন্য দুআ চাওয়ার অনুমোদন আছে। তবে, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সবসময় আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) সাথে সরাসরি সংযোগ আছে এবং যে কোন ব্যাপারে আমরা তাঁর কাছে সবসময় দুআ চাইতে পারি। কিন্তু, সরাসরি আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে দুআ না চেয়ে বিকল্প পথ অবলম্বনে ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট অপরাধ (শিরক) সংগঠনের একটি বিশাল ঝুঁকি রয়েছে।

কালো জাদুকরের কাছে যাওয়া বিপজ্জনক

এই আয়াতটিতে কালো জাদুর বেখ্যা দেয়া হয়:

… শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।

{সূরা আল-বাকারাহ্ আয়াত ১০২}

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

ধ্বংসকারী সাতটি কাজ থেকে তোমরা বেঁচে থেকো। প্রশ্ন করা হলো-হে আল্লাহর রসূল সে গুলো কি? তিনি বললেনঃ (১) আল্লাহর সাথে শারীক করা; (২) যাদু করা; (৩) আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা; (৪) ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে আত্নসাৎ করা; (৫) সুদ খাওয়া; (৬) যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পলায়ন করা এবং (৭) সাধ্বী, সরলমনা ও ইমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা।

{সহিহ মুসলিম হাদিস ১৬৩}

নিজের ইচ্ছা পূরণে কোনো ধার্মিক ব্যক্তির কবরে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ:

কবরে যাওয়াতে কোনো সমস্যা নাই যদি উদ্দেশ্য হয়:

  1. মৃত বেক্তিদের জন্য দুআ/যিয়ারত করা;
  2. জানাযাহ এর নামাজ পড়া; বা
  3. নিজেদেরকে পরকালের কথা স্মরণ করানো।

আসলে, আমাদের কবর পরিদর্শন করা উচিত, আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত হাদীসটিতে মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন:

“তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা, তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়।”

{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৫৬৯}

তবে নিম্নউল্লেখিত কারণে কবরে যাওয়া জায়েয নয় (বিদাহ):

  1. নিজেদের জন্য দুআ করার উদ্দেশ্যে; বা
  2. নামায পড়ার উদ্দেশ্যে (জানাযাহ এর নামাজ ব্যতীত), আবু হুরায়রা বর্ণিত:

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক। কারণ, তারা তাদের নবী গণের কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে।… {সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৩৯০ ও সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১০৭১}

সূরা ফাতিহা এর আয়াত ৫ থেকে শিক্ষা: ‘ইয়্যা কানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাসতা’ঈন ‘ যার অর্থ হলো – “আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি”। সুতরাং আমরা কেবল আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবো আর কারো কাছে নয় (সরাসরি বা পরোক্ষভাবে)।

এই আয়াতগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের ও আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) মাঝামাঝি কোনো মানুষকে/মৃতকে সুপারিশকারী বানানো উচিত না:

…যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন।…

{সূরা আয-যুমার আয়াত ৩}

তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কেয়ামতের দিন তারা তোমাদের শেরক অস্বীকার করবে।…

{সূরা ফাতির আয়াত ১৪}

চার: আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) নিকট সব ছেড়ে দিয়ে দুআ করা বন্ধ করা

এই ধারণাটি, ব্যক্তিগতভাবে আমারই ছিল, সঠিক জ্ঞান আসার আগে। আমি একটি ধারণা গড়ে তুলেছিলাম যে: “যেহেতু আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলাই) ভালো জানে আমার জন্য কি ভালো আর কি খারাপ, দুআ করার কোনো প্রয়োজনই নাই”

আমি মনে করতাম দুআ করলে ২টি ঝুঁকি আছে:

  1. দুআ কবুল না হলে আমি আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) থেকে আরো দূরে হয়ে যাবো;
  2. এটা আমার জন্য বা অন্য কোন ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কিন্তু, নিচের কারণগুলির কারণে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল:

  • দুআ করা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে একটি পছন্দনীয় ইবাদাত – দুআ করা বন্ধ করে দিলে আমরা এটা মিস করবো;
  • এটা আমাদের সৃষ্টিকর্তার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে;
  • আমরা নিজেদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করা শুরু করতে পারি।

আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁর বান্দাদের উৎসাহ দেয় তাঁকে ডাকার জন্য, এবং তিঁনি সাড়া  দেওয়ার গ্যারান্টী বা নিশ্চয়তা দেয়।

তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।

{সূরা গাফির আয়াত: ৬০}

অতএব, পয়েন্টগুলো হলো:

  • দুআ করা একটি ইবাদাত
  • আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁকে ডাকার জন্য আমাদের উৎসাহিত করেছে
  • তিঁনি সাড়া দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন
  • দুআ না করে আমরা যেন অহংকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না হই।

যেমন নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

দু‘আই হল ‘ইবাদাত। তারপর তিনি পাঠ করেন (অনুবাদ): “এবং তোমাদের রব বলেছেন, আমাকে তোমরা আহ্বান কর, আমি তোমাদের আহ্বানে সাড়া দিব। নিশ্চয় যে সকল লোক আমার ‘ইবাদাত করতে অহংকার করে (বিরত থাকে), শীঘ্রই তারা ভর্ৎ‍‌সনার সঙ্গে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”

{জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৭২}

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ )বলেছেন:

আল্লাহ তা‘আলার কাছে যে লোক চায় না, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর নাখোশ হন।

{জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৭৩}

এখন মনে একটি প্রশ্ন জাগে, যদি আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সাড়া দেওয়ার নিশ্চয়তাই দিয়েছেন, তাহলে যেইসব দুআ কার্যকর হয়নি সেগুলোর কি হবে। আমি পরবর্তীতে এই বিষয়ে আলোচনা করবো।

দুআ করার যথাযত নিয়মকানুন এবং আদবকায়দা

আমাদের নামাযের পরবর্তী মোনাজাত

একটি সুন্দর হাদীস দিয়ে শুরু করা যাক, ফাযালাহ্‌ ইবনু ‘উবাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাসজিদে বসা অবস্থায় ছিলেন। সে সময় এক লোক মাসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করল, তারপর বলল, “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি দয়া কর”। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন হে নামাযী! তুমি তাড়াহুড়া করে ফেলেছো। যখন তুমি নামায শেষ করে বসবে সে সময় শুরুতে আল্লাহ তা’আলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে এবং আমার উপর দরূদ ও সালাম প্রেরণ করবে, তারপর আল্লাহ তা’আলার নিকটে দু’আ করবে। এরপর আরেকজন লোক এসে নামায আদায় করে প্রথমে আল্লাহর তা’আলার প্রশংসা করল, তারপর নবী (সাঃ)-এর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করল। নবী (সাঃ) তাকে  বললেন, হে নামাযী! এবার দু’আ কর ক্ববূল করা হবে।

{জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৪৭৬}

এই ব্যাপারটি আমাদের জন্য একটি খুবই সাধারণ ব্যাপার। আমরা আমাদের নামায পড়া শেষ করতে না করতেই আমাদের দু-হাত তুলে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আমাদের কাঙ্খিত দুআ চাই। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই দুআ করার প্রকৃত আদবকায়দা মিস করে ফেলি। এখন এসব আদবকায়দা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

দুআ করার চারটি আদবকায়দা

দুআ করার ৪টি আদব আছে, আমাদের মধ্যে অনেকেই এই বিষয়ে জানি না, তাই আমাদের এগুলো জেনে আমাদের দুআ-গুলো আরও নিখুঁত ও গ্রহণযোগ্য করে চাওয়া উচিত।

প্রথমত: আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রশংসা দিয়ে শুরু করা

সর্বপ্রথম আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রশংসা দিয়ে আমাদের দুআ শুরু করা উচিত। আমাদের দুআ-এর সাথে সম্পর্কিত তাঁর প্রাসঙ্গিক নাম ব্যবহার করা যেতে পারে, উদাহরণস্বরূপ ক্ষমা চাওয়ার এবং ইসতিগফার করার আগে আল-গাফূর (ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী) ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা সূরা ফাতিহা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি যেখানে আমরা প্রথমত নিম্নোক্তভাবে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রশংসা দিয়ে শুরু করি এবং পরবর্তী অংশে নির্দেশনা ও সহায়তা কামনা করি:

  • যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার
  • যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
  • যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
  • যিনি বিচার দিনের মালিক।

প্রশংসা করার পর আমরা আমাদের প্রকৃত দুআ চাই

  • আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
  • আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,
  • সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ,
  • তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: মুহাম্মদ(সাঃ) কে সালাম পাঠানো

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রশংসা করার ঠিক পরেই আমাদেরকে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর দরূদ, সালাম ও শ্রদ্ধা প্রেরণ করে তারপর আমাদের প্রকৃত দুআ চাইতে হবে।

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত:

তিনি বলেন, দু’আ আকাশ যমিনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, তোমার রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি যতক্ষণ তুমি দুরূদ পাঠ না কর ততক্ষণ তার কিছুই উপরে উঠে না।

{জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৪৮৬}

তৃতীয়ত: মনোযোগী হৃদয়ে দুআ করা

আমাদের মনোযোগী হৃদয়ে দুআ করা উচিত জেনে ও বুঝে যে আসলে আমরা কি চাচ্ছি। আমাদের অধিকাংশ এই সমস্যার সম্মুখীন হই যখন আমরা অর্থ না জেনে মুখস্ত আরবি ভাষায় দুআ করি।

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আরবি ভাষায় দু’আ করা বাধ্যতামূলক করেননি। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বিশ্বজগতের পালনকর্তা, তিঁনি সব ভাষাই বোঝেন। তাই আমরা নিজের ভাষায় দু’আ করতে পারি যেন আমরা আমাদের প্রার্থনায় জেনে ও বুঝে মনোযোগ দিতে পারি।

সর্বশেষে: আমাদের দুআ-তে পরকালকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত

আমাদের মধ্যে অনেকেরই একটি প্রবণতা আছে যে আমরা শুধুমাত্র আমাদের পার্থিব জীবন নিয়েই দুআ করি এবং পরকালের কথা ভূলে যাই। মুসলমান হিসেবে, আমাদের দুআ-এর মধ্যে ইহকাল ও পরকালক দুইটাই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

…অনেকে তো বলে যে পরওয়াদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতে দান কর। অথচ তার জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই। আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে-হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। এদেরই জন্য অংশ রয়েছে নিজেদের উপার্জিত সম্পদের। আর আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।

{সূরা আল-বাকারা আয়াত ২০০-২}

যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্যে সেই ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে তার কিছু দিয়ে দেই এবং পরকালে তার কোন অংশ থাকবে না।

{সূরা আশ-শূরা আয়াত ২0}

এই আয়াতসমূহে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন যেন আমরা আমাদের দুআ-তে এই জগতের জন্য কল্যাণ কামনা করার সাথে সাথে আখেরাতের কথা বাদ না দেই, এ ব্যাপারটি বাদ পরে গেলে আমাদের পরকালে বিপদে পরার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। তাই, আমরা আমাদের প্রতিটি দুআ-তে তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি এবং আযাব ও জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাইতে পারি।

কিছু বিবেচ্য বিষয়

তাওহীদে বিশ্বাস রাখা

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে আমরা শুধুমাত্র আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) নিকট দুআ করি এবং তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। তিঁনি ছাড়া আর কেউই উপাসনা করা বা সাহায্য চাওয়ার যোগ্য নয়। সাহায্য আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছ থেকেই কোনো এক উৎসের মাধ্যমে আসে।

আমাদেরকেও চেষ্টা করতে হবে (অর্জন = মানুষের চেষ্টা + খোদার সাহায্য)

আমাদেরকে আমাদের কাঙ্খিত চাহিদা পূরণে দুআ চাওয়ার সাথে সাথে নিজেদেরকেও তা অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে।

আমরা জনপ্রিয় হাদিস যেখানে একটি বেদুইন বিভ্রান্ত ছিল যে সে তার উট-টিকে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) প্রতি নির্ভর করে ছেড়ে রাখবে কিনা। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে বললেন, “প্রথমে তোমার উট বাঁধ তারপর আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) উপর ভরসা রাখো” (আত-তিরমিযী)

এমনকি, নবীদের কাহিনী এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কাহিনী থেকেও বোঝা যায় যে, উনারা প্রথমে নিজেদের দায়িত্বের কাজটুকু সম্পূর্ণ করেছিলেন তারপর আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) পক্ষ থেকে সাহায্য এসেছিল। উদাহরণস্বরূপ:

  • ইসমাইল আঃ সাঃ প্রায় তার সন্তান (ইব্রাহিম আঃ সাঃ) কে কুরবানী করেই ফেলেছিলো – আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সন্তানটিকে একটি পশু দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেছিল।
  • মুহাম্মদ (সাঃ) তার ছোট সেনাবাহিনীর সত্ত্বেও বদর যুদ্ধে গিয়েছিলেন – আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সাহায্য করার জন্য ফেরেস্তা পাঠিয়েছিলেন  যা প্রকৃতপক্ষে  যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে এসেছে।

“আপনি যদি চান” কথাটি দুআ-তে উল্লেখ না করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কেউ এভাবে দু’আ করো না, হে আল্লাহ্! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি চাইলে আমার প্রতি রহম কর। তুমি চাইলে আমাকে রিয্‌ক দাও। বরং দু’আ প্রার্থী খুবই দৃঢ়তার সঙ্গে দু’আ করবে কেননা, তিনি যা চান তাই করেন। তাকে বাধ্য করার কেউ নেই। {সহীহ আল-বুখারী হাদিস ৭৪৭৭}

অধৈর্য না হওয়া

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো দু‘আ তখনই গৃহীত হয় যখন সে তাড়াহুড়া না করে। (তাড়াতাড়ি করে দু‘আ করার পর) সে তো বলতে থাকে, আমি দু‘আ করলাম; অথচ তিনি আমার দু‘আ গৃহীত হল না। {সহীহ মুসলিম বই ২৫ হাদিস ৬৮২৭}

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের যে কোন লোকের দুআ’ই কবুল হয়ে থাকে, যাবত না সে তাড়াহুড়া করে। বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকে তাড়াহুড়া কিভাবে করে? তিনি বলেনঃ দুআ’কারী বলে, আমি আল্লাহ্‌র নিকট দুআ’ করলাম কিন্তু আল্লাহ্‌ আমার দুআ’ কবুল করেননি। {সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস ৩৮৫৩}

সুতরাং কবুল হয় যখন: কোনো পাপ জড়িত না থাকে + ধৈর্য ধারণ করে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কোন দু’আ করলে তার দু’আ ক্ববূল হয়। হয়তোবা সে দুনিয়াতেই তার ফল পেয়ে যায় অথবা তা তার আখিরাতের পাথেয় হিসেবে জমা রাখা হয় অথবা তার দু’আর সম-পরিমাণ তার গুনাহ মাফ করা হয়, যতক্ষণ না সে পাপ কাজের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দুআ করে অথবা দুআ ক্ববূলের জন্য তাড়াতাড়ি করে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াতাড়ি করে কিভাবে? তিনি বলেনঃ সে বলে, আমি আমার আল্লাহর নিকটে দু’আ করেছিলাম, কিন্তু আমার দু’আ তিনি ক্ববূল করেননি। “{জামে’ আত-তিরমিজি হাদীস ৩৬০৪/৩}

দুআ করার পরিণতি

সর্বশেষ আলোচিত হাদীসটি আমাদের দুআ-এর সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেয়, যা নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:

যে দুআ-গুলো পৃথিবীতেই বাস্তবায়িত হয়

আপনার দুআ-টি পৃথিবীতেই কার্যকর হতে পারে, কিন্তু এখানে খেয়াল রাখা দরকার যে, আপনার প্রত্যাশা তৎক্ষণাৎ অবিলম্বেও পূর্ণ হয়ে যেতে পারে বা এটি সময় নিতে পারে যা বহুবছর পর্যন্ত পার করে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইয়াকুব আঃ সাঃ বহু বছর (প্রায় ৪০ বছর) অপেক্ষা করার পরে তার দুআ কার্যকর হয়েছিল এবং তিনি তার ছেলে ইউসুফ আঃ সাঃ কে ফিরে পেয়েছিলেন।

যে দুআ-গুলো এই পৃথিবীতে বাস্তবায়িত হতে দেখা যায় না

একটি দুআ কার্যকর না হওয়ার পিছে কারণ হতে পারে:

  • এটি আমাদের পাপ-এর কারণ হতে পারে
  • এটি আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
  • এটি আমাদের পরীক্ষার একটি অংশ হতে পারে যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।

কিন্তু এটা আমাদের আখেরাতের জন্য সোয়াব হিসেবে (গ্যারান্টিসহ) সংরক্ষিত থাকবে

আমরা সর্বদাই বিজয়ী পরিস্থিতিতে থাকি

তাই আমাদের কখনোই দুআ করা বন্ধ করা উচিত না – যেই দুআ পৃথিবীতে বাস্তবায়িত হতে দেখা যায় না, সেগুলোই সোয়াব হিসেবে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং, আমরা সবসময়ই একটি জয়যুক্ত অবস্থানে থাকি। এই ধরনের সোয়াব এসব দুআ না করে অর্জন করা কখনোই সম্ভব না।

দুআ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) অনেক পছন্দনীয় একটি এবাদত, কারণ এগুলোর দ্বারা আমরা নিজেদের অক্ষমতা ও তাঁর কাছে নম্রতা শিকার করি এবং সবকিছুর উপর তাঁর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করি।

আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সকল জ্ঞানের অধিকারী