আধুনিক তরুণেরা
যখনই কোনো তরুণী যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পোশাক পরতে চায়, তখন তার মা বলতে পারে:
“এমন পোশাক পরা উচিত না।”
এই ব্যাপারে, আমাদের তরুনীদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্নগুলো হলো:
- এরকম পোশাক পরতে সমস্যা কি?
- মা তুমি কি ওকে দেখেছ? – অন্তত আমি ওই মেয়েটার মতো না – যেই মেয়েটিকে উদাহরণস্বরূপ তুলনা করা হয়, সেও একইভাবে অন্য কোনো মেয়েকে চিহ্নিত করে যে আরো খারাপ ভাবে পোশাক পরে – এবং এটি চলতে থাকে
এখনকার অধিকাংশ বাবা-মার কাছে এই প্রশ্নগুলোর কোনো সন্তুষ্টজনক উত্তর থাকেনা। ঐ মা যদি বলে: “দেখো মা! আমরা এইরকম পোশাক পরি না” মেয়েটি স্বাভাবিকভাবেই বলবে (বা চিন্তা করবে), “আম্মু তুমি কি কখনো নিজেকে আয়নায় ভালোভাবে দেখেছো? কেন তুমি নিজেকে আমার সাথে তুলনা করছো?”
আমাদের মা একসময় অনেক সুন্দর ছিল
আসলে, এমন একসময় ছিল, যখন আমাদের এই একই মা দেখতে অনেক সুন্দর ছিল। কিন্তু ঐ সময়ে কোন এইচ-ডি সেলফি ক্যামেরা ছিল না – তাই আমরা ধারণাই করতে পারিনা যে তারা একসময় কতটা সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু, বয়সের সাথে সাথে ধীরে-ধীরে তাদের আকর্ষণীয়তা ম্লান হয়ে গিয়েছে। একসময় হয়তো তারা এই ব্যাপারটি নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা করেছেন, এমনকি তাদের মধ্যে কেউ সম্ভবত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও গিয়েছেন, কেউ আবার তারুণ্যের লাবণ্য ফিরে পাওয়ার বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করেও চেষ্টা চালিয়েছেন – কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা এই সত্যটি স্বীকার করে নিয়েছেন যে – তারা আর কখনো তাদের আগের রূপে ফিরে যেতে পারবে না।
একই জিনিস আমাদের সাথেও ঘটবে – আমরাও একসময় লাবণ্য হারাবো। শুধু পার্থক্যটা হবে যে, আমাদের বর্তমান সৌন্দর্য হাই ডেফিনিশন সেলফিগুলোতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কিন্তু একই সাথে অন্য একটি সমস্যা তৈরী হচ্ছে – আমরা বর্তমানে যেভাবে পোশাক-আশাক পরি, এই ছবিগুলোতে তার প্রমান রেখে যাচ্ছি – যা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আরো অনুপযুক্ত উপায়ে পোশাক পরার জন্য একটি অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। তারা সাধারণভাবেই বলবে – “আম্মু, সেই পুরোনো আমলেই তুমি এই রকম পোশাক পরতে, আর এখনতো সময় আরো এগিয়ে গিয়েছে – আর আমাদেরকে সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে এগিয়ে চলতে হবে”। এইভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।
চিরস্থায়ী সৌন্দর্য এবং অত্যাধুনিক সমাজ ব্যবস্থার সমস্যা
আপনার কি মনে হয় না, যে এটি আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ, যে আমাদের সৌন্দর্য দিন দিন কমে যায়। এটি কমে গিয়ে পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকার সময় যে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে কথা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়। কিছু বোনদের সময়ের সাথে সাথে কিছুটা ওজন বেড়ে গিয়েছে তাই তারা অনেক চিন্তিত – শুধু এক মুহূর্তের জন্য চিন্তা করে দেখুন, যদি আপনাদের নিজেদের শরীরের আকৃতি আগের দিনের মতো হতো, তাহলে তা লুকিয়ে রাখা আপনাদের জন্য কি আরো কঠিন হতো না?
কিছু সমাজে, রাস্তায় ছেলেরা স্টাইলিশ মেয়ে দেখলেই কমেন্ট পাস করে বা খারাপ চোখে তাকিয়ে থাকে। এই সব জায়গার মেয়েদের অভিযোগ হলো যে, তাদের এসব অ-সভ্য ছেলেদের সামনে দিয়ে হেটে যেতে অসস্থি লাগে। এই ছেলেরা তাদেরকে একটি মাংসের টুকরা হিসেবে গণ্য করে যা চিন্তা করতেই এই মেয়েদের মনে ঘৃণা আসে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন – এই ব্যাপারটিতেও একটি আশীর্বাদ লুকিয়ে আছে! এই ব্যাপারটি আপনি শুধুমাত্র তখনি উপলব্ধি করতে পারবেন, যখন আপনি বিশ্বের অন্যান্য দেশে গিয়ে দেখবেন যে সেখানে (বেশিরভাগ পাশ্চাত্য সভ্যতায়) আসলে কি ঘটছে। যেখানে মেয়েদের এধরণের কোনো অভিযোগ নেই, সেইখানে মানুষদেরকে সবচাইতে ছোট মিনি-স্কার্ট এবং অশ্লীল প্রকৃতির জামাকাপড় পরে রাস্তা-ঘাটে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে দেখা যায় কারণ এটি তাদের অঞ্চলের সংস্কৃতির মধ্যে স্থান করে নেয়।
নৈতিকতা যুগের ভিত্তিতে পরিবর্তন হয় না
আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, নৈতিকতার মানদণ্ডে আসলে কোনো আধুনিক বা প্রাচীন যুগ হয় না। নৈতিকতা, সেই প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত একই অবস্থান বজায় রেখেছে – এটি প্রজন্মের সাথে সাথে বদলে যায় না। খন একজন ব্যক্তি তার বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছিয়ে, তার তরুণ বয়সে করে আসা নৈতিক ভুল কাজগুলোর কথা চিন্তা করে, তখন সে যুগ বা সময়কাল নির্বিশেষে, একইভাবে নিজেদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে। যা পুরানো দিনে অনৈতিক ছিল, তা এখনো অনৌতিক এবং ভবিষ্যতকালেও অনৌতিকই থাকবে – এটি চিরন্তন সত্য।
আমরা মনে করি যে, নৈতিকতার মান আমাদের সংস্কৃতি দ্বারা বিচার করা হয় – যা আসলে সত্য নয়। সর্বশ্রেষ্ট মানদণ্ড আসলে আমাদের প্রতিপালক কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা নির্ধারণ করে রেখেছেন। এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য, আমাদেরকে এগুলো জানতে হবে। তাদেরকে আমাদের সন্তুষ্টজনক বেখ্যা দিতে হবে – কেন তাদের অন্ধভাবে সংস্কৃতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা উচিত নয় বরং আমাদের সৃষ্টিকর্তার নির্ধারিত বিধি-বিধান মোতাবেক আত্নসমর্পন করা উচিত – যিনি আমাদেরকে সবচাইতে ভালোবাসেন এবং আমাদেরকে অনৈতিক শারীরিক, মানসিক ও আত্নিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে চান।
অশ্লীলতা কখনো আমাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হতে পারে না। আমাদের সৃষ্টিকর্তা সবসময় আমাদের মর্যাদা ও আত্ন-সম্মান বৃদ্ধি করতে চান – যেন আমাদের চরিত্র ও কার্যকলাপের ভিত্তিতে আমাদেরকে মূল্যায়ন করা হয় – আমাদের অশ্লীলতার মাত্রার উপর নয়। মাঝে মাঝে আমরা সাংস্কৃতিক প্রচলন অনুসরণ করতে গিয়ে আমাদের পোশাক-আশাকে নিজেদের এবং প্রিয়জনদের কাছে আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলি।
কুরআন থেকে আক্ষরিক ব্যাখ্যা
আমাদের সবার অন্তত জানা উচিত যে আল্লাহ (সুবহানু-ওয়া-তা’লা) আমাদেরকে কুরআনে এই ব্যাপারে কি বলেছেন এবং এই বার্তাগুলো অন্তত আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌছিয়ে দিয়ে, তারপর তাদের নিজেদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
হিজাব সংক্রান্ত আয়াতগুলো হলো:
মুমিনদেরকে {ছেলেদেরকে} বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা আন-নূর; আয়াত ৩০-৩১}
হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। {সূরা আল-আহযাব; আয়াত ৫৯}
হিজাব মানে কি?
হিজাব শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো বিপরীত লিঙ্গ থেকে প্রতিরক্ষা বা পর্দা, যা পুরুষ এবং মহিলাদের উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। আমরা অনেকেই হিজাব শব্দের অর্থ মনে করি মহিলারা যেই কাপড় দিয়ে তাদের মাথা ও মুখ ঢেকে রাখে, সেই কাপড়টি – এটি আসলে ঠিক নয়।
হিজাব কুরআনে দুইটি ধাপে বুঝানো হয়েছে:
প্রথমত, এটি বিস্তারিতভাবে সূরা আন-নূর-এ বর্ণিত হয়েছে। হিজাব সংক্রান্ত প্রথম আয়াতটি থেকে সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে, হিজাব আসলে প্রথমে পুরুষদের জন্য এবং এর পর নারী জাতির জন্য প্রযোজ্য।
দ্বিতীয়ত, সূরা আল আহযাব-এ, জিলবাব সংক্রান্ত নিয়মাবলী উল্লেখিত হয়েছে।
মুসলিম পুরুষদের জন্য হিজাব:
দৃষ্টি নত রাখুন
প্রথম আয়েতেই, মুমিন পুরুষদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা তাদের দৃষ্টি নত রাখে। প্রথমত তারা মাহারাম ব্যতীত অন্য কোনো নারীর দিকে তাকাবে না, যদি ভুলক্রমে তাদের নজর সেরকম কোনো নারীর উপর পড়ে যায়, তাহলে তাদেরকে দ্রুত দৃষ্টি নিচের দিকে করে নিতে হবে এবং পুনরায় সেই নারীটির দিকে আর তাকানো যাবে না। এটি তাদের যৌন আকাঙ্খা প্রতিরোধ করবে। এই ব্যাপারটি “চোখের হিজাব” নামে পরিচিত। মাহারাম হলো সেই ব্যক্তি যার সাথে (অতীত বা ভবিষ্যতে) কখনও বিয়ে জায়েজ হতে পারে না।
যৌনাঙ্গের হেফাযত করুন
একই আয়াতে মুমিন পুরুষদেরকে আরো আদেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে এবং অশ্লীল সকল কর্মকান্ড থেকে নিজেকে রক্ষা করে।
মুসলিম মহিলাদের জন্য হিজাব:
দৃষ্টি নত রাখুন ও যৌনাঙ্গের হেফাযত করুন
তারপর পরবর্তী আয়াতে, আল্লাহ (সুবহানু-ওয়া-তা’লা) নবী(সাঃ)-কে আদেশ দিয়েছেন যেন সে মুমিন নারীদেরকে বলে দেয় যে, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে। নারীদের জন্যেও একইভাবে পর-পুরুষের দিকে তাকানোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে যেন তারাও তাদের যৌন আকাঙ্খা প্রতিরোধ করতে পারে। এর পর তাদেরকেও তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করতে বলা হয়েছে। অবশেষে, মাহারাম ব্যতীত পুরুষদের সামনে কিভাবে খুমুর পরতে হবে সেই বিষয়টির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মাহারাম অর্থ তারা যাদের সাথে (অতীত বা ভবিষ্যতে) কোনো সময়েই বিবাহের অনুমুতি থাকে না।
খিমার পরিধান করুন
খুমুর হলো খিমার শব্দটির বহুবচন। সংজ্ঞানুসারে, খিমার হলো এক টুকরো কাপড় যা দিয়ে মাথা ঢাকা হয়। আল্লাহ (সুবহানু-ওয়া-তা’লা) কেবল এই মাথার কাপড়ের একটি অংশ তাদের বুক/বক্ষের উপর স্থাপন করতে হুকুম করেছেন। কুরআনের ভাষ্যকারদের মতে, প্রাচীন ইসলামী যুগে মদিনাবাসি মহিলারা তাদের মাথার কাপড় পিছনে ফেলে রাখতো। এই আয়াতটি দ্বারা আল্লাহ (সুবহানু-ওয়া-তা’লা) তাদের খিমার-কে সামনে বুকের উপর ফেলে রাখতে আদেশ দিয়েছেন।
পা দিয়ে মাটিতে জোরে শব্দ করা থেকে বিরত থাকুন
মুমিন নারীদেরকে আরো বলা হয়েছে যেন তারা তাদের পা দিয়ে মাটিতে জোরে জোরে শব্দ না করে বা অনুরূপ কিছু না করে, যাতে তাদের নিজেদের উপস্থিতি প্রকাশ পায়। প্রাচীন আরবে সেই সময়ে নারীরা নূপুর পরতো এবং তা দিয়ে শব্দ করে বিপরীত লিঙ্গের মনোযোগ আকর্ষন করতো – এই আয়াত দিয়ে এই ব্যাপারটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যদিও নূপুরের প্রচলন এখন অনেকটা কমে এসেছে তবে অনেক ক্ষেত্রে আজকাল রাস্তায় বা অফিস-আদালতে পেন্সিল হিল বা শক্ত হিল পরা নারীদের পায়ের শব্দে ছেলেরা যে আকর্ষিত হয় না তা বলা সম্ভবত ভুল হবে।
মহিলাদের হিজাব সংক্রান্ত বাকি নির্দেশাবলী কুরআনের অন্য একটি অংশে – সূরা আল-আহযাব-এ উল্লেখিত আছে।
জিলবাব পরিধান করুন
জালাবিব হলো জিলবাব শব্দটির বহুবচন। জিলবাব মানে কাপড়ের উপরকার আরেকটি কাপড় যেটি দীর্ঘে লম্বা হয়। কিছু স্কলারদের মতে, এটির মধ্যে তাদের মুখ ঢেকে রাখার কাপড়ও অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু অধিকাংশ স্কলারদের সাধারণ মতামত হলো যে, এটি একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য আলগা আলখাল্লা, কোট/ওভারকোট বা অনুরূপ কোনো ধরনের পোশাক যা শরীরের আকৃতি লুকিয়ে রাখতে পারে।
মহিলাদের জন্য ইসলামিক পোষাক
সহজ অর্থে মহিলাদের জন্য ইসলামিক পোষাক পরিধানের রীতি-নীতি হলো:
- স্বাভাবিকভাবে একটি স্কার্ফ পরা যা মাথা থেকে নেমে বুক বরাবর ঢেকে রাখবে; এবং
- এর সাথে, সাধারণ পোশাকের উপরে যেকোনো রকমের আলগা, ঢিলাঢালা ও লম্বা একটি পোশাক পরা।
সুতরাং, কেউ যদি মাথার উপর একটি স্কার্ফ পরে তার সাথে টাইট জিন্স ও শর্ট টি-শার্ট পরে তাহলে হয়তো তার উপরোক্ত শর্তগুলো পূরণ করা হবে না। কিন্তু আমাদের সেই মেয়ে বা মহিলাটিকে কখনোই খারাপ চোখে দেখা উচিত হবে না, বরং তাকে এই মর্মে সম্মান করা উচিত যে, তার পোশাক-আশাক কিছুটা ইঙ্গিত করে যে মুসলিম হিসেবে গর্বিত। হয়তো সে মনের দিক থেকে অনেক ভালো এবং পর্যায়ক্রমে নিজেকে আরো শুধরে নিবে – ইনশাআল্লাহ।
একটি আশ্চর্যকর বিষয়
হিজাব সম্পর্কে আয়াতগুলো কুরআনের সম্পূর্ণরূপে আলাদা দুইটি সূরা(সূরা আন-নূর ও আল আহযাব) তে উল্লেখিত হয়েছে। বিস্ময়করভাবে, এই আয়াতগুলো ক্ষমা সূচক কিছু শব্দদিয়ে শেষ হয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে আল্লাহ(সুবহানু-ওয়া-তা’লার) রহমতের দরজা আমাদের জন্য সবসময় খোলা থাকে, যদি আমরা এই বিষয়ে বুঝে বা না বুঝে সীমা লঙ্ঘন করে ফেলি।
হিজাব কাদের জন্য প্রযোজ্য?
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, উপরের আয়াতগুলোতে হিজাব সম্পর্কে মু’মিনদেরকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে – তাই এটা আসলে মু’মিনদের জন্য প্রযোজ্য। এইজন্য, আমাদেরকে মুসলিম ও মু’মিন এর মধ্যে পার্থক্যটি বুঝতে হবে। একজন মুসলিম হলো সেই বেক্তি, যিনি খোদা তা’লার ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করেন – সুতরাং একজন জন্মগতভাবে মুসলিম হতে পারেন। কিন্তু একজন মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি, যার হৃদয়ে ঈমান আছে – তাই তারা বিশ্বাসের দিক থেকে উচ্চতর স্থরে অবস্থিত।
উপসংহার
দয়া করে মনে রাখবেন যে, উপরে উল্লিখিত আয়াতগুলো মাদানী আয়াত যা মদিনায় নাযিলকৃত। মদিনা বাসীরা যখন ইসলামের সত্যের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হয়ে দৃঢ় ঈমান এনেছে এবং মুসলিম হিসেবে আলাহের প্রতিটি আদেশ ও নিষেধাজ্ঞায় কোনো রকম যুক্তিতর্ক ছাড়াই সম্পূর্ণ ভাবে আত্মসমর্পণ করা শুরু করেছিল তখন এই হিজাবের ব্যাপারগুলো তাদের উপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
সুতরাং আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, আমাদের এই ব্যাপারগুলো এমন কারো উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত হবে না যে এখনও তার জীবনের প্রতিটি কার্যকলাপ ইসলাম দ্বারা পরিচালিত করতে প্রস্তুত হয়ে উঠেনি।
প্রথমত, এই ব্যক্তিদের সামনে এই ধর্ম সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞান, যথাসম্ভব সুন্দর উপায়ে উপস্থাপন করতে হবে। যখন তাদের মধ্যে ইমান বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করবে – এসব হিজাব স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাদের মধ্যে দেখা দিবে। কারণ হিজাব, কারো উপর সাংস্কৃতিক বা নৈতিক ভাবে চাপিয়ে দেওয়ার জিনিস নয়, বরং এটি আসলে মনের মাঝে উপস্থিত ঈমানের একটি বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই না।
পুরো জিনিসটি এভাবে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে:
- প্রথমত, নিজেকে মুসলিম (আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্নসমর্পনকারী) হিসাবে বিবেচনা করুন, তারপর নিজেকে মুমিন (ধর্মের ওপর দৃঢ় বিশ্বাসী / ঈমানদার) হিসেবে বিবেচনা করুন, তারপর হিজাবের ব্যাপারে চিন্তা করা শুরু করতে পারেন, কারণ আদেশগুলি আসলে মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ক্ষেত্রে নাজিল করা হয়েছে। যদি নিজের ছেলে/মেয়ে বা অন্য কাউকে হিজাব নিয়ে বলতে চান তাহলে আগে তাকে মু’মিন হওয়ার সময়টি দেওয়া উচিত।
- হিজাব মানে বিপরীত লিঙ্গ থেকে সংরক্ষণ বা পর্দা যা কিনা সর্বপ্রথম পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (মহিলাদের ব্যাপার পরে আসে)।
- মুসলিম পুরুষ যেন পর-নারীদের সামনে তাদের দৃষ্টি নত রাখে, এটি চোখের হিজাব হিসাবে পরিচিত হয়।
- যদি ঘটনাক্রমে কোনো মাহারাম ব্যতীত অন্য কোনো নারীর উপর তাদের নজর পড়ে যায়, তাহলে তারা যেন অবিলম্বে তাদের দৃষ্টি নত করে নেয় এবং পুনরায় আবার সেই মেয়ে/মহিলার দিকে আবার না তাকায়।
- তাদেরকে সবরকম অশালীন কাজ থেকে বেঁচে থেকে তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করতে হবে।
- এরপর মুসলিম নারীদেরকেও পর-পুরুষ থেকে তাদের দৃষ্টি নত রাখার এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
- তাদেরকে একটি খিমার বা মাথার কাপড় পরতে আদেশ করা হয়েছে, যা তাদের মাথা থেকে নেমে তাদের বুক বরাবর ঢেকে রাখবে।
- তাদেরকে পা দিয়ে মাটিতে জোরে জোরে শব্দ করে বিপরীত লিঙ্গের আকর্ষণ কাড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
- তাদেরকে জিলবাব পরতে বলা হয়েছে – যা হলো সাধারণ পোশাকের উপরে যেকোনো রকমের আলগা, ঢিলাঢালা ও লম্বা একটি পোশাক, যেমন আলখেল্লা, ওভারকোট বা বোরখা ইত্যাদি, যা তাদের দেহের আকৃতির লুকাতে পারে।
- হিজাব সংক্রান্ত আয়াতগুলো যদিও কুরআনের পৃথক জায়গায় উল্লেখিত হয়েছে, কিন্তু ঐ আয়াতগুলোর শেষে আল্লাহের ক্ষমা সংক্রান্ত কিছু শব্দ উল্লেখিত হয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে যদি আমরা বুঝে বা না বুঝে হিজাব সংক্রান্ত এসব নিয়মগুলোর সীমা লঙ্ঘন করি তাহলেও আল্লাহের রহমতের দরজা আমাদের জন্য সবসময় খোলা থাকবে।
এই নিয়মগুলো দিয়ে মহিলাদের:
- অধ:পতন বা জুলুম করা হয় না
- তাদেরকে সময়ের অনুপযোগী বানানো হয় না; এবং
- তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয় না।
কিন্তু এগুলো আসলে তাদেরকে:
- মুসলিম নারী হিসেবে চিনতে সাহায্য করে;
- অকারণে বিরক্ত, হয়রানি বা নির্যাতিত হওয়া থেকে রক্ষা করে;
- তাদের মর্যাদা ও আত্মসম্মান বজায় রাখে; এবং
- মানুষের চোখে তাদের প্রকৃত চরিত্র ও আচার-আচরণ দিয়ে মূল্যায়ন করায় – তাদের সৌন্দর্য বা অশ্লীলতা দিয়ে নয়।