ম্যাজিক/জাদু ও জীন সম্পর্কে সবকিছু

Table of Contents

জাদু এর সূচনা – হারুত ও মারুত এর গল্প

এই গল্পটি নিম্নলিখিত কুরআনের আয়াত দিয়ে শুরু করা যাক:

তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা-দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।

{সূরা আল-বাক্বারাহ; আয়াত: ১০২-১০৩}

এই দুইটি আয়াতে পরিষ্কারভাবে জাদু/ম্যাজিক এর ধারণাটি বর্ণনা করা হয়েছে – আসল জাদুকে কুফুরী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে; তাই, যেই বেক্তিই এটি চর্চা করে সেই কুফুরী করেছে, এসব মানুষের আসলে পরকালে কোন অংশ নেই। প্রকৃতপক্ষে দুই ধরনের জাদু হয়:

  1. চোখের ধোঁকা/ধাঁধা অথবা নকল জাদু
  2. বাস্তব জাদুু / আসল জাদু / কালো জাদু

আসুন একটু বিস্তারিত ভাবে এই বেপারটি আলোচনা করি…

হারুত ও মারুত ব্যাবিলনে আসে এবং মানবজাতিকে জাদু শেখায়

এই দুইজন ফেরেস্তাদের কাহিনী নিয়ে অনেক রকমের গল্প আছে। উল্লেখ্য যে, গল্পটির সকল সংস্করণ সঠিক নয়। আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) এই দুইজন ফেরেশতা – হারুত ও মারুত-কে ব্যাবিলন শহরে মানবজাতির কাছে পাঠায় যারা মানুষকে সর্বপ্রথম জাদু শেখায়। দয়া করে মনে রাখবেন যে, ফেরেশতারা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-কে অমান্য করতে পারবে না:

…তারা[ফেরেশতাগণ] আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। {সূরা আত-তাহরীম; আয়াত: ৬}

…ফেরেশতাগণ; তারা অহংকার করে না। তারা তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা যা আদেশ পায়, তা করে {সূরা আন-নাহল; আয়াত: ৪৯-৫০}

এই দুইজন ফেরেশতা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর অনুমতি সাপেক্ষেই মানবজাতিকে জাদু শিখিয়েছিলেন। উপরন্ত, তারা জাদুশিক্ষা দেওয়ার আগে প্রত্যেক ব্যাক্তিকে সতর্ক করতেন যে, আমরা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য একটি পরীক্ষারূপে এসেছি এবং জাদু চর্চা মানেই কুফুরী করা।

পবিত্র কুরআনে জাদু এর কিছু উদাহরণ

বাস্তব জাদুর কয়েকটি উদাহরণ কুরআন শরীফে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে:

উপরোক্ত আয়াতেই এক রকম জাদুর কথা উল্লেখ করা আছে যা দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো সম্ভব।

অন্য এক রকমের জাদু মুসা আঃ সাঃ এর ঘটনাটিতে উপলব্ধ, যেখানে ফিরাউন সেই সময়ের সেরা জাদুকরদেরকে ডেকেছিল এবং সেই জাদুকরেরা তাদের জাদু ব্যবহার করে মানুষের চোখে ধোঁকা সৃষ্টি করেছিল। সেই জাদুকরেরা অনেকগুলি দড়ি ছুড়ে ফেলে এবং এমন ধরনের বিভ্রম সৃষ্টি করে যে দড়িগুলো দেখতে অনেকগুলো জীবন্ত সাপ মনে হচ্ছিলো। কিন্তু একটু পরেই মুসা আঃ সাঃ, আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর সাহায্য ঐ জাদুকরদেরকে পরাজিত করেছিলেন।

তিনি বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন লোকদের চোখগুলোকে বাধিয়ে দিল, ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল এবং মহাযাদু প্রদর্শন করল। তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা বানিয়েছিল যাদু বলে। সুতরাং এভাবে প্রকাশ হয়ে গেল সত্য বিষয় এবং ভুল প্রতিপন্ন হয়ে গেল যা কিছু তারা করেছিল। {সূরা আল-আরাফ; আয়াত: ১১৬-১১৮}

মূসা বললেনঃ বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের যাদুর প্রভাবে হঠাৎ তাঁর মনে হল, যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো চুটাছুটি করছে। {সূরা তাহা; আয়াত: ৬৬}

সত্যিকারের জাদু / ব্ল্যাক ম্যাজিক আসলে কি?

এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, আমরা মুসলিমরা বাস্তব জাদুতে বিশ্বাস করি (সাধারণ চোখের ধোঁকা নয়)। এমনকি আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-কেও একবার কালো জাদু-এর শিকার করা হয়েছিলেন সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাযিল হওয়ার পূর্বে। এই লিংকে ক্লিক করে ঘটনাটি পড়তে পারেন।

সুতরাং, জাদু-এর উৎপত্তি হয়েছিল হারুত ও মারুত এর শিক্ষাদান থেকে। এই পদ্ধতি দ্বারা মানুষ জীন-জাতির সাহায্যে পার্থিব সুবিধা অর্জন ও ক্ষতি সাধন করতে পারে। তবে, এই কাজটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং যেই ব্যক্তি এটি চর্চা করে তাকে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ স্তরের কুফুরী কাজে অংশগ্রহণ করে জঘন্যতম কাজ করতে হয় এবং পরকালে এদের জন্য কোনো অংশই বাকি থাকে না। সূরা বাকারাহ্-এর ঐ আয়াতটিতে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষে এসব জাদু/ম্যাজিক করে জাদুকরেরা  নিজেদের উপকৃত না করে বরং আরো ক্ষতি সাধন করে – জাদু-এর বিনিময়ে তাদের সমগ্র দীন/আখেরাত বিক্রি করে চির জাহান্নামী হয়ে যায়। কালো জাদুর কিছু উদাহরণ আপনি এই ভিডিওতে দেখতে পারেন।

জাদু-এর প্রভাব আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর অনুমতি সাপেক্ষেই ঘটে

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ্য যে, জাদু-এর প্রভাবে যাই ঘটে তা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর অনুমতি সাপেক্ষে ও তাঁর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন অবস্থায় ঘটে। এইজন্যেই এটি উভয় পক্ষের জন্য এক ধরণের পরীক্ষা: –

জাদুকরের জন্য – পরীক্ষাটি হলো, তারা পৃথিবীতে তাদের কামনা/বাসনা পূরণ করে উপকৃত হতে পারে কিন্তু এই অপরাধের দরুন তার পুরো ভবিষ্যৎ/আখেরাত নষ্ট করে ফেলে;

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য – পরীক্ষাটি হলো, তারা কি ক্ষতির শিকার হওয়ার পর – আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর পথ আঁকড়ে থেকে তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে, নাকি অন্য মানুষের কাছে সাহায্য চায়। এমনকি মাঝে মধ্যে তারা সাহায্যে চাওয়ার জন্য কোনো জাদুকরের শরণাপন্ন হয়ে ফাঁদেও পরে যায়।

আমাদের সাহায্যের জন্য জাদুকরের কাছে শরণাপন্ন হওয়া উচিত নয়

ইসলাম-এ কোনো জাদুকর এবং ভাগ্যপরীক্ষক এর কাছে যাওয়া বা সাহায্য চাওয়া সম্পূর্ণ-ভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি কোনো ব্যক্তি যদি জীনের সাহায্যে প্রতিকার/আরোগ্য লাভ-এর দাবি করে তার কাছে যাওয়াও আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। একটি সহীহ হাদীসে আবূ হুরাইরা (রাঃ) উল্লেখ করেন যে,

নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি… গনক ঠাকুরের [ভাগ্যপরীক্ষক-এর] নিকটে যায়– সে মুহাম্মাদ সাল্লল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে(কুরআন) তা  অবিশ্বাস করেছে{জামে’ আত-তিরমিজি; হাদিস নং: ১৩৫}

জাদু সম্পর্কিত আয়াতটি সংক্ষিপ্ত করলে যা দাঁড়ায়:

  • সুলায়মান আঃ সাঃ জাদু চর্চা করে কুফুরী করেন নি।
  • জাদু অনুশীলন/চর্চা করা মানেই কুফুরী করা – আয়াতটিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত কিভাবে হারুত ও মারুত মানবজাতিকে সতর্ক করতেন জাদু অনুশীলন দ্বারা কুফুরী না করতে।
  • যারাই নিজেদের পরকাল বিক্রি করে জাদু ক্রয় করলো তার জন্য আখেরাতে কোন অংশ বাকি থাকে না।
  • জাদু-এর প্রভাব আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর অনুমতি সাপেক্ষেই ঘটে এবং এটি জাদুকর ও ক্ষতিগ্রস্ত উভয় পক্ষের জন্যই একটি পরীক্ষা।

জীন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ

আমাদের মুসলিম হিসেবে জীন-জাতির অস্তিত্বে বিশ্বাস করা উচিত এবং এদের সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান/ধারণা রাখা উচিত। এর প্রথম কারণ হলো, ইবলীস একজন জীন যে গোটা মানবজাতির শত্রূতে পরিণত হয়েছে এবং আমাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করে তার সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েছে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর কাছে।

  • আসলে, জীন-জাতি  আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর সৃষ্টি করা এক প্রকারের প্রাণী ছাড়া আর কিছুই নয়।
  • তবে, তারা মানুষ ও ফেরেশতাদের মতোই এক প্রকার বুদ্ধিমান প্রানি (পশুপাখি ও পোকামাকড় এর মতো নয়)।
  • আমাদের মতো, তাদেরও আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর অস্তিত্বে বিশ্বাস রেখে তার উপাসনা করা; এবং ভালো ও খারাপ কাজ করা বা না করার স্বাধীনতা আছে (ফেরেশতাদের মতো নয় – তারা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-কে অমান্য করতে পারে না)।

আমাদের জীন-জাতির বৈশিষ্ট্য এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আরো জানা উচিত যেন তারা আমাদেরকে ভয় দেখতে না পারে বা আমাদেরকে ফাঁদে আটকিয়ে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটন করতে বাধ্য করতে না পারে।

জীন-জাতির বৈশিষ্ট

জীন-জাতিকে ভালো ভাবে বুঝতে, নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুসারে তাদের বৈশিষ্ট নিয়ে সংক্ষিপ্তে আলোচনা করা যাক:

জ্বীন-জাতিকে মানবজাতির আগে তৈরি করা হয়েছে

আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। এবং জিনকে এর আগে লু-এর [অগ্নিশিখা] আগুনের দ্বারা সৃজিত করেছি। {সূরা আল-হিজর; আয়াত: ২৬-২৭}

জীন-জাতি অগ্নিশিখা থেকে তৈরি হয়েছে:

এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে। {সূরা: আর-রহমান; আয়াত: ১৫}

জীন-জাতি তাদের আসল আকৃতিতে অদৃশ্য:

জীন-জাতি তাদের আসল আকৃতিতে আমাদের চোখের দৃষ্টিতে অদৃশ্য – কারণ তারা অগ্নিশিখা থেকে তৈরী। আরবি শব্দ জীন – “জান্না” শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হলো ঢাকা বা গোপন করা।

… সে {শয়তান} এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। … {সূরা আল-আরাফ; আয়াত: ২৭}

তারা মানুষ বা পশুদের আকার ধারণ করতে পারে:

বিভিন্ন আয়াত এবং সহীহ হাদিস দিয়ে আমরা জানতে পারি যে জীনরা মানুষ বা পশুদের আকার ধারণ করতে পারে।

বিভিন্ন হাদীসে, মুহাম্মদ (সাঃ) কুঁচকুঁচে কালো কুকুরকে খারাপ জীন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একটি হাদিসের ভিত্তিতে কালো কুকুর নামাযীর সামনে দিয়ে গেলে নামায নষ্ট হয়ে যায়।

যখন কোন বাক্তি নামায আদায় করে তখন তার সামনে কালো কুকুর পার হলে তার নামায নষ্ট করে দিবে। আমি প্রশ্ন করলাম, কালো কুকুর এমন কি অপরাধ করল, অথচ লাল অথবা সাদা কুকুরও তো রয়েছে? তিনি[রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন কালো কুকুর শয়তান সমতুল্য। {জামে’ আত-তিরমিজি; হাদীস: ৩৩৮}

আবু যার(রাঃ) হতে বর্ণিত: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ঘোর কালো কুকুর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তা শয়তান। {সুনান ইবনে মাজাহ; হাদীস: ৩২১০}

জ্বীন মানুষের রূপ নিতে পারে:

আর যখন সুদৃশ্য করে দিল শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপকে এবং বলল যে, আজকের দিনে কোন মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না আর আমি হলাম তোমাদের সমর্থক, অতঃপর যখন সামনা সামনী হল উভয় বাহিনী তখন সে অতি দ্রুত পায়ে পেছনে দিকে পালিয়ে গেল এবং বলল, আমি তোমাদের সাথে না-আমি দেখছি, যা তোমরা দেখছ না; আমি ভয় করি আল্লাহকে। আর আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠিন। {সূরা আল-আনফাল; আয়াত: ৪৮}

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একবার একটি মানুষ রূপে জীনকে ধরে ফেলেছিলো যে তাকে আয়াত-উল-কুরসী শিখিয়ে দেয়:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রমাযানে যাকাতের মাল হিফাজতের দায়িত্ব দিলেন। এক সময় এক ব্যক্তি এসে খাদ্য-সামগ্রী উঠিয়ে নেয়ার উপক্রম করল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহ্‌র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে নিয়ে যাব। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করেন। তখন লোকটি বলল, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। এর কারণে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে আসতে পারবে না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঘটনা শুনে) বললেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাচারী শয়তান{সহীহ আল-বুখারী; হাদিস: ৫০১০}

তারা মানুষের উপর ভর বা আসর করতে পারে:

সূরা আন-নাস থেকে আমরা জানতে পারি যে শয়তান হলো জিন যারা আমাদের মনে কুমন্ত্রণা (ওয়াস-ওয়াসা) দিতে পারে। আরো জানতে এখানে পড়ুন।

আমরা এটাও জানি যে জ্বীন মানুষের উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে নিচের আয়াতে ব্যাপারটা পরিষ্কার বোঝা যায়:

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। {সূরা বাক্বারাহ; আয়াত: ২৭৫}

অনেক দিক থেকেই জীন-জাতির সাথে আমাদের অনেক মিল আছে:

তারা আমাদের মত বুদ্ধিমান প্রাণী এবং তাদের মধ্যেও বিয়ে হয়, সন্তান হয় এবং তারাও মারা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা আছে যে উভয় জ্বীন-জাতি ও মানবজাতি একই উদ্দেশ্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। {সূরা আয-যারিয়াত; আয়াত: ৫৬}

সুতরাং, তাদের মধ্যেও মুসলিম ও অমুসলিম জীন আছে এবং তাদেরও কেয়ামতের দিন আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর সামনে আমাদের মতই হিসাব নেয়া হবে।

আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) জীন ও মানুষ একসাথে দোযখে পাঠাবে:

…অবশ্যই আমি জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ দ্বারা একযোগে ভর্তি করব{সূরা হুদ; আয়াত: ১১৯}

আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না।… {সূরা আল-আ’রাফ; আয়াত: ১৭৯}

আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি জীন(শয়তান) নিযুক্ত করা আছে:

আমাদেরকে জানতে হবে যে আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি জীন সার্বক্ষণিক আমাদের জন্য নিযুক্ত করা আছে তাই এদেরকে আসলে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। আরেকটি ভাল খবর হল যে, আমাদের জন্য ১টি জীন নিযুক্ত থাকলেও আমাদের প্রত্যেকের সাথে অন্তত ৪ জন ফেরেশতা থাকে (২ জন [দুই কাঁধে] আমাদের কার্যকলাপের রেকর্ড রাখে এবং ২ জন [আগে ও পিছে] আমাদেরকে মন্দ কাজ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে)

তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই একটি শয়তান নির্ধারিত আছে।… {সহীহ মুসলিম; অধ্যায় ৫২, হাদীস ৭০০০}

তাঁর পক্ষ থেকে অনুসরণকারী[ফেরেশতা] রয়েছে তাদের অগ্রে এবং পশ্চাতে, আল্লাহর নির্দেশে তারা ওদের হেফাযত করে। … {সূরা আর-রা’দ; আয়াত: ১১}

অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক[ফেরেশতা] নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ [ডানে ও বামে]। তারা জানে যা তোমরা কর। {সূরা আল-ইনফিতার; আয়াত: ১০-১২}

জ্বীন আমাদের রক্তে প্রবাহিত হতে পারে

শয়তান জীন আমাদের রক্তে প্রবাহিত হতে পারে এবং আমাদের মনে কুমন্ত্রণা দিতে পারে:

জাবির বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসায়াম বলেছেনঃ যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সে সকল মহিলাদের নিকট তোমরা যেও না। কেননা, তোমাদের সকলের মাঝেই শাইতান (প্রবাহিত) রক্তের ন্যায় বিচরণ করে … {জামে’ আত-তিরমিজি; হাদিস নং: ১১৭২}

সাফিয়্যাহ বিন্‌তু হুয়াই (রাঃ) তিনি বলেন, “আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই’তিকাফ অবস্থায় ছিলেন। আমি রাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসলাম। অতঃপর তার সঙ্গে কিছু কথা বললাম। অতঃপর আমি ফিরে আসার জন্য দাঁড়ালাম। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও আমাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমার সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন। আর তার বাসস্থান ছিল উসামা ইব্‌নু যায়দের বাড়িতে। এ সময় দু’জন আনসারী সে স্থান দিয়ে অতিক্রম করল। তারা যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখল তখন তারা শীঘ্র চলে যেতে লাগল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা একটু থাম। এ সাফিয়্যা বিন্‌তে হুয়াই। তারা বললেন, সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেন, মানুষের রক্তধারায় শয়তান প্রবাহমান থাকে। আমি শঙ্কাবোধ করছিলাম, সে তোমাদের মনে কোন খারাপ ধারণা অথবা বললেন অন্য কিছু সৃষ্টি করে না কি। {সহীহ আল-বুখারী; হাদীস: ৩২৮১}

সূরা আন-নাস এসব কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকার জন্য একটি যথাযত প্রতিকার। আরও তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন ও এই প্রবন্ধ পড়ুন।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, বিচারের দিনে যখন আমরা আমাদের অপকর্মের জন্যে শয়তানকে দোষারোপ করার চেষ্টা করবো, তখন সে বলবে “আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তোমাদেরকে সত্যের পক্ষে আহ্বান জানিয়েছিলেন – আর আমার তোমাদের উপর কোনোই ক্ষমতা ছিল না – আমি শুধু তোমাদেরকে কুমন্ত্রণা দিয়ে আমন্ত্রণ করেছিলাম – তুমি আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলে – তোমার সিদ্ধান্ত ও কৃতকর্মের জন্য তুমিই একমাত্র দায়ী:

যখন সব কাজের ফায়সলা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছি, অতঃপর তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর তো আমার কোন ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি, অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ। অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই। এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও। ইতোপূর্বে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরীক করেছিলে, আমি তা অস্বীকার করি। নিশ্চয় যারা জালেম তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। {সূরা ইব্রাহীম; আয়াত: ২২}

তারা বস্তুকে স্থানান্তরণ করতে পারে (শক্তিতে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে):

সুলাইমান আঃ সাঃ এর গল্প থেকে আমরা জীন-জাতির একটি বিশেষ ক্ষমতার ব্যাপারে জানতে পারি, কিছু শক্তিশালী জীনদের এমনও ক্ষমতা আছে যে তারা দীর্ঘ দূরত্বে উচ্চ গতিতে বিশাল বস্তুকে স্থানান্তরণ করতে পারে। এই স্থানান্তর করার জন্য পদার্থকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে (সম্ভবত আলোর গতিতে) বহন করে আবার পুনরায় একই পদার্থে/বস্তুতে রূপান্তরিত করার প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এ ব্যাপারটি হয়তো বিখ্যাত E = mc2 এর সাথে সম্পর্কিত করতে পারে।

নিম্নবর্তীত ২টি আয়াত এই ক্ষমতাটি বর্ণনা করেছে

জনৈক দৈত্য-জিন [যার নাম ইফরীত] বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং আমি একাজে শক্তিবান, বিশ্বস্ত। কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল। {সূরা আন নামল; আয়াত: ৩৯-৪০}

সূরা জীন থেকে কিছু শিক্ষণীয় বিষয়:

পবিত্র কুরআনে একটি নির্দিষ্ট সূরা আছে যার নামকরণ করা হয়েছে জীন নামে। একটি বিস্ময়কর ঘটনা এই সূরাটিতে সচিত্রিত করা হয়েছে। একবার কয়েকটি জীন তাদের চলাচলের মাঝে পবিত্র কুরআন পাঠ শুনতে পায়। তারা বিস্মিত হয়ে এটি শোনার পর এটিতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং এর সত্যতা নিশ্চিত করে। এই বিষয়টি আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-কে আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। পূর্বে একসময়, জীন আকাশে লুকিয়ে কান পেতে ঐশ্বরিক কিছু তথ্য চুরি করতে পারতো, কিন্তু পবিত্র কুরআন নাযিল হওয়ার পর আসমানে এমন বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে যাতে জীন-জাতিরা পুনরায় এমন আড়ি পাতার চেষ্টা করলেই তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয়।

বলুনঃ আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি;

যা সৎপথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করব না।

এবং আরও বিশ্বাস করি যে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। তিনি কোন পত্নী গ্রহণ করেননি এবং তাঁর কোন সন্তান নেই।

আমাদের মধ্যে নির্বোধেরা আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে বাড়াবাড়ির কথাবার্তা বলত।

অথচ আমরা মনে করতাম, মানুষ ও জিন কখনও আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে না।

অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জিনদের আত্নম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত।

তারা ধারণা করত, যেমন তোমরা মানবেরা ধারণা কর যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ তা’আলা কখনও কাউকে পুনরুত্থিত করবেন না।

আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করছি, অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ।

আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে জলন্ত উল্কাপিন্ড ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে।

আমরা জানি না পৃথিবীবাসীদের অমঙ্গল সাধন করা অভীষ্ট, না তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল সাধন করার ইচ্ছা রাখেন।

আমাদের কেউ কেউ সৎকর্মপরায়ণ এবং কেউ কেউ এরূপ নয়। আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথে বিভক্ত।

আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহ তা’আলাকে পরাস্ত করতে পারব না এবং পলায়ন করেও তাকে অপারক করত পরব না।

আমরা যখন সুপথের নির্দেশ শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব, যে তার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস করে, সে লোকসান ও জোর-জবরের আশংকা করে না।

আমাদের কিছুসংখ্যক আজ্ঞাবহ এবং কিছুসংখ্যক অন্যায়কারী। যারা আজ্ঞাবহ হয়, তারা সৎপথ বেছে নিয়েছে।

{সূরা আল-জিন: আয়াত ১-১৪}

যে সকল ব্যক্তি জীন বা মৃত আত্মা দিয়ে সাহায্য করার দাবি করে

এটা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, যেকোনো ব্যক্তি (তাকে দেখতে যত ধার্মিক ব্যক্তিই মনে হোক না কেন) যদি দাবি করে, যে সে জীন বা মৃত ব্যক্তির আত্মার সাহায্যে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে, তাহলে সে হয়:

  • মিথ্যা বলছে যে তার জীন বা আত্মার উপর নিয়ন্ত্রণ আছে। অথবা;
  • সে কালো জাদু অনুশীলন করে জীন এর সাহায্য নেয়, ইসলামে যেটার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

জীন-জাতিদের মানবজাতিকে সাহায্য করার অনুমতি দেওয়া হয়নি

জীন-জাতিকে মানবজাতির সাহায্য করার অনুমতি দেয়া হয়নি। সুতরাং, কোনো ভাল জীন স্বেচ্ছায় আমাদের সাহায্য করার জন্য আসার কথাই না।

যেদিন আল্লাহ সবাইকে একত্রিত করবেন, হে জিন সম্প্রদায়, তোমরা মানুষদের মধ্যে অনেককে অনুগামী করে [ভুল পথে চালিত করে] নিয়েছ। তাদের মানব বন্ধুরা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা পরস্পরে পরস্পরের মাধ্যমে ফল লাভ করেছি। আপনি আমাদের জন্যে যে সময় নির্ধারণ করেছিলেন, আমরা তাতে উপনীত হয়েছি। আল্লাহ বলবেনঃ আগুন হল তোমাদের বাসস্থান। তথায় তোমরা চিরকাল অবস্থান করবে; কিন্তু যখন চাইবেন আল্লাহ। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। {সূরা আল-আনাম; আয়াত: ১২৪}

ইসলাম/কুরআন নাজিল হওয়ার আগে মানুষ জীন জাতির কাছে আশ্রয় নিতো ও তাদের সাহায্য চাইতো যেন তাদের কোনো ক্ষতি না হয়, এই সুযোগে জীনরা তাদের ভয় ভীতি বাড়িয়ে দিয়েছিলো যেন তারা জীনদের কাছে আরো বেশী বেশী সাহায্য চাইতে যায়। আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) ব্যাপারটি আমাদেরকে জানিয়ে দেয়।

অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জিনদের আত্নম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত। {সূরা আল-জিন; আয়াত: ৬}

ভূত বা মৃত আত্মা আমাদের কাছে ফেরত আসে না

আমাদের মৃত ব্যক্তির ভূতে বিশ্বাস করা উচিত নয়। আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে মৃত ব্যক্তির আত্মা আমাদেরকে ভয় দেখাতে অথবা সাহায্য বা ক্ষতি সাধন করতে পারে, কিন্তু মুসলিম হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি যে, একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার আত্মা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর কাছে ফিরে যায় এবং একটি সম্পূর্ণ ভিন এক ডাইমেনশনে চলে যায় যার নাম হলো বারযাখ। আমাদের জীবনের আসলে ৩টি ধাপ আছে:

  1. পার্থিব জীবন – জীবিত অবস্থায়
  2. বারযাখ – যা মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে আখেরাত সময় পর্যন্ত শেষ হয়
  3. আখেরাত থেকে আমাদের পরকাল – আমাদেরকে পুনরুত্থিত করার পর থেকে যা শুরু হয়

সূরা আল-মু’মিনুন আমাদেরকে বারযাখ সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছে। নিম্ন বর্তীত আয়াতগুতে কিছু কাফেরদের উদাহরণ বর্ণনা করা হয়েছে যখন তারা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছায়:

যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ করুন। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে বারজাখ(পর্দা) আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। {সূরা আল-মু’মিনুন, আয়াত ৯৯-১০০}

সুতরাং, আমাদেরকে সাহায্য করতে বা ক্ষতি সাধন করতে মৃত ব্যক্তির ভুত / আত্মার মত কিছুই আর ফিরে আসতে পারে না। তবে, জীনরা কিন্তু সেসব মানুষের আকার ধারণ করে  অথবা তাদের কণ্ঠস্বর নকল করে আমাদেরকে ঠিকই বোকা বানিয়ে ভয়-ভীতি দেখতে পারে। আরো জানতে  এখানে ক্লিক করে পরে নিতে পারেন।

কেন আমাদেরকে ভয়-ভীতি দেখানো হয় বা ক্ষতি সাধন করা হয়?

সুতরাং, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের শুধুমাত্র সর্বশক্তিমান স্রষ্টা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-কে ভয় করা এবং একমাত্র তার কাছ থেকেই সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত। আমাদের আরো জানা উচিত যে, ইবলীস একটি জিন যে শয়তান-এ রুপান্তরিত হয়েছে এবং চিরো জাহান্নামী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এজন্য, ইবলীস আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে সে আদম সন্তানদের অধিকাংশ বংশধরদের বিপথগামী করবে। সুতরাং, ইবলীস এবং তার অনুসারীদের একটা প্রবণতা আছে যে তারা আমাদের ভয়-ভীতি দেখানো, আমাদের শুধুমাত্র আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-কে ভয় করা উচিত। শয়তানরা জানেই যে তারা দোযখে যাচ্ছে, তাই তারা আমাদের অধিকাংশ মানুষকে তাদের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।

এরা যে রয়েছে, এরাই হলে শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আর তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর। {সূরা আলি-‘ইমরান; আয়াত: ১৭৫}

আরেকটি বিপজ্জনক কারণ হলো, আরো বেশি বেশি মানুষকে কুফুরী করানোর উদ্দেশ্যে। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একটি জাদুকর জীনের সাহায্যে কিছু অর্জন করলো, ইতিমধ্যে সেই বেক্তিকে এই কাজের জন্য নিকৃষ্টতম কুফুরী কার্যকলাপ করতে হয়েছে। এর দরুন ওই খারাপ জীনদের কাছে এই জাদুকরের কাছে আর কোনো কিছুরই দরকার থাকে না। তারা ঐ জাদুকরকে শুধুমাত্র তখনি সাহায্য করবে যখন সে আরো মানুষ নিয়ে আসতে পারবে। স্বাভাবিকভাবেই, তারা অন্যান্য নিরীহ মানুষকে তাদের শিকার বানানো শুরু করে যারা হয়তো এইসব জাদুকরদের কাছে সাহায্য চাইতে আসে (আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর কাছে সাহায্য চাওয়ার পরিবর্তে)। ফলস্বরুপে, এই নিরীহ মানুষদেরকে দিয়ে, তারা যা চায় তাই করানোর জন্য বাধ্য করতে পারে।

জীন-জাতি থেকে সুরক্ষা

যেহেতু আমরা জীন-জাতিকে দেখতে পারি না অথচ তারা আমাদেরকে ঠিকই দেখতে পারে এবং তাদের মধ্যে কিছু খারাপ জীন আছে, নবী (সাঃ) তাদের ক্ষতি থেকে আমাদের নিজেদেরকে রক্ষা করার নানা কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন।

সূরা আল-ফালাক এবং আন-নাস পড়া:

এটি সম্ভবত সব থেকে ভালো সমাধান। আমরা সূরা আল-ফালাক এবং আন-নাস (যৌথভাবে আল-মুয়াইদাতাইন নামেও পরিচিত) পড়ে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর কাছে আশ্রয় চাইতে পারি। আমাদেরকে এই আয়াতগুলোর প্রকৃত অর্থ বুঝে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর উপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে এগুলো পড়তে হবে।

আয়াত-উল-কুরসী পড়া:

উপরে আলোচিত একটি হাদিস পর্যালোচনায়, একটি জীন আমাদেরকে জানিয়ে দেয় যে, আয়াত-উল-কুরসী বিছানায় যাবার সময় পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক আমাদেরকে জীন থেকে সুরক্ষা করে, এবং শয়তান ভোর পর্যন্ত আমাদের কাছে আসতে সক্ষম হয় না। আরো জানতে এখানে পড়ুন।

সূরা আল-মু’মিনূন এর ৯৭-৯৮তম পড়া:

আমরা পবিত্র কুরআনে শিখানো নিম্ন লিখিত আয়াতটিও পড়তে পারি:

বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি,এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি। [সূরা আল-মু’মিনূন; আয়াত: ৯৭-৯৮}

বাড়িতে প্রবেশ করার আগে, খাওয়ার/পান করার আগে, পোশাক পরার সময় ও সহবাসের আগে বিসমিল্লাহ পড়া:

বাড়িতে প্রবেশ করার আগে, খাওয়ার/পান করার আগে, পোশাক পরার সময় ও সহবাসের আগে বিসমিল্লাহ (আল্লাহর নামে শুরু) পড়লে শয়তান থেকে প্রতিরক্ষা পাওয়া যায়।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন যে যখন কোন ব্যাক্তি তার ঘরে প্রবেশের এবং খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করে, তখন শাইতান হতাশ হয়ে (তার সঙ্গীদের) বলে- তোমাদের (এখানে) রাত্রি যাপনও নেই, খাওয়াও নেই। আর যখন সে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ না করে, তখন শাইতান বলে, তোমরা থাকার স্থান পেয়ে গেলে। আর যখন সে খাবারের সময় আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ না করে, তখন সে (শাইতান) বলে, তোমাদের নিশি যাপন ও রাতের খাওয়ার আয়োজন হলো। {সহীহ মুসলিম; হাদীস ৫১৫৭}

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কারো লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয়। তারপর তাতে যে আবর্জনা স্পর্শ করেছে তা যেন দূরীভূত করে এবং খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে। শাইতানের জন্য সেটি যেন ফেলে না রাখে। আর তার আঙ্গুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত সে যেন তার হাত রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে। কেননা সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বারাকাত রয়েছে। {সহীহ মুসলিম; হাদীস ৫১৯৬}

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, দেখ, তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর কাছে আসে, আর তখন বলে, বিসমিল্লাহ্‌। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখ। আর আমাদেরকে যে সন্তান দেয়া হবে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। {সহীহআল বুখারী; হাদিস: ৩২৭১}

একইভাবে, টয়লেট/বাথরুমে প্রবেশের পূর্বে বা কাপড় বদলানোর সময় বিমলিল্লাহ পড়লে জীনদের আমাদেরকে দেখতে পারা থেকে ও ক্ষতি করা থেকে প্রতিরোধ করা হবে। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন:

আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জ্বিনের দৃষ্টি ও আদম সন্তানের লজ্জাস্থানের মাঝখানে পর্দা হলো, যখন তাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করে সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। {জামে’ আত-তিরমিজি; হাদীস: ৬০৬}

নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদেরকে আরো শিখিয়েছেন যেন আমরা, “শয়তান ধ্বংস হোক” এমন কথা বলে তাদেরকে অভিসাপ না দিয়ে বরং বিসমিল্লাহ বলি – আসলে অভিশাপ দিলে অহংকারে শয়তান ঘরের সমান বড় হয়ে যায় অথচ বিসমিল্লাহ বললে তারা ছোট একটি মাছির সমান আকৃতি হয়ে যায়:

আবুল মালীহ (রহঃ) হতে এক ব্যক্তির থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি জন্তুযানে নবী (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে বসা ছিলাম। হঠাৎ তার সাওয়ারী হোঁচট খেলে আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হয়েছে। তিনি বললেন, একথা বলো যে, না শয়তান ধ্বংস হয়েছে। কেননা তুমি একথা বললে সে অহংকারে ঘরের মতো বড় আকৃতির হয়ে যাবে এবং সে বলবে, আমার ক্ষমতায় হয়েছে। অতএব বলো, আল্লাহর নামে। যখন তুমি আল্লাহ নামে বলবে শয়তান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে মাছির মত হয়ে যাবে। {সুনানে আবু দাউদ; হাদীস: ৪৯৮২}

সূরা বাকারার পড়া:

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

তোমরা তোমাদের ঘরসমূহ কবরস্থানে পরিণত করো না। যে ঘরে সূরা আল-বাক্বারাহ্‌ তিলাওয়াত করা হয় তাতে শাইতান প্রবেশ করে না। {জামে’ আত-তিরমিজি; হাদীস ২৮৭৭}

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

আল্লাহ তা‘আলা আসমান-যামীন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব হতে তিনি দু‘টি আয়াত নাযিল করছেন। সেই দু‘টি আয়াতের মাধ্যমেই সূরা আল-বাক্বারা সমাপ্ত করেছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দু‘টি আয়াত তিলাওয়াত করা হয় শাইতান সেই ঘরের নিকট আসতে পারে না। {জামে’ আত-তিরমিজি; হাদীস ২৮৮২}

আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর নৈকট্য লাভ করে:

আমরা বেশী বেশী করে কুরআন পাঠ, যিকির ও দুআ করে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর নৈকট্য ও তাকওয়া লাভ করে এইসব জীন থেকে বেঁচে থাকতে পারি:

আমার বান্দাদের উপর তোর[শয়তানের] কোন ক্ষমতা নেই আপনার পালনকর্তা যথেষ্ট কার্যনির্বাহী। {সূরা আল-ইসরা; আয়াত: ৬৫}

তাবিজ যতটুকু সম্ভব পরিহার করে:

তাবিজ মূলত তিন ধরনের হতে পারে:

  1. কোনো কুরআনের আয়াত ছাড়াই  – যার মধ্যে অজানা প্রতীক, চিহ্ন, ছক, নাম ও শব্দ লেখা থাকে।
  2. কুরআনের আয়াত এর সাথে কিছু অজানা জিনিস লেখা/আঁকা থাকে।
  3. শুধুমাত্র কুরআনের আয়াত লেখা থাকে।

তাবিজ ব্যবহারের বিরুদ্ধে কয়েকটি সহীহ হাদীস আছে, কিন্তু আমি এ পর্যন্ত তাবিজ ব্যবহারের সমর্থনে/পক্ষে কোনো হাদীস খুঁজে পাইনি। উদাহরণস্বরূপ কিছু হাদিস  নিচে উল্লেখ করা হলো:

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গিরা দিয়ে তাতে ফুঁক দেয়, সে যাদু করলো, আর যে যাদু করলো, সে মুশরিক হলো। আর যে ব্যক্তি গলায় কিছু ঝুলায় [তাবিজ], তাকে সেই জিনিসের উপর ন্যস্ত করা হয়। {সুনানে আন-নাসায়ী; হাদীস: ৪০৭৯}

ঈসা ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লাইলা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উকাইম আবূ মা’বাদ আল-জুহানীর অসুস্থ অবস্থায় তাকে দেখতে গেলাম। তিনি বিষাক্তি ফোঁড়ায় আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললাম, কিছু তাবিজ-তুমার ঝুলিয়ে রাখছেন কেন? তিনি বললেন, মৃত্যু তো এর চেয়েও নিকটে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক কোনকিছু ঝুলিয়ে রাখে (তাবিজ-তুমার) তাকে তাঁর উপরই সোপর্দ করা হয়। {সুনানে আন-নাসায়ী; হাদীস: ২০৭২}

প্রথম ধরনের তাবিজ: আমরা কি অজানা সব প্রতীক, চিহ্ন, ছক, নাম বা শব্দ ব্যবহৃত এই রকম কোনো তাবিজের উপর যুক্তিসম্মত ভাবে সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে এটিকে নিরাপদ মনে করতে পারি? যেখানে এখন আমরা জানি যে কিভাবে কালো জাদু করা হয়।

দ্বিতীয় ধরনের তাবিজ: যেখানে কুরআনের আয়াত + দুআ + কিছু অজানা জিনিস লেখা/আঁকা থাকতে পারে – যেটাও আসলে সন্দেহজনক। এসব আয়াত যদি আমাদের শুধু বোকা বানানোর জন্য লেখা হয় অথচ বাকি অজানা জিনিসগুলো আমাদেরকে তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এমনও তো হতে পারে যে, যেই বেক্তি আমাদেরকে তাবিজটি দিয়েছেন সে নিজেও জানেনা যে এই অজানা জিনিসগুলোর মধ্যে শয়তানি কিছু লুকিয়ে আছে। আপনি কি এরকম ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত? কুরআনের আয়াত এর পাশাপাশি কালো-জাদু চর্চার উদাহরণ আপনি এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।

তৃতীয় ধরনের তাবিজ: স্কলারদের মাঝে এই রকমের তাবিজ ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক আছে -কেউ বলে এগুলো ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম আবার কেউ দ্বিমত পোষণ করে। কিন্তু, এ পর্যন্ত আমি তাবিজ ব্যবহারের পক্ষে কোনো সহীহ হাদীস খুঁজে পাইনি এবং বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক স্কলার-রা তাবিজ ব্যবহারের বিরুদ্ধেই বেশীরভাগ কথা বলতে শুনেছি। আপনি এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।

চিকিৎসা হিসেবে – কুরআন

মানসিক ও শারীরিক রোগ এর জন্য সর্বপ্রথম আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তবে, একথাও ঠিক যে পবিত্র কুরআন আমাদের আত্মিক নিরাময় সহ আমাদের মানসিক ও শারীরিক আরোগ্য দিতে পারে:

… বলুন, এটা [কুরআন] বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার। যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কোরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়। {সূরা ফুছছিলাত; আয়াত: ৪৪}

আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়। {সূরা আল-ইসরা; আয়াত: ৮২}

আরবি শব্দ “রুকিয়াহ” এর মানে হলো পবিত্র কোরানের আয়াত (ও দুআ) যেগুলো দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়। রুকিয়াহ এর মধ্যে অন্যতম হলো সূরা ফাতিহা, আল-বাকারা ও আল-মুয়াইদাতাইন(নাস ও ফালাক) যেগুলো বিস্তারিতভাবে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।

চিকিৎসা হিসেবে মধু

পবিত্র কুরআন ও সুন্নত(হাদীস) হিসেবে মধু একটি সেফা:

এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয় [মধু]। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। {সূরা আন নাহল; আয়াত: ৬৯}

জাবির থেকে বর্ণিত: আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের ঔষধসমূহের কোনটির মধ্যে যদি কল্যাণ থাকে তাহলে তা আছে শিঙ্গাদানের মধ্যে কিংবা মধু পানের মধ্যে কিংবা আগুন দিয়ে ঝলসানোর মধ্যে। রোগ অনুসারে। আমি আগুন দিয়ে দাগ দেওয়া পছন্দ করি না। {সহীহ আল বুখারী; হাদীস: ৫৬৮৩}

সাধারণ যৌক্তিকতা

আমরা জানি যে মধু একটি সেফা হিসাবে কাজ করতে পারে, কিন্তু এই মধুটি কি একটি ছোট শিশিতে ভরে গলায় ঝুলিয়ে রাখা যৌক্তিক? একইভাবে কুরআনের আয়াতও অবশই সেফা হিসেবে কাজ করতে পারে যখন আমরা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-এর উপর ভরসা রেখে সঠিকভাবে এটা পাঠ করবো – সম্ভব হলে আয়াতগুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করে।

উপসংহার

অদৃশ বিষয় আমাদের যাই জানা উচিত, কুরআন ও সহিহ হাদিসে এগুলো খুঁজলেই বের করা সম্ভব। আপনি নিজেই আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করতে পারবেন এবং কুসংস্কার থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। সময়ের সাথে সাথে, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীরা ইসলাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ব্যাপারগুলোর সত্যতা প্রমাণ করতেই থাকবে। ছোট একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করি: আজকাল তথাকথিত ভুত-ধরা সংগঠন বা গোস্টবাস্টার গ্রূপস – ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ডিটেক্টর ও সেনসর বা সমতুল্য ডিভাইস দিয়ে ভুত/আত্মা শিকারে বের হয়; যেখানে আমরা মুসলিমরা ভালোবেই জানি যে এগুলো আসলে জীন, যেহেতু এরা অগ্নিশিখা দিয়ে তৈরী এদের উপস্থিতিতে এইসব ডিভাইসে প্রতিক্রিয়া ঘটা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার 🙂