Islam-beliefs

“মুসলিম” শব্দের প্রকৃত অর্থ

শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নিয়ে আলোচনা করা যাক:

আরবি শব্দ “মুসলিম” এর প্রকৃত অর্থ হল:

যে বেক্তি আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে আত্মসমর্পণ করে ও আনুগত্য স্বীকার করে

যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করে সেই মুসলিম। ইসলাম শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য স্বীকার (শুধুমাত্র একক ও সত্য স্রষ্টার উপর)।

একজন মুসলিম সংজ্ঞানুসারে সেই বেক্তি যে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) বিধি মোতাবেক আত্মসমর্পণ করে ও আনুগত্য স্বীকার করে। যেহেতু সর্বশক্তিমান স্রষ্টা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তাঁর কোনো সৃষ্টি আসলে সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছায় চলতে পারে না, নিজেকে সৃষ্টিকর্তা বা  প্রতিপালকের আশ্রয়ে সুরক্ষিত রাখার জন্যে।

আমরা কি সত্যিই স্বাধীন মানুষ?

সুতরাং, আমরা মুসলমান হিসেবে, নিজেদেরকে সম্পূর্ণ স্বাধীন/মুক্ত মানুষ হিসেবে দাবি করতে পারি না। যেই মুহূর্তেই আমরা আত্মসমর্পণ করি, সেই মুহূর্তেই আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা + প্রভু + প্রতিপালক + সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ এর নির্ধারিত বিধি বিধান দ্বারা আবদ্ধ হয়ে যাই।

অমুসলিমরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে; কিন্তু আমরা,  মুসলিম হিসেবে, ইসলাম দ্বারা পরিচালিত।

প্রচলিত ভুল ধারণা

আমাদের এই ভুল ধারণা দূর করতে হবে যে… মুসলিম = বিশ্বাসী

একজন মুসলমান সেই ব্যক্তি নয়, যে শুধু বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বিদ্যমান আছে। শুধুমাত্র তাঁর অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস রাখা এবং তাঁকে আমাদের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নেওয়া, মুসলিম হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।

এমনকি, ইবলীসকেও শয়তান/কাফের-এ রুপান্তরিত করা হয়েছিল, যখন সে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) আদেশ পালন করতে অস্বীকার করেছিল। ইবলিস ভালো ভাবেই জানে এবং বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাকে সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে [ইবলীস] বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। {সূরা আল-আ’রাফ: আয়াত ১২}

আমরা কি নিজেদেরকে মুসলিম বলতে পারি শুধুমাত্র আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) অস্তিত্বে বিশ্বাস করে? → ইবলীসও তো একথা বিশ্বাস করে। ইবলীসের অবাধ্যতা/নাফরমানী তাকে অবিশ্বাসী/কাফের বানিয়েছিলো।

এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল{সূরা আল বাক্বারাহ: আয়াত ৩৪}

আমরা শুধু একথা বলেই এড়িয়ে যেতে পারি না যে: –

“আমি বিশ্বাস করি যে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) অস্তিত্ব আছে, অন্তত আমি কাফের না, যদি কিছু নিয়ম অনুসরণ নাও করি, তাতে কি আসে যায় ?”.

যখন আমরা নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে বিবেচনা করি, তখন আমাদেরকে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) নিকট আত্মসমর্পণ করে, আমাদের উপর আরোপিত সীমাবদ্ধতা ও দায়িত্বগুলো পালন করার চেষ্টা করা উচিত। আমাদেরকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে, যে আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার/পালনকর্তার কাছে ফিরে যাচ্ছি। উল্লেখ্য যে, আমরা কেবল আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে পারি এবং আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে তার হেদায়েত ও রহমত কামনা করতে পারি, কিন্তু কোনো রকম চেষ্টা না করেই আমাদের কর্তব্য থেকে অব্যহতি পেতে পারি না।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে) প্রয়োজন, উঁনার আমাদেরকে প্রয়োজন নাই (তিঁনি প্রয়োজন মুক্ত)

হে মানুষ, তোমরা তো আল্লাহর মুখাপেক্ষি; কিন্তু আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। {সূরা ফাতির: আয়াত ১৫}

আমাদের সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো এক আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) উপাসনা করা। উল্লেখ্য যে, উপাসনা- শুধুমাত্র নামাজ, যিকর, রোযা এবং যাকাত মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সকল প্রকার অনুমোদিত সৎকর্মই উপাসনার অন্তর্ভুক্ত।

আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। {সূরা আয যারিয়াত: আয়াত ৫৬}

চমৎকার একটি উদাহরণ

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে আত্মসমর্পণের একটি চমৎকার উদাহরণ স্বরূপ, নবী ইব্রাহিমে আঃ -এর জীবনীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। তাকে যখনি কিছু আদেশ করা হতো, সে তৎক্ষণাৎ তাতে আনুগত্য স্বীকার করতো।

স্মরণ কর, যখন তাকে[ইব্রাহিমকে] তার পালনকর্তা বললেনঃ অনুগত হও। সে বললঃ আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম। {সূরা আল-বাকারাহ: আয়াত ১৩১}

পরিনাম: ইব্রাহিম আঃ সর্বোচ্চ বেহেস্তে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) নিকটতম স্থানে অবস্থিত

উদাহরণ ১. একটি দীর্ঘ সময়ের পর ইব্রাহিম আঃ একটি সন্তান দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিল। তারপর আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাকে একটি মরুভূমির মাঝখানে তার স্ত্রী ও সেই সন্তানটিকে ছেড়ে আসার আদেশ দিলেন। তিনি কোনো রকম যুক্তিতর্ক ছাড়াই আদেশটি পালন করেছিলেন, যদিও তিনি সেই সন্তানটিকে অত্যান্ত ভালোবাসতেন।

পরিনাম: আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তার পরিবারের তত্ত্বাবধায়ন করে ও যত্ন নেয়।

উদাহরণ ২. পরবর্তীকালে আবার,  ইব্রাহিম আঃ কে (স্বপ্নের মাধ্যমে) হুকুম দেয়া হয়, যেন সে তার প্রিয় পুত্রকে কুরবানী করে। তিনি এই বিষয়ে তার পুত্র (ইসমাইল আঃ) সাথে পরামর্শ করে। ইসমাইল আঃ উত্তরে বলে, “আপনাকে যাই আদেশ করা হয়েছে তাই করে ফেলুন এবং আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন”। তিনি সন্তানের গলায় ছুরি বসিয়ে আবার আত্মসমর্পণ করলেন (সুবহান্নাল্লাহ)

অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবর-কারী পাবেন। {সূরা আস-সাফফাত: আয়াত ১০২}

পরিনাম: আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বেহেস্ত থেকে একটা মেষ দ্বারা তার পুত্রকে প্রতিস্থাপন করলেন।

উপসংহার

একজন মুসলিম সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম নীতির উপর আত্মসমর্পণ করে এবং এগুলোর উপর নির্বাচন করে না, যে কোনগুলো অনুসরণ করবো আর কোনগুলো করবো না!! প্রকৃতপক্ষে, এসব নিয়ম-কানুন আমাদের জন্য উপকারী, আমরা বুঝি আর না বুঝি। আর, এই ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল, যে এগুলো মেনে চলা, আমাদের জন্য অসম্ভব।

আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না… {সূরা আল বাক্বারাহ: আয়াত ২৮৬}