ভূমিকা
আমাদের অস্তিত্বের পিছে কারণ
আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি, যে আমরা এই কথাগুলো চিন্তাই করার সময় পাইনা যে:
- আমরা এই পৃথিবীতে কিভাবে এলাম?
- আমাদের অস্তিত্বের পিছে আসল কারণটি কি?
একটু সময় নিয়ে যদি চিন্তা করে দেখি:
- বেশির ভাগ সময় আমাদের মনে এমন ধারণা জন্মায় যে, হয়তো আমরা এখানে কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই, অপ্রত্যাশিতভাবে সৃষ্টি হয়ে গিয়েছি। সুতরাং, জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে যায় – আমরা কিভাবে এই জীবনের শীর্ষ অবস্থানটিতে পৌঁছুতে পারবো।
- আবার কারো মনে এমন চিন্তাও আসতে পারে যে, আমাদেরকে যেহেতু জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছে – এই পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব, একটি শাস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিন্তু, আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলেই আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবো যে, আমাদের অস্তিত্বের পিছে একমাত্র সঠিক ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা হলো:
- আমরা অপ্রত্যাশিত ভাবে – একা একাই – এতো পরিপূর্ণতার সাথে সৃষ্টি হয়ে যাইনি; এবং
- আমাদের এই পৃথিবীতে অবস্থান করার পিছে অবশ্যই কোনো উদ্দেশ্য আছে – এই উদ্দেশ্যটি হলো আমাদেরকে পরীক্ষা করা।
কুরআনুল করিম আমাদের জানায়: আমাদেরকে কেন পরীক্ষা করা হয়? কিভাবে পরীক্ষা করা হয়? কিভাবে পরীক্ষায় পাশ করতে হবে? আর কিভাবে মানুষ পরীক্ষাটিতে ফেল করে? — একটি সম্পূর্ণ গাইডেন্স/পথনির্দেশনা — আমরা যদি এর পরও ব্যর্থ হই তাহলে এর দায়িত্ব আমাদের ঘাড়েই এসে পরে।
মুসলমান হিসাবে আমাদের:
ইসলামের ৫টি স্তম্ভ | ইমানের ৬টি স্তম্ভ | |
1 | কলেমায়ে শাহাদাত ঘোষণা – আল্লাহ (সুভহানা:) ও তাঁর রসূলের (সাঃ) উপর বিশ্বাস করা | আল্লাহ (সুভহানা:)এর উপর বিশ্বাস |
2 | ছালাত – নামায আদায় করা | তাঁর ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস |
3 | যাকাত – আবশ্যিক আর্থিক দান | তাঁর আসমানী কিতাবগুলোর উপর বিশ্বাস |
4 | ছিয়াম সাধনা – রোজা রাখা | তাঁর নবী-রসূলগণের এর উপর বিশ্বাস |
5 | হজ – হজ্ব যাত্রা | পরকালের উপর বিশ্বাস |
6 | কদর – পুণঃনির্ধারিত নিয়তির উপর বিশ্বাস |
ইসলাম ও ইমানের স্তম্ভগুলোর সূত্র জানতে এইখানে ক্লিক করুন:
আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) পুণঃনির্ধারিত তকদিরের ধারণাটি, আমাদেরকে কিছু কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন করে – যদি আমাদের ভাগ্যে সবকিছু লেখাই আছে:
- তাহলে আমাদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোতে স্বাধীনতা কোথায়?
- আমাদের পাপের জন্য আমাদেরকে কেন দোষারুপ করা হবে?
- আমাদের ভালো খারাপের পরীক্ষাটা কোথায়?
আমাদের অস্তিত্বের পিছে যৌক্তিক ব্যাখ্যা
এই পৃথিবী এমনভাবে তৈরী করা হয়েছে এবং এটি আমাদেরকে এমন ভাবে প্রতিরক্ষা করে চলেছে যে, যৌক্তিগতভাবে একথা বলা অসম্ভব যে এই সব কিছুই অপ্রত্যাশিতভাবে শূন্য থেকে এতটা নিখুঁতভাবে এসেছে। উপরন্তু, আমরা যদি কুরআন এর আলোকে বিবেচনা করি (যার কোনো আয়াত ভুল প্রমান করা সম্ভব নয়), এই পৃথিবীতে আমাদের জীবনের অস্তিত্বের সবচাইতে যৌক্তিক উদ্দেশ্য হলো আমাদেরকে পরীক্ষা করা (আর মুসলিম হিসেবে আমরা নিশ্চিত যে এটাই সত্য)।
আমাদের কেন পরীক্ষা করা হয়?
এই পৃথিবী আমাদের জন্য একটি পরীক্ষার ময়দান, যেখানে আমাদের সিদ্ধান্ত এবং কার্যকলাপের মাধ্যমে আমাদেরকে যাচাই করা হয়। আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) পুণঃনির্ধারিত তকদির আমাদের পরিস্থিতি নির্ধারণ করে আর এই পরিস্থিতির ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্যই আমাদেরকে দায়বদ্ধ করা হবে।
মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। {সূরা আল আঙ্কাবুত: আয়াত ২-৩}
আমি[আল্লাহ] অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের সংগ্রামকারীদের (জেহাদকারীদের) এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থান সমূহ যাচাই করি। {সূরা মুহাম্মাদ: আয়াত ৩১}
মানুষদেরকে আর্থিক ও স্বাস্থগত দিক থেকে ধনী বা গরীব বানানো হয়েছে, যা আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে পরিকল্পিত। কিন্তু আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা), আমাদের মর্যাদার স্থান, শুধুমাত্র আমাদের ভালো-খারাপ কার্যকলাপের দ্বারা বিচার করেন – আমাদের সম্পদ বা ক্ষমতা দিয়ে নয়।
দেখুন, আমি তাদের একদলকে অপরের উপর কিভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করলাম। পরকাল তো নিশ্চয়ই মর্তবায় শ্রেষ্ঠ এবং ফযীলতে শ্রেষ্ঠতম। {সূরা আল-ইসরা: আয়াত ২১}
আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে। {সূরা আল-কাহ্ফ: আয়াত ৭}
কিভাবে আমাদেরকে পরীক্ষা করা হয়?
আমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ বা ফলনে/উৎপাদনে ক্ষতি, কাছের মানুষের মৃত্যু ইত্যাদি দিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। {সূরা আল বাকারাহ: আয়াত ১৫৫}
কিন্তু, শুধুমাত্র কষ্টই আমাদেরকে পরীক্ষা করার একমাত্র পন্থা নয়, আমাদের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য এবং সুযোগ-সুবিধা দিয়েও আমাদেরকে পরীক্ষা করা হয়। আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদেরকে অবগত করেছেন, যেন আমরা অন্য মানুষদের পার্থিব জীবনের (সম্পদ, আরাম/আয়েশ, ইত্যাদি) দিয়ে বিস্মিত / ঈর্ষান্বিত না হই; এসব তাদের জন্য একটি পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই না। অনেক ভালো একটি জীবন (জান্নাতের জীবন) আসলে আমাদের সবার জন্যই অপেক্ষা করছে, যদি আমরা জীবনের এই পরীক্ষায় পাস করতে সক্ষম হতে পারি।
আমি এদের বিভিন্ন প্রকার লোককে পরীক্ষা করার জন্যে পার্থিবজীবনের সৌন্দর্য স্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, আপনি সেই সব বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। আপনার পালনকর্তার দেয়া রিযিক উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। {সূরা ত্বোয়া-হা: আয়াত ১৩১}
তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়। … পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়। {সূরা আল-হাদীদ: আয়াত ২০}
পুণঃনির্ধারিত নিয়তির ব্যাখ্যা
মানুষের একটি সাধারণ সমীকরণ:-
আমাদের সকল ভাল কাজ = আমার ক্রেডিট — আমি করেছি;
আমাদের সকল মন্দ কাজ = আল্লাহর(সুবহানাহু:) কদর — আমাকে করানো হয়েছে ।
আসুন আরেকটু বিস্তারিতভাবে ব্যাপারটি বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করি।
- আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সর্ব জ্ঞানের অধিকারী – দৃশ্য ও অদৃশ্যের – অতীত, বর্তমান ও ভবিষতের জ্ঞান। স্বয়ং ‘সময়’ নিজেই আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) একটি সৃষ্টি।
- এই ক্ষমতার করণে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) জানেন আমরা ভবিষ্যতে কি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।
- কিন্তু, সেই সিদ্ধান্তগুলো সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিজেদের নেওয়া; সুতরাং আমাদের নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য একমাত্র আমরাই দায়ী। আমাদেরকে এসব সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়নি। ব্যাপারটা এমন নয়, যে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের ভাগ্যে জোর করে লিখে রেখেছে, তাই আমরা এই সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছি। এমনকি আমাদের উপর শয়তানেরও কোন নিয়ন্ত্রণ নাই, তারা শুধু ফিস্ ফিস্ করে আমাদের মনে কুমন্ত্রণা দিতে পারে, এর থেকে বেশী কিছুই নয়।
…শয়তান বলবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছি, অতঃপর তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর তো আমার কোন ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি, অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ। অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। … {সূরা ইব্রাহীম: আয়াত ২২}
- আরবি শব্দ কদর-এর প্রকৃত আক্ষরিক অর্থ হলো “পরিমিত”। যা এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, আমাদের ভবিষ্যত সিদ্ধান্তগুলো ইতিমধ্যে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) পরিমিত করে রেখেছে এবং তিনি সেগুলোর ব্যাপারে পুরোপুরি অবগত, কিন্তু এই সিদ্ধান্তগুলো নিতে আমাদেরকে বাধ্য করা হয় না।
কুরআন শরীফ থেকে কিছু উদাহরণ:
কুরআন শরীফের এই আয়াতগুলো থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের উপর আমাদের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে:
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। {সূরা আল বাকারাহ: আয়াত ২৮৬}
এই দিবস সত্য। অতঃপর যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার কাছে ঠিকানা তৈরী করুক। {সূরা আন-নাবা: আয়াত ৩৯}
এখন মুশরেকরা বলবেঃ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ দাদারা এবং না আমরা কোন বস্তুকে হারাম করতাম। এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুনঃ তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে যা আমাদেরকে দেখাতে পার। তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল। {সূরা আল আনা’ম : আয়াত ১৪৮}
সহীহ আল-আলবানী; অধ্যায় ৩৮, হাদিস নং ১৬ তে আলী ইবনু আবু তালিব বলেছেন ,
একবার নবী (সাঃ) বললেন, সবাই তাদের নিজেদের আসন হয় আগুনে[জাহান্নামে] অথবা বাগানে[জান্নাতে] লিখে রেখেছে।
কিছু লোক জিজ্ঞাসা করলো, “তাহলে কি আমরা ভাগ্যে যা লেখা আছে তার উপর নির্ভর করে আমাদের কর্ম [ভাল কাজ] পরিত্যাগ করবো?”
নবী (সাঃ) তাদেরকে ভালো কাজ করতে বললেন, কারণ সবাইকে সেই পথেই পরিচালনা করতে সাহায্য করা হবে যে পথ সে বেছে নিবে তা ভাল হোক বা মন্দ।
সাধারণ জ্ঞান-বোধ থেকে কিছু উদাহরণ
ধরুন একজন ব্যক্তি আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কদরে বিশ্বাস রেখে মনে করলো যে তার খাদ্য তার কাছে নিজে নিজেই পৌঁছে যাবে, আর সে বাসায় বসে রইলো। সাধারণভাবেই সে ক্ষুধায় মারা যাবে, কারণ তার খাবার তার কাছে একা একাই চলে আসবে না। প্রকৃতপক্ষে, এই ঘটনাটিই আসলে তার ভাগ্যে লেখা ছিল, যে সে বাসায় বসে থেকে না খেয়ে মৃত্যু বরণ করবে।
একবার, এক ব্যক্তি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে এবং তাকে উমার ইবন আল-খাত্তাব(রাঃ)-এর কাছে ধরে নিয়ে আসা হয়, তিনি আইন মোতাবেক লোকটার হাত কেটে ফেলার আদেশ দিলেন। লোকটি বলল: “দাড়াও, হে বিশ্বাসীদের নেতা! আমি শুধু এই কারণেই চুরি করেছি যে, এটা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কদর ছিল। উমার(রাঃ) উত্তরে বললো: “এবং আমরা তোমার হাত কেটে নিচ্ছি কারণ এটিও আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কদর ছিল”।
পুণঃনির্ধারিত নিয়তি বিশ্বাসে সুবিধা
এসবকিছু আলোচনা করার পর একটি সাধারণ প্রশ্ন উঠে: পুণঃনির্ধারিত নিয়তি বিশ্বাস করার সুবিধাটা কি? আমরা যদি নিজেদের সিদ্ধান্তের জন্য নিজেরাই দায়ী থাকি তাহলে পুণঃনির্ধারিত নিয়তির ব্যাপারে এতো গুরুত্ব আরোপ করে কি লাভ আর এটি আমাদের ইমানের ৬ষ্ট স্তম্ভই বা কেন?
একটি সরল হাদীস দিয়ে শুরু করা যাক, সুহায়ব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূল (সাঃ) বলেছেন:
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মু’মিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর-গুজার করে আর অস্বচ্ছলতা বা দু:খ-মুসীবাতে আক্রান্ত হলে সবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর। {সহীহ মুসলিম; হাদিস ৭৩৯০}।
এখন কল্পনা করুন, এই ধৈর্যের উৎসটা কি। উৎসটা হলো আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কদর-এ বিশ্বাস করা। প্রতিটি বিপদ আপদ আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) পুণঃনির্ধারণ করে রেখেছে, যিনি পরম দয়ালু, সুদক্ষ ন্যায়বিচারক, সকল জ্ঞানের অধিকারী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী। সুতরাং, একজন বিশ্বাসী আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) উপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করে, কারণ সে জানে যে, ঐ সব বিপদের পিছে ভালো কিছু অবস্যই তার জন্য প্রতীক্ষা করছে। হয় কোনো ভালো কিছু ঘটবে না হয় আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সেইসব বিপদে ধৈর্য ধারণ করার দরুন আমাদের গুনাহ মাফ করবেন।
জান্নাত বা জাহান্নামে পৌঁছানোর পিছে যৌক্তিকতা
প্রথিবীতে সকল প্রকার সুবিধার জন্য প্রতিদানের প্রয়োজন হয়
এই প্রথিবীতে আমাদেরকে প্রায় সব রকম সুবিধা উপভোগ করার জন্যই আর্থিক বা সেবামূলক প্রতিদান দেয়ার প্রয়োজন হয়। সুতরাং, আমাদেরকে টাকা উপার্জন করতে হয়:
- বাসা-বাড়ি কিনা বা ভাড়া পরিশোধ করার জন্য;
- আমাদের গাড়ির জ্বালানী কেনা / পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ভাড়া দেয়ার জন্য।
- ইউটিলিটি বিল যেমন পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি -এর বিল পরিশোধ করার জন্য।
- বাজার বা আনুসঙ্গিক খরচ চালানোর জন্য।
আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তি বা ভোগ-বিলাস বাদে, যেকোনো পার্থিব সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করার জন্য আমাদের কঠোর পরিশ্রম করে এসবের মূল্য পরিশোধ করতে হয়। তবে, এই পরিশ্রমের মাত্রা বেক্তি সাপেক্ষে কম-বেশী হয়ে থাকে, কারণ কিছু মানুষ খুব সহজেই অনেক টাকা উপার্জন করে, আর কিছু মানুষের কয়েকটি টাকা উপার্জন করতে অনেক খাটুনি করতে হয়। কিন্তু, এই সুবিধাগুলির মধ্যে কোনোটাই একেবারে বিনা মূল্যে, কোনো প্রতিদান ছাড়াই, আমাদের কাছে চলে আসে না।
জান্নাতের সুবিধাসমূহ উপভোগের যৌক্তিকতা
এখন, জান্নাতের কথা বিবেচনা করুন, সেখানে আপনি যাই চাবেন তাই পাবেন। এ ধরণের সুবিধাসমূহ যুক্তিগতভাবে সবার জন্য বিনামূল্যে উপভোগ্য হওয়ার কথা না। সেখানে আমাদেরকে থাকার জন্য ভাড়া দিতে হবে না, আলো দিয়ে দেখার জন্য ইলেকট্রিসিটি বিল দিতে হবে না, খাওয়ার জন্য টাকা দিতে হবে না, ইত্যাদি। আমাদেরকে ক্ষণস্থায়ী এই প্রথিবীতে পাঠানো হয়েছে আমাদের ঈমান যাচাই করার জন্য। এরকম সুযোগ সুবিধা আমাদের শুধুমাত্র তখনই প্রাপ্য হবে যখন শক্ত ঈমানে আমাদের কার্যকলাপ দিয়ে আমরা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) রহমত জয় করার চেষ্টা করবো। কারণ, জান্নাত শুধুমাত্র আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) রহমত দ্বারা অর্জন করা সম্ভব।
মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। {সূরা আল-আঙ্কাবুত: আয়াত ২-৩}
উল্লেখ্য যে, জান্নাত শুধু ভালো কাজ বা সওয়াব দিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। শুধুমাত্র আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) রহমত আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারে। আমরা শুধু বেশী বেশী ভালো কাজ করে নিজেদেরকে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) রহমত পাওয়ার যোগ্য হিসেবে প্রমান করার যথাসাধ্য চেষ্টাই করতে পারি। এই ব্যাপারটি আমাদের জন্য একটি বড়ো অনুপ্রেরণার বিষয়, কারণ আমাদেরকে আর-রহমানের রহমত পাওয়ার জন্য একেবারে নির্ভুল বা ত্রূটিহীন হওয়ার প্রয়োজন নাই। আয়শা (রাঃ) বলেছেন তার স্বামী (সাঃ) বলেছেন:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, এর কাছাকাছি পথে থেকো এবং সুসংবাদ গ্রহন কর, কারো ‘আমালই তাকে জান্নাতে দাখিল করাতে পারবে না। সহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনিও কি নন? তিনি বললেন, আমিও নই। তবে হ্যাঁ, যদি আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তাঁর রহ্মাত দ্বারা ঢেকে নেন। তোমরা জেনে রাখো, নিয়মিত ‘আমালই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশী পছন্দের ‘আমাল, যদিও তা পরিমাণে কম হয়। {সহী মুসলিম: হাদিস নং: ৭০১৫}
সুতরাং, এটা বলা উচিত না যে “আমি জানি আমি ত্রূটিহীন হতে পারবো না। এমনিতেও আমি দোজখে যাচ্ছি”। না, একথা ঠিক নয়, আপনি যদি আপনার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন এবং একটা সাধারণ মধ্যম প্রন্থা জীবন অতিবাহিত করেন, তাহলে আপনার দোজখে যাওয়ার কথাই না।
আমাদের পরিণতির যৌক্তিকতা
আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) মানব জাতীর উপর সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গতরূপে তাদের কাছে নবী-রসূল পাঠিয়ে এবং বিভিন্ন প্রকার সুস্পষ্ট নিদর্শন সহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছে আর আমাদেরও দায়িত্ব বর্তায় পথনির্দেশনা খোঁজার চেষ্টা করার। আমাদের এসব করণীয় ও বর্জনীয় ব্যাপারগুলো জানতে হবে, যা কিনা আমাদের জন্যই যথাক্রমে উপকারী এবং ক্ষকিতর।
আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে। {সূরা আন-নাহল: আয়াত ৩৬}
আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একেকজন রসূল রয়েছে। যখন তাদের কাছে তাদের রসূল ন্যায়দন্ডসহ উপস্থিত হল, তখন আর তাদের উপর জুলুম হয় না। {সূরা ইউনুস: আয়াত ৪৭}
আমাদের জন্য পথনির্দেশনা কুরআনুল কারীমে লিপিবদ্ধ করা আছে, যা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁর সর্বশেষ রসূল, মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর আমাদের জন্য রহমত হিসাবে নাজিল হয়েছে। এর সত্ত্বেও, যদি আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে বিপথে চলে বা অজ্ঞ থেকে শেষ পর্যন্ত জাহান্নামে গিয়ে পৌঁছাই – তাহলে এর জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী।
যদি সবকিছু পুনঃনির্ধারিত হয়েই আছে তাহলে শেষ দিবস পর্যন্ত অপেক্ষা কেন?
আমাদের পরিণতি যে ন্যায়সঙ্গত হয়েছে তা প্রমান করার জন্য বিশ্বের এই সিমুলেশনটি সম্পূর্ণ করা উচিত। আমরা এই জীবনে প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছি এবং আমাদের কার্যকলাপের একাধিক সাক্ষী রেখে যাচ্ছি যার মধ্যে আমাদের দুই কাঁধের ফেরেস্তাদের রেকর্ড অন্তর্ভুক্ত। বিচারের দিনে এগুলো আমাদের প্রকৃত অবস্থানের ন্যায্যতা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট হবে।
এই পৃথিবীতে, আমাদের বেশিরভাগ পরিস্থিতির উপরেই আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না, কিন্ত আমাদের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার উপর আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। কেয়ামতের দিনে আমাদেরকে শুধুমাত্র আমাদের পরিস্থিতি ভিত্তিক সিদ্ধান্তের জন্য জবাবদিহি করা হবে।
আদম আঃ, হাওয়া রাঃ ও ইবলীসের ঘটনাটি থেকে একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে:
- আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আদম আঃ তৈরি করলেন এবং ইবলীসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদম আঃ কে সেজদা করার জন্য (শুধুমাত্র সম্মান দেখানোর জন্য, উপাসনা করার জন্য নয়)
- ইবলীস (অহংকারের কারণে) সেজদা করতে অস্বীকার করেছিল এবং আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) অবাধ্যতা করেছিল
- ইবলীস (অভিশপ্ত) শয়তানে রুপান্তরিত হয়
- আদম আঃ এবং হাওয়া রাঃ কে জান্নাতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় কিন্তু সেখানে একটি গাছ থেকে তাদেরকে খেতে নিষেধ করা হয়
- শয়তান, একটি দীর্ঘ সময় ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়ে, অবশেষে তাদের দুইজনকেই গাছটি থেকে রাজি করতে সক্ষম হয়েছিল।
- তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় (পরীক্ষা করার জন্য এবং নিজেদেরকে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) রহমতের যোগ্য হিসেবে প্রমান করে আরো একবার জান্নাতে প্রবেশ করে সেখানে চিরকাল বসবাস করার জন্য)
- আদম আঃ অনুশোচনা করে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং এই পৃথিবীতে তার জীবন কাটিয়ে পুনরায় জান্নাতে ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছিল
- আমরা তার বংশসূত্রে এই পৃথিবীতে এসেছি এবং আমাদেরকেও এই পৃথিবীতে পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের পরিণতি নির্ধারণ করতে হবে
- আমরা এই পৃথিবীতে শাস্তি হিসেবে আসিনি বরং এই পৃথিবী আমাদের জন্য একটি পরীক্ষার ময়দান যেখানে আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে নবী-রসূল দ্বারা পথনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে – সুতরাং আমাদের সাথে কোনো রকম অন্যায় করা হয় নি।
দয়া করে দোষ দেওয়া বন্ধ করুন
উপরে উল্লেখিত গল্পতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখার আছে
যখন আদম আঃ গাছটি থেকে ফল খেয়েছিলো, তখন সে তার নিজের দোষ স্বীকার করেছিলেন, যদিও এই পুরো ব্যাপারটি পুনঃনির্ধারিত ছিল এবং ইবলীস তাদের দুইজনকে ধোঁকা দিয়ে প্রতারিত করেছিল:
তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। {সূরা আল-আ’রাফ: আয়াত ২৩}
অপরদিকে, ইবলীস নিজের দোষ স্বীকার না করে, উল্টা তার কার্যকলাপের জন্য আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)কে দায়ী করেছিল:
সে [শয়তান] বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। {সূরা আল-আ’রাফ: আয়াত ১৬}
সুতরাং, আমরা নিজেদের খারাপ কাজের জন্য এবং আমাদের পথভ্রষ্টতার জন্য আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)কে দোষারোপ না করে বরং আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে আমাদের কার্যকলাপের দায়িত্ব নেওয়া শিখতে হবে।
কিন্তু, ইতিমধ্যে করে ফেলা পাপগুলোর জন্য, সর্বপ্রথম আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে আমরা ভুল করেছি, তারপর এগুলো আবার পুনরাবৃত্তি না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, এবং অবশেষে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। মানব জাতির পিতা আদম আঃ থেকে এই শিক্ষাটি আমরা পেয়েছি যে ভুল করে ফেলার পরে আমাদের কি করা উচিত। আর এইভাবেই আমরা আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) রহমত অর্জন করতে পারবো কারণ একমাত্র এই রহমতই আমাদেরকে আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারবে – যার নাম জান্নাত।
Footenotes:
ইসলাম ও ইমানের স্তম্ভগুলোর সূত্রঃ
হাদীসের আলোকে: বিখ্যাত হাদীস জিবরীল এ বর্ণিত-
যখন আমাদের নবী(সাঃ)কে ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি(সাঃ) বলেছিলেন,
… “ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ (মা‘বুদ) নেই, এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল, সলাত কায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমাযানের সওম পালন করবে এবং যদি পথ অতিক্রম করার সামর্থ্য হয় তখন বাইতুল্লাহর হাজ্জ করবে।”
যখন আমাদের নবী(সাঃ)কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি(সাঃ) বলেছিলেন,
… “ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত নাবীগণ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদীর ও এর ভালো ও মন্দের প্রতিও ঈমান রাখবে।” … {সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১, হাদীস ১}
কুরআনের আলোকে ঈমানের স্তম্ভগুলো: সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। {সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৭৭}। ইমানের ষষ্ঠ স্তম্ভটি (কদর) অন্য জায়গায় বেখ্যা করা আছে সূরা তাগাবুন, আয়াত ১১, সূরা ক্বামার, আয়াত: ৪৯; এবং সূরা ফুরকান আয়াত: ২।